গর্ভাবস্থায় করনীয় গুরুত্বপূর্ণ ১০টি আমল

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছা অনুযায়ী যখন কোন মা গর্ভধারণ করে তখন থেকে এই ভুল মায়ের যাবতীয় চাল-চরণ ও গতিবিধির বিস্তার প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে। সাথে সাথে ভ্রুণ অবস্থা থেকেই মায়ের শুরু হয় অবর্ণনীয় কষ্ট। কুরআনের ভাষায় حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে (সূরা লোকমান-১৪) এবং একজন মায়ের এই মর্মান্তিক কষ্টের ফসল হল একটি সন্তান। 

গর্ভাবস্থায় করনীয় গুরুত্বপূর্ণ ১০টি আমল

এই সন্তানটি যদি মায়ের সঠিক চালচলন না থাকার কারণে নেককার সৎ চরিত্রবান আদর্শবান না হয় তাহলে এভাবেই একদিন এই কষ্টের সন্তানকে লক্ষ্য করে বলে তোকে গর্ভে ধারণ করে ভুল করেছি। আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি এই ধরনের কোন কথা যেন কোন মাকে বলতে না হয়। এই উদ্দেশ্যে আল্লাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অগণিত উপদেশের মধ্য থেকে দশটি উপদেশ উল্লেখ করছি আশা করি উপকৃত হবেন।

১, গোনাহ থেকে বিরত থাকুন:-

প্রিয় গর্ভবতী মা গর্ভ থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত ইবাতে ইবাদত করার থেকে গুনাহ থেকে বিরত থাকাটাই আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করবে। এটা করতে হবে আপনার গর্ভে ভেড়ে ওঠা নিজ সন্তানের জন্যই। যেমন নাটক সিরিয়াল যেকোনো ধরনের মুভি বর্জন করবেন, নিজের কন্ঠস্বরকে সঞ্চত করবেন, অতীব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হবেন, শরীর পর্দার সাথে চলাফেরা করায় সচেষ্ট থাকবেন। গায়রে বাহারাম কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা করা কিংবা পর্দা লঙ্ঘনের কোন কাজ করবেন না। তাছাড়া অযথা ঝগড়া বিবাদ মনোমালিন্য এগুলো কেউ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। এভাবে চলতে পারলে পবিত্র আল কুরআনের সংবাদ আপনার জন্য অপেক্ষমান। আল্লাহ তাআলা বলেন যে মুমিন থাকা অবস্থায় সৎ কর্ম করবে চায় সে নারী হোক বা পুরুষ আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করা এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী পুরস্কারে ভূষিত করুব। (সূরা নাহাল-৯৭) আরেকটি আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তোমাদেরকে যে বড় গুনাহ থেকে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে যদি বিরত থাকতে পারো তবে তোমাদের ছোট গোনার সমূহ আমি ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবো। (সূরা নিসা-৩১)

২, ধৈর্য্য ধারণ করুন:

গর্ভধারণের কারণে যে সকল সমস্যার সৃষ্টি হয় সেগুলোতে ধৈর্য ধারণ করুন, যেমন বমি বমি ভাব অসুস্থতা দুর্বলতা প্রভৃতি। এ সময়ের প্রতিটা মুহূর্ত আপনার জন্য জিহাদতূল্য ইবাদত। এভাবে চিন্তা করলে আপনার ধৈর্য্য ধারণ করা সহজ হবে। আপনার কষ্ট শক্তিতে পরিণত হবে। রসুলের ভাষায়: সবর হলো জ্যোতি, (মুসলিম ২২৩)

৩, সময় মতন নামাজ আদায় করুন:

গর্ভাবস্থায় বেশি অস্থিরতা কাজ করে। আর যথাসময়ে নামাজ আদায় করা অন্তরর্কে প্রশান্ত রাখে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন বিপদ কিংবা মুসিবতে পড়তেন তখন সাথে সাথে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। নামাজের সময় হলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলাল রাঃ কে বলতেন নামাজের ব্যবস্থা কর এবং তার মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত কর।(আবু দাউদ: ৪৩৩৩)

