আজ আমরা জানতে চলেছি ভীমরুলের কামড়ে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং তার ফলে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি কতটুকু। আপনারা যারা মুটামুটি দেশের খবর রাখেন তারা জানবেন যে, কিছু দিন আগে ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে একই পরিবারের বাবা এক ছেলে ও এক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এতে অনেকেই সাবধানতা অবলম্বন করে ভীমরুলের চাক পুড়িয়ে দিচ্ছে। তো চলুন জানা যাক ভীমরুল কখন কামড়ায় এবং কামড়ালে করনিয় কী।
somadanmedia.com |
প্রথম কথা
প্রথম কথা হলো ভীমরুল কামড় দেয় না বরং হুল ফোটায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যে ভীমরুল দেখা যায় তার নাম হচ্ছে Lesser banded hornet বা Vespa affinis. প্রজাতিটি সবচেয়ে বিষধর ভীমরুল নয় তবে বিষ বেশ তীব্র ও ভীমরুলটি আক্রমণাত্মক। (বিষাক্ত নয় কারণ হুল ফুটিয়ে রক্তে বিষ চালনা করে)
অবস্থান
ভীমরুল বোলতা গোত্রের পতঙ্গ এবং মৌমাছির মতো সামাজিক । গাছের উঁচুতে বা ঝোপযুক্ত গাছে চাক বাঁধে। এমনিতে নিজের চরকায় তেল দেয় কিন্তু তাদের ক্ষতি হলে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং তখন কাছে যাকে পাবে তাকে আক্রমণ করে। অন্য অনেক প্রাণীর মতো এরাও নিজেরা বিপদে না পড়লে কাউকে আক্রমণ করে না। সুতরাং অনর্থক ভীমরুলের চাকে ডিল দিতে যাবেন না। কাউকে একাজে করতে দেখলে বাঁধা দিতে বিলম্ব করবেন না।
ভীমরুলের বিষের পরিমাণ
একটা ভীমরুল যতটুকু বিষ থাকে তাতে একজন মানুষ মারা যাবে না। এতে হুলের জায়গাটা ফুলে উঠবে, গরম গরম মনে হবে, ব্যথা করবে, চুলকাবে, রক্তপাতও হতে পারে। এগুলো একদিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায় । ১০ শতাংশের কম ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ তীব্র হতে পারে এবং সারতে অনেক সময় লাগতে পারে। তেমন হলে ডাক্তার দেখাতে হবে । ভীমরুলের পুরো ঝাঁক ছেঁকে ধরে হুল ফুটালে তখন বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে কারণ যথেষ্ট বিষ রক্তে ছড়িয়ে যাবে। একটা ভীমরুল বারবার হুল ফোটাতে পারে এবং এর হুল ভাঙে না।
ভীমরুলের বিষ থেকে সবচেয়ে মারাত্মক যে জিনিসটা হয় সেটা হলো অ্যানাফাইলেটিক শক যা একটা প্রাণঘাতি অ্যালার্জি।
অ্যানাফাইলেটিক শক এর লক্ষণ:
১. শরীরে দানা দানা ফুসকুড়ি ওঠা
২. চামড়া বা গলা ফুলে ওঠা
৩. চামড়ায় লালচে ভাব
৪. কাশি
৫. শ্বাসকষ্ট
৬. বুক শক্ত হয়ে যাওয়া
৭. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
৮. ঘাম হওয়া
ভীমরুলের হুলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ
একটা ভীমরুলের সামান্য বিষেই অ্যানাফাইলেটিক শক হতে পারে। অ্যালার্জি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবেল । অ্যানাফাইলেটিক শকের শেষ পরিণতি মৃত্যু। সুতরাং অ্যানাফাইলেটিক শকের কারণেই মানুষের মৃত্যু হয়, আর সৃষ্টি হয় ভীমরুলের হুল ফুটানোর কারণে।