আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে একটি শর্ত আছে যে যাকাত আদায় যোগ্য সম্পদ ঋণ মুক্ত হতে হবে। যদি কোন ঋণ তার সমস্ত নেসাবকে গ্রাস করে নেয় তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয় না। এটি যাকাতের প্রসিদ্ধ একটি মাসয়ালা, তবে সব ঋণের ক্ষেত্রে এই মাসয়ালা প্রযোজ্য নয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ঋণের প্রকারভেদ জানতে হবে।
somadanmedia.com |
ঋণের প্রকারভেদ
ঋণ সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে এক, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য ঋণ। দুই, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঋণ, তথা ব্যবসা-বাণিজ্য কল কারখানার জন্য ঋণ,ভাড়া দেওয়ার জন্য কিংবা বিক্রি করার জন্য বাড়ি নির্মাণের ঋণ।
প্রথম প্রকারের ঋণ যাকাতের নেসাব থেকে বাদ দেওয়ার পর যদি নেসাব অবশিষ্ট থাকে তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে অন্যথায় ওয়াজিব হবে না।
দ্বিতীয় প্রকারের ঋণের কারণে অর্থাৎ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যে ঋণ নেওয়া হয় তার কারণে যাকাতের মধ্যে কোন কমতি করা যাবে না। যাকাত পুরাপুরিভাবে আদায় করতে হবে। ঐ ঋণ যাকাতের নেসাব থেকে বাদ দেওয়া যাবে না এবং যাকাতের মধ্যেও কোন কমতি করা যাবে না।
তবে যদি উন্নয়নমূলক ঋণ দীর্ঘমেয়াদি হয় যা কিস্তির ভিত্তিতে আদায় করা হয়। তাহলে এই বৎসর তথা চলতি বছরের কিস্তির যত টাকা তার ওপর আবশ্যক হবে এই টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব হবেনা। তা নেসাব থেকে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট নেসাবের যাকাত দিতে হবে।
সুতরাং আমরা যারা সব ধরনের ঋণকেই যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধক মনে করি চলুন একটু সচেতন হই এবং ঋণের প্রকারভেদ বোঝে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করি।
প্রমাণাদি
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، -[93]- 7087 - عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، يُخْبِرُنَا وَنَحْنُ مَعَ عَطَاءٍ، أَنَّ عُثْمَانَ كَانَ إِذَا خَرَجَ الْعَطَاءُ يَخْطُبُ فَيَقُولُ: «§مَنْ كَانَ عَلَيْهِ دَيْنٌ فَلْيَقْضِهِ ثُمَّ لِيُزَكَّ مَالَهُ» فَقَالَ لِي عَطَاءٌ عِنْدَ ذَلِكَ: «لَعَمْرِي مَا فِي مَالِ الرَّجُلِ، وَهَوَ عَلَيْهِ دَيْنٌ صَدَقَةٌ فِيهِ»، قَالَ عَطَاءٌ: «فَإِذَا زَكُّوا عَطَاءَ الرَّجُلِ بَعْدَ دَيْنِهِ، فَلَمْ يَظْلِمْ سَيِّدُ الْعَطَاءِ» قُلْتُ لَهُ: أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ عَلَيَّ دَيْنٌ، وَلِي مَالٌ، وَلِي مِنَ الرَّقِيقِ مَا يُقِلُّ عَلَيَّ مِنَ الدَّيْنِ أُزَكِّي عَنِّي؟ قَالَ: «نَعَمْ»
অর্থ: ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ওবায়দ ইবনে উমাইর কে বলতে শুনেছি, তিনি আমাদেরকে সংবাদ দেন এমতাবস্থায় যে আমরা আতার সাথে ছিলাম তখন উসমান ছিলেন। যখন আতা খুতবা দেওয়ার জন্য বের হলেন তিনি বললেন যার উপর ঋণ রয়েছে, সে যেন তা পরিশোধ করে এবং তারপরে তার অবশিষ্ট অর্থের যাকাত দেয়। ওই সময় আতা আমাকে বলল আমার জীবনের শপথ,একজন ব্যক্তির ঋণ যখন তার সম্পদে থাকে। তার উপর যাকাত থাকে। আতা বললেন: “তাহলে যদি তারা ঋণের পর দান করে যাকাত দেয়, তবে লোকটির প্রতি জুলুম করা হয়নি। আমি বললাম আপনি কি মনে করেন যদি আমার উপর ঋণ থাকে এবং আমার কিছু সম্পদ থাকে এবং আমার কিছু গোলাম থাকে যার মূল্য ঋণের থেকে কম তাহলে আমার পক্ষে কি যাকাত দেওয়া আবশ্যক হবে, তিনি বললেন হ্যাঁ আবশ্যক হবে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস নং 7087
وفي رد المحتار- ( قوله أو مؤجلا إلخ ) عزاه في المعراج إلى شرح الطحاوي ، وقال : وعن أبي حنيفة لا يمنع وقال الصدر الشهيد : لا رواية فيه ، ولكل من المنع وعدمه وجه، زاد القهستاني عن الجواهر : والصحيح أنه غير مانع (رد المحتار-كتاب الزكاة، مطلب الفرق بين السبب والشرط والعلة-3/177، بدائع الصنائع-2/86
আহলে হক মিডিয়া
https://ahlehaqmedia.com/4897-2-2/
(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়ামাক্বালাতুশ শাইখ বিন বায, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ৫১)।
মাসিক আল কাউসার
https://www.alkawsar.com/bn/article/1530/
الله اعلم بالصواب
সংকলনে
মুফতি মনির হোসাইন
যোগাযোগ: muftimon
irhussain@gmail.com