বর্তমান সময়ে বিশ্বে ইসলামী খেলাফত দরকার বিশেষ করে বাংলাদেশ এই পরিস্থিতিতে ইসলামী খেলা হতে পারে মানুষদের মাঝে পরিপূর্ণ শান্তি দিতে ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে। এজন্যই আমাদের ইসলামী খেলাফতের পরিচয় জানা দরকার। আজকের এই আর্টিকেলে পরিপূর্ণভাবে আপনি ইসলামী খেলাফতের পরিচয় জানতে পারবেন,, তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করা যাক।
somadanmedia.com |
ইসলামি খিলাফত কী?
সহজ করে বললে, মানুষের দ্বীন ও দুনিয়াবি যাবতীয় যত বিষয় আছে সেগুলো পরিচালনার জন্য আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নির্ধারন করেছেন, সেগুলোকে তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে জীবনের পরিচালনার জন্য নির্ধারন করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঠিক করে দেয়া নীতি ও নৈতিকতার প্রতিনিধিত্ব হয়ে জীবনপরিচালনার নামই হলো খিলাফত। শরহে মাকাসেদ গ্রন্থে খিলাফতের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে,
هي رئاسة عامة في الدين والدنيا خلافة عن النبي صلى الله عليه وسلم
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্থলাভিষিক্ত হয়ে মুসলমানদের ইহলৌকিক বা পরলৌকিক বিষয়ে পরিচলনার সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে খিলাফত বলে।
অর্থাৎ, মানুষের জীবনের যত অনুষঙ্গ আছে চাই তা ইহকালিন হোক বা পরকালিন; সকল বিষয়ের প্রকৃত সিন্ধান্ত দাতা হলেন আল্লাহ ও তার রাসুল। আর আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতিনিধি হয়ে মানুষের এই সকলের বিষয়ের দায়িত্ব নেওয়াই হলো খিলাফতের দায়িত্ব নেওয়া।
ইসলামি খিলাফতের মৌলিকত্ব ও আধুনিক রাষ্ট্রতত্ত্বের মাঝে পার্থক্য
সংজ্ঞা থেকেই ইসলামি খিলাফতের মৌলিকত্ব ও আধুনিক রাষ্ট্রতত্ত্বের মাঝে পার্থক্য হয়ে যায়। আধুনিক রাষ্ট্রতত্ত্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে একজন শাসক হন মূলত জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ও কামনানবাসনা নিশ্চিত করাই হয় একজন শাসকের কাজ। ইসলামি খিলাফত ও গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বের এই মৌলিকত্বের বিষয়টি বুঝা অত্যান্ত জরুরি। ইসলামি খিলাফতে একজন শাসকের তখনই বিরোধিতা করা যায়, যখন শাসক আল্লাহর নাফরমানির কোনো আদেশ করে।
কারণ নাফরমানির আদেশের অর্থই হলো শাসক সঠিক প্রতিনিধিত্ব করছে না। আর জনগণের মূল শাসক যেহেতু খলিফা বা বাদশাহ নয়, বরং আল্লাহ। তাই আসল শাসকের বিরোধিতা করার কারণে দুনিয়ার শাসকের আদেশ মানার কার্যকরিতা শেষ হয়ে গেছে। অপরদিকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একজন মানুষ তখনই শাসকের বিরোধিতা করার আইনত অধিকার রাখে, যখন শাসকের কোনো আইন বা আদেশ জনগণের চাহিদা বা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হয়।
আরেকটি বিষয় হলো, দুনিয়ার যেকোনো রাষ্ট্রে যখন কোনো আইন পাশ করা হয় তখন সে আইনের পক্ষে রেফারেন্স উল্লেখ করতে হয়-কোন উৎসের ভিত্তিতে আমি এই আইনটি প্রণয়ন করতে চাচ্ছি। ইসলামি খিলাফত ও গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বের মৌলিক পার্থক্যের কারনে এখানেও রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। একটি ইসলামি খিলাফতে যখন কোনো আইন পাশ নিয়ে আলোচনা হয় তখন তা বাস্তবায়ন করার জন্য রেফারেন্স ব্যবহার হয় কুরআন-সুন্নাহ ও তার আলোকে তৈরি মুজতাহিদের সিন্ধান্ত। আর গণতন্ত্রে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয় মানবীয় চাহিদা ও স্বাধীনতা, যা সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবিধান হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কখনো যদি কোনো ইসলামি আইন বাস্তবায়ন হয় তা এজন্য নয় যে, এটা কুরআন ও সুন্নাহতে আছে। বরং তা এজন্য যে এটা জনগণ চেয়েছে। যদি জনগণ না চাইতো তাহলে এটা আল্লাহ বললেও বাস্তবায়ন হবে না।
এই মৌলিক পার্থক্যটি সঠিক অনুধাবন করতে না পারার কারণে অনেকেই গণতন্ত্রের মাঝে কোনো ইসলামি বিধান দেখলে বিশ্বাস করে বসেন, গণতন্ত্রের মধ্য দিয়েও ইসলামের বিধান বাস্তবায়ন সম্ভব। যা নিতান্ত ভুল ও একটি জাহালত পূর্ণ ধারণা।
উপসংহার
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে ইসলামিক খেলাফতের পরিপূর্ণ বুঝ দান করে তাকে বর্তমান বিশ্বে প্রয়োগ করে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার তাওফিক দান করুক আমিন।