ব্যবসা করা সুন্নত কেননা রাসূল সাঃ নিজে ব্যবসা করেছেন এবং ব্যবসার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন বিশ্বস্ত আমানত দার ব্যবসায়ীর হাসর হবে নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও নেককারদের সাথে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে সমাধান মিডিয়ার সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
somadanmedia.com |
তোমরা পার্থিব জীবনোপকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজতর করা হয়েছে।
-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ব্যবসায়ীর সন্তান। তিনি নিজে ব্যবসা করেন। চাচার সাথে ব্যবসায়িক সফরে সিরিয়ায় যান, যৌবনে আবার পণ্য নিয়ে সিরিয়ায় যান ব্যবসা করতে। মানুষকে কাজ করে খাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি বলেন:
মানুষের নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য আর কিছু নেই।সহিহ বুখারি: ২০৭২)
কেউ যদি বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা করে, এই ব্যবসার জন্যও সে সওয়াব পাবে। সে ব্যবসা করে মুনাফা লাভ করে, সেখান থেকে পরিবারের পেছনে ব্যয় করবে, এতেও সওয়াব রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবে।"(সুনানে ইবনে মাজাহ: ২১৩৯)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তির সমতুল্য এবং যারা রাতে (নফল) ইবাদত করে ও দিনে রোজা রাখে তাদেরও সমতুল্য। (প্রাগুক্ত, ২১৪০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, ব্যবসা করা বা উপার্জন করাটাও একটা ইবাদত; যদি সেটা ইসলামের বিধান অনুসারে হয়।
একজন ভালো মানুষের কাছে সম্পদ থাকা দোষের কিছু না, বরং ক্ষেত্রবিশেষে সেটা উত্তম। সম্পদের মাধ্যমে সে অন্যদের উপকার করতে পারে। দান করতে পারে, অভাবগ্রস্তকে সহযোগিতা করতে পারে, ঋণগ্রস্তকে টাকা দিয়ে তার দুশ্চিন্তা দূর করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
তাকওয়ার অধিকারী লোকদের ধন-সম্পদের মালিকহ ওয়াতে কোনো দোষ নেই।"(প্রাগুক্ত, ২১৪১)
একবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবি আমর ইবনুল আ'স রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন,
আমি তোমাকে সম্পদ উপার্জনের জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। সৎ মানুষের হাতে হালাল সম্পদ থাকা অতি উত্তম। তা দিয়ে সে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।(মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/২; ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহর শর্তে সহিহ)
কোনো উপায়ে কারো রিজিকের ব্যবস্থা হলে সে যেন ঐ পেশায় লেগে থাকে। এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহ দেন।
নাফে রাহিমাহুল্লাহ বলেন, "আমি সিরিয়া ও মিসরে ব্যবসায়িক পণ্য রপ্তানি করতাম। আমি ইরাকে পণ্য রপ্তানির মনস্থ করে উম্মুল মুমিনিন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট গিয়ে বললাম, হে উম্মুল মুমিনিন! আমি সিরিয়ায় পণ্য রপ্তানি করতাম, এবার ইরাকে তা রপ্তানি করতে চাই। তিনি বলেন, তুমি তা করো না, তোমার আগের গন্তব্য ঠিক রাখো। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ কোনো স্থান থেকে তোমাদের কারো রিজিকের ব্যবস্থা করে দিলে সে যেন ঐ স্থান ত্যাগ না করে, যতক্ষণ না সেই স্থান তার প্রতিকূল হয় অথবা অসহনীয় হয়।"(সুনানে ইবনে মাজাহ: ২১৪৮)
সাহাবিগণ যেন ব্যবসা করেন সেই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহ দিয়ে বলেন,
তোমরা ব্যবসা করো। কেননা, রিজিকের দশভাগের নয়ভাগ ব্যবসার মধ্যে রয়েছে।"(আল্লামা ইরাকী, তাখরিজু আহাদিসি এহইয়া: ১৫৮৮)
চার খলিফার প্রত্যেকেই অন্যান্য কাজের পাশাপাশি উপার্জনে সময় দেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ব্যবসায়ী। খিলাফতের দায়িত্ব লাভের আগ পর্যন্ত তিনি ব্যবসা করতেন। খিলাফতের দায়িত্ব লাভের পর উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শে তাঁর জন্য বার্ষিক ২৫০ দিনার ভাতা ধার্য করা হয়। কিন্তু, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাঁর ইচ্ছে ছিল তিনি ব্যবসা করবেন, নিজ হাতে উপার্জন করবেন।
খিলাফতের দায়িত্ব লাভের পর তিনি তাঁর সমস্ত দিনার এবং দিরহাম বায়তুলমালে জমা দেন এবং বলেন, "আমি এগুলো দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতাম। কিন্তু, যখন খিলাফতের দায়িত্ব নিলাম, তখন লোকেরা আমাকে ব্যবসা ও রুটি-রোজগার থেকে সরিয়ে নিলো।"(ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, কিতাবুয যুহুদ: ২/২১)
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন চামড়ার ব্যবসায়ী।
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুও নিজে উপার্জন করতেন। এমনকি একবার তিনি এক ইহুদির কাজে নিজেকে ভাড়ায় খাটিয়েছিলেন। (ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আশ-শায়বানী, কিতাবুল কাসব: ৩৬)
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হবার পর মানুষজনকে ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি ব্যবসায়ীদের জন্য মূলনীতি প্রণয়ন করেন। তিনি বাজারে নিয়ম করেন-"ইসলামি শরিয়তে ক্রয়-বিক্রয় নীতিমালা সম্পর্কে যারা পুরোপুরি অভিজ্ঞ, তারাই ব্যবসা করার অনুমতি পাবে। "(ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি, উমর ইবনুল খাত্তাব: ১/৩৫৫)
তাঁর যুগে ব্যবসা সম্পর্কে জ্ঞান ছাড়া কেউ ব্যবসা করতে পারত না। এটাকে বলা যায় সার্টিফিকেটের মতো। ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায়িক জ্ঞান প্রয়োজন। এটা এই কারণে যে, এই নিয়ম না থাকলে ব্যবসায়ী বুঝতে পারবে না কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম। কেননা, ব্যবসায়ে হালাল-হারাম খুবই সূক্ষ্ম বিষয়। এই বিষয়ে পর্যাপ্ত
জ্ঞান না থাকলে যে কেউ হারামে লিপ্ত হতে পারে। মানুষের কাছে ভিক্ষা করার চেয়ে এমন কোনো ব্যবসা করা উত্তম,যা মানুষের কাছে তুচ্ছ। যেমন রাস্তার পাশে ঝালমুড়ির ব্যবসা। উমর ইবনুল খাত্তাব তাঁর যুগের মানুষদেরকে ব্যবসার প্রতি উৎসাহ দেন। তিনি বলেন:
হে দুস্থের দল। মাথা তোলো, ব্যবসা করো। পথ উন্মুক্ত। মানুষের ওপর বোঝা হয়ো না।(প্রাগুক্ত, ১/৩৫৬)
একদিন বাজারে প্রবেশ করে দেখলেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বাইরের। প্রবীণ সাহাবিরা ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। এটা দেখে উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু তৎক্ষণাৎ প্রবীণ ব্যবসায়ীদেরকে জড়ো করলেন। তারা কেন ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে জানতে চাইলেন। অতঃপর তিনি সবার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন:
"আল্লাহর শপথ! তোমরা যদি এমনটা করতে থাকো, তাহলে তোমাদের পুরুষ তাদের (অনারব) পুরুষের এবং তোমাদের নারীরা তাদের (অনারব) নারীদের অধীনস্থ হয়ে পড়বে।"
মুজাহিদ ব্যতীত অন্যান্য বিশিষ্ট মুসলিম ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিলে তিনি সেটাকে শঙ্কার দৃষ্টিতে দেখতেন।