স্পষ্ট করে কথা বলা একটা আর্ট। সবাই এটা রপ্ত করতে পারে না সহজেই। যিনি বলেন তিনিও দেখবেন এটা হঠাৎ করে এমনিতেই অর্জন করেননি। বার বার চেষ্টা করে, বেশি বেশি পড়াশোনার মাধ্যমে শব্দভাণ্ডার উন্নত হয় যা স্পষ্ট করে কথা বলার অন্যতম একটি উপায়। প্রতিদিনই আমাদেরকে কতশত কথা বলতে হয় তার ইয়ত্তা নেই। কথা বলার ক্ষেত্রে আপনি যদি স্পষ্টভাষী হন তবে সেটা শুনতেও যেমন ভালো লাগে তেমনি শ্রোতারাও আপনার কথা গুলো বুঝতে পারেন খুব সহজেই।
somadanmedia.com |
স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে না পারলে, কথা বলার ক্ষেত্রে জড়তা দেখা দিলে, কোন ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে চলতে পারবেন না। মসজিদের খতিব কিংবা বয়ানের বক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না। সর্বসাধারণের কাছে দ্বীনের দাওয়াত সাবলীল ভাবে ব্যাক্ত করতে পারবেন না। কোন কথা মনে থাকবে কিন্তু তা মুখের জড়তার কারণে যদি প্রকাশ করতে না পারেন তাহলে অব্যক্ত এক জন্ত্রনার অসহনীয় কষ্ট নিরবে সহ্য করতে হবে। নিজের ভাব কারো সামনে তুলে ধরার জন্য মানুষের ধারস্ত হতে হবে।
কিভাবে জড়তা কাটিয়ে স্পষ্ট ভাষী হওয়া যায়।
নিচে জড়তা কাটিয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে
কয়েকটি কৌশল উল্লেখ করা হচ্ছে,,
এক: নিজেকে বিশ্লেষণ করতে হবে ও চর্চা করতে হবে
প্রথমেই জানতে হবে আপনি কোন বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন। কথাটি কিভাবে শুরু করবেন এবং কিভাবে শেষ করবেন এবং আপনার স্রোতা কারা, এবং আপনার কণ্ঠস্বর কেমন কি কি করব নাকি খুব মিষ্টি নাকি স্বাভাবিক। এইসব পর্যবেক্ষণের ফলাফল নতুন একটি কাগজে লিখে নিলে আশা করা যায় আপনার বক্তব্যে স্পষ্ট হবে।
দুই: আগে শোনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে
কোন একটি আলোচনায় যোগ দিলে প্রথমে আপনার পূর্বের বক্তারা কি বিষয়ে আলোচনা করছে তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে হবে। যদি তাদের মধ্যে কেউ ভালো কোন পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করে তাহলে তার অনুসরণ করা যেতে পারে।
তিন: আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলবে
যে বক্তব্যটি তুমি উপস্থাপন করুন সেটি আত্মবিশ্বাসের সাথে নির্দ্বিধায় শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। ভক্ত যদি নিজেই দ্বিধা দ্বন্দ্বিত হয়ে যায় তাহলে শ্রোতারাও তার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। নিজের কথার উপর আস্থাশীল হতে হলে যে বিষয়ে সম্পর্কে কথা হবে সেই বিষয়ে সম্পর্কে আগে থেকেই নলেজ জোগাড় করে রাখতে হবে।
চার: সুস্পষ্ট মতামত প্রয়োগ করতে হবে
বক্তব্য দানকারী এমন কোন কথা বলা যাবে না যে কথার কারণে মানুষ বিব্রত বোধ করি কিংবা বিষয়বস্তু থেকে মিলে না। অন্যের কথার মাঝে কথা বলতে যাবে না। যদি বলতেই হয় তাহলে অনুমতি সাপেক্ষে বলতে হবে।
পাঁচ: পরিবেশ পরিস্থিতির দিকে খেয়াল করতে হবে
অবস্থা চাহিদা অনুযায়ী কথা বলতে হবে কেননা অবস্থা পরিবর্তনের সাথে মানুষের কথার ধরন আচরণ বাচনভঙ্গি সবগুলোই পরিবর্তন হয়ে যায়। কখনো হাসির সময় আছে আবার কখনো কান্না আসতে পারে আবার কখনো স্বাভাবিক অবস্থা থাকতে হয়। সুতরাং অবস্থার চাহিদা বিবেচনা করে কথা বলতে হবে।
ছয় : মূল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
আলোচনা করার ক্ষেত্রে মূল আলোচনার বিষয়ের প্রতি ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। কথা বলার ক্ষেত্রে অনেক সময় আলোচ্য বিষয় থেকে কথা ভিন্ন দিকে গড়িয়ে যায় তখন শ্রোতারা বিরক্ত করে। মূল আলোচ্য বিষয় মনে রাখার জন্য এটিকে কাগজে লিখে নেওয়া যেতে পারে।
সাত : গ্যাপ দিয়ে কথা বলতে হবে
