পালন করা অনেক পূন্নময়ী একটি ইবাদত। এ গুরুত্বপূর্ণ এ ইবাদত টি আমরা কিভাবে পালন করব চলুন কোরআন ও হাদিসের আলোকে জেনে নেই। আশুরার সওম পালন সম্পর্কিত হাদীসসমূহ একত্র করলে আশুরার সওম পালনের পদ্ধতি সম্পর্কে কয়েকটি সিদ্ধান্তে আসা যায়ঃ
somadanmedia.com |
সওম পালনের পদ্ধতি (ক)
মুহাররম মাসের নবম ও দশম তারিখে সওম পালন করা। এ পদ্ধতি অতি উত্তম। কারণ রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই আশুরার সওম পালনের সংকল্প করেছিলেন। যেমন ইবনে আব্বাস রা. এর হাদীস এর প্রমাণ বহন করে।
সওম পালনের পদ্ধতি (খ)
মুহাররম মাসের দশম ও একাদশ দিবসে সওম পালন করা। এ পদ্ধতিও হাদীস দ্বারা সমর্থিত।
সওম পালনের পদ্ধতি(গ)
শুধু মুহাররম মাসের দশম তারিখে সওম পালন করা। এ পদ্ধতি মাকরূহ। কারণ এটা ইহুদীদের আমলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।(ইকতেজাউ সিরাতিল মুস্তাকীম: ইমাম তাইমিয়া)
আশুরার সওম তিনটি পালন করা যাবে?
ও কোন কোন আলেমের মতে আশুরা উপলক্ষে নবম, দশম ও একাদশ তারিখে মোট তিনটি সওম পালন করা ভাল। এতে আশুরার ফজীলত লাভ করার ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ থাকে না। (রদ্দুল মুহতার ইবনে আবেদীন)
তবে সর্বাবস্থায় এ রকম আমল করা ঠিক হবে না। এভাবে আমল তখনই করা যেতে পারে যখন আশুরার তারিখ নিয়ে সন্দেহ দেখা