৪. জিকির করুন:

গর্ভাবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কে বেশি বেশি স্মরণ করা তথা জিকির করা অস্থিরতা দূরীকরণের কুরআনের ব্যবস্থাপনা এটি। এই জিকির আপনাকে এবং আপনার গর্ভের সন্তানকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন যারা ঈমানদার আল্লাহর স্মরণে তাদের মন প্রশান্ত হয় জেনে রাখ আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়।(সূরা রাদ : ২৮) প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যা সুবহানাল্লাহি আলহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, ১০০বার, আস্তাগফিরুল্লাহ ১০০ বার, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০০বার পাঠ করবে। এছাড়াও সর্বদায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির করতে থাকবে।

৫, শুকরিয়া আদায় করুন:

লক্ষ্য করুন মা হওয়ার মধ্যেই নারীর জন্মের সার্থকতা। কত নারী এমনও রয়েছে যারা বছরের পর বছর ধরে একটি সন্তানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন বহু নামিদামি চিকিৎসা খানায় যোগাযোগ করতেছেন কিন্তু তাদের ভাগ্যে এ নেয়ামত জুটছে না। অতএব যখন এই মা হওয়ার আনন্দে পুলকিত হবে তখনই আল্লাহ তায়ালা শুকরিয়া আদায় করবেন। বলবেন আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন আমার শুকরিয়া আদায় কর কুফরি করিও না।(সূরা বাকারা: ১৫২) আল্লাহ তাআলার উপর যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো তাহলে আমি নেয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দিব আর যদি কুফরি করো তাহলে জেনে রাখো আমার শাস্তি অনেক কঠিন।

৬, অধিক রাত পর্যন্ত জাগ্রত থাকা থেকে বিরত থাকুন: 

গর্ভাবস্থায় রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্বাস্থ্য কাজেই এশার নামাজ সমূহের শুরুতে তারপর প্রয়োজনীয় কাজ ছেড়ে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে যান। দেরি করে ঘুমোতে যাবেন না। কেননা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে মস্তিষ্ক কাজ করতে পারে না। সুতরাং অন্তত এতটা আগে রাতের বিছানায় যাবে যাতে করে কমপক্ষে ছয় ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত হয়। এবং ফজরের নামাজ যথাসময়ে আদায় করা যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন আর আমি রুদ্রাকে বানিয়েছি তোমাদের জন্য ক্লান্তি দূরকরী।(সূরা নাবা: ৯)

৭, ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন:

সর্বদাই ওযু অবস্থায় থাকা এটাও একটা এবাদত। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। তাছাড়া দৈহিক সুস্থতা ও আর্থিক প্রসারটির ক্ষেত্রে প্রচুর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে ওযু করে ঘুমোতে যাবেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ওযু করে ঘুমাবে যদি সে ওই রাতে মারা যায় তাহলে শহীদি মর্যাদা লাভ করবে। অপর এক হাদীসে রাসূল সাঃ বলেন, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের মত অজু করবে।(মুসলিম : ৪৮৮৪)

৮, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করুন:

কোরআন তেলাওয়াত করা এমনিতেই অনেক সোয়াবের কাজ তাছাড়া গর্ভে বাচ্চা থাকা অবস্থায় তার সোয়াব তো আরো বেশি কেননা প্রায় ২০ তম সপ্তাহে গর্ভের বাচ্চা শ্রবন করার ক্ষমতা অর্জন করে। মা প্রতিদিন কিছু কোরআন তেলাওয়াত করে বাচ্চার ও কোরআনের মাঝে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার এটাই উত্তম মুহূর্ত। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ বলেন, কুরআনের ব্যাপারে তোমাদের অবশ্য পালনীয় এই যে কোরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া। কেননা এই বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এর প্রতিদান ও দেওয়া হবে।(শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬)

গর্ভে থাকাকালীন কোন কোন সূরা পড়া উত্তম:

গর্ভাবস্থার জন্য মূলত নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই তবে কোন বুজুর্গ সুরের বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ্য রেখে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এভাবে..