কথা বলার মাঝখানে প্রত্যেক দুটি বাক্য বলার মাঝখানে একটু সময় গ্যাপ দেওয়া দরকার। এত করে শ্রোতাদের কথা বুঝতে সুবিধা হয়। এবং কথা সুগোছালো এবং স্পষ্ট হয়। এবং মূল বিষয়ের প্রতি ভালোভাবে ফোকাস দেওয়া যায়। একেবারে ধীরগতিতে কথা বললে শ্রোতারা বিরক্ত বোধ করে। কাজী কথা বলার ক্ষেত্রেই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা চায়।
আট: দোয়া পাঠ করলে মুখের জড়তা কেটে যাবে ইনশাল্লাহ
মহা গ্রন্থ আল কুরআন এ এমনই একটা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ আমাদেরকে শিখিয়েছেন সুন্দর করে কথা বলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দুআ।
স্পষ্টভাবে কথা বলার জন্য এই প্রার্থনা বা দুআ যা মূসা (আ.) আল্লাহর কাছে করেছিলেন। কারণ তার কথা বলার ক্ষেত্রে জড়তা ছিল। দুআ টি কুরআনের সূরা ত্বহা-তে (২০:২৫-২৮) উল্লেখ করা হয়েছে। দুআ টি হলো:
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي (رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي)
وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي (وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي)
وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي (وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي)
يَفْقَهُوا قَوْلِي (يَفْقَهُوا قَوْلِي)
উচ্চারণ:
"রাব্বি শ্রাহ্ লি সাদরী, ওয়া ইয়াস্সির্ লি আম্রী, ওয়াহ্লুল উক্দাতাম্ মিল্ লিসানী, ইয়াফ্কাহূ কাওলী।"
অর্থ:
"হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন, এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।"
কোন কোন সময় করতে পারবেন এই দুআ?
যেকোনো সময়ই করতে পারেন। সেটা হতে পারে
১. আপনি কাউকে কোনো কথা বোঝাতে চাচ্ছেন সুন্দর করে কিছু প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে মনে যে পারবেন কি না সেই মুহূর্তে এই দুআ করতে পারেন।
২. কোনো প্রেজেন্টেশন আছে কিন্তু ভয় লাগছে খুব! এমন অবস্থায় করতে পারেন এই দুআ।
৩. চাকরির ইন্টারভিউ এর আগে বুক ধড়ফড় করা একটা স্বাভাবিক বিষয়। এই ধড়ফড়ানি কমিয়ে ফেলুন দুআ টি অনবরত পাঠের মাধ্যমে!
৪. আপনি শিক্ষক, ক্লাস নিবেন, কোনো বিষয় নিজে বোঝেন কিন্তু আপনার স্টুডেন্টরা বুঝতে পারছে না হয়তো বিষয়টার জটিলতার কারণে, এমন অবস্থায় দুআ টি করতে পারেন।
৫. কাউকে কথার মাধ্যমে কনভিন্সড করা প্রয়োজন কিন্তু মনে ভয় অথবা পেরেশানি কাজ করছে; এমন অবস্থায় পড়তে পারেন এই দুআ।
৬. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুরআন তিলাওয়াতের আগে এই দুআ করে কুরআন পড়তে শুরু করুন, ইনশাআল্লাহ পড়া সহজ হয়ে যাবে।
মূলত এই দুআটি স্পষ্টভাবে কথা বলার জন্য এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে বক্তব্য প্রকাশ করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। তাই নিজে মুখস্ত করুন আর অন্যকেও উৎসাহিত করুন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে দুআ টি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন।
নয়: চিকিৎসা
কিছু জড়তা আছে যা চিকিৎসা এবং ব্যায়ামের মাধ্যমেও দূর করা যায়। তাই আপনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পারামর্শ নিতে পারেন।
দশ: কুরআন শরীফ তেলাওয়াত
বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করুন। মুখের জড়তা দূর করতে এটা খুবই কার্যকর।
উপসংহার
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন, এখন আমাদের কাজ হলো আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার। উপরে উল্লেখিত বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার মাধ্যমে আশা করি আল্লাহর নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করতে পারব ইনশাল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাওফীক দান করুক।