প্রথম মাসের সূরা আল ইমরান পাঠ করলে সন্তান দামি হবে।

দ্বিতীয় মাসের সূরা ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর হবে।

তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পড়লে সন্তান সহিষ্ণু হবে।

চতুর্থ মাসে সূরা লোকমান পাঠ করলে সন্তান বুদ্ধিমান হবে।

পঞ্চম মাসে সূরা মুহাম্মদ পাঠ করলে সন্তান চরিত্রবান হবে।

ষষ্ঠ মাসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে সন্তান জ্ঞানী হবে।

সপ্তম অষ্টম নবম ও দশম মাসে সূরা ইউসুফ, মোহাম্মদ এবং ইব্রাহিম কিছু কিছু পড়বে।

ব্যথা উঠলে সূরা ইনশিকাক পাঠ করে পানিতে ফু দিয়ে পান করলে ব্যথা উপশম হবে।

তাছাড়া ঘুমের আগে চার কুল তথা সুরা কাফিরুন সূরা ইখলাস সূরা ফালাক সূরা নাস পড়ে হাতের তালুতে সারা শরীরে হাত বুলিয়ে নিলে বহু ফায়দা পাওয়া যায় তিনবার করবে।

৯,বেশি বেশি দোয়া করুন:

গর্ভকালীন সময়ে মাঝে মাঝে অসহায় বোধ হয় এমনও মনে হয় যে না জানি এবার আমি মরে যাই। এহেন অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহতালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। কেননা এই সময়ের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, বলতো কে অসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন।(সুরা নামল ৬২)

তাছাড়া আপনি আপনার সন্তানের মা আর মায়ের দোয়া সব সময় আল্লাহ তাআলা কবুল করে থাকে তাই আপনি আপনার সন্তানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন যেন সে সুস্থ সবল এবং জ্ঞান ও গুণের অধিকারী হয়। এই দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন,

رَبِّ هَبْ لِىْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً‌ۚ اِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَآءِ

হে আমার প্রতিপালক আপনার পক্ষ থেকে পুত্র-পবিত্র সন্তান দান করেন নিশ্চয়ই আপনি দোয়া শ্রবণকারী। (আল ‘ইমরান: ৩৮)

পুত্র-সন্তান জন্মগ্রহণের দোয়া

আমরা অনেকেই পুত্র সন্তান লাভের জন্য অনেক আশা করে থাকি এবং বিভিন্ন দুয়া দুরুদও খুঁজে পাট করতে থাকি এই দোয়াটি পড়ুন ইনশাল্লাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পুত্র সন্তান দান করবেন। দোয়াটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

رَبِّ هَبْ لِىْ مِنَ الصّٰلِحِيْنَ

বাংলা উচ্চারণ: রব্বি হাবলি মিনাস্ সলেহীন।

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন। (আস-সাফফাত: ১০০)

১০, আল্লাহর গুণবাচক নাম গুলো করুন বিশেষ করে এই দুইটি নাম:

কোন গর্ভবতী মহিলা যদি আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক নাম আল মুতাআ'লীاَلْمُتَعَالِىْ) )এবং আল মুবদিয়ু (اَلْمُبْدِئُ)পড়তে থাকে তবে ওই মহিলা গর্ভকালীন কষ্ট ক্ল্যাস পেরেশানি থেকে মুক্তি পায়।

উপসংহার

উপরোক্ত দশটি আমল পালন করলে গর্ভবতী মা যেমন আল্লাহতালার কাছে প্রিয় হয়ে যাবেন তেমনি ভাবেই তার ভিতরে বেড়ে ওঠা সন্তানও নেক সন্তান হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের গর্ভবতী মা দেরকে ইসলামের সকল বিধান যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুক, আমিন।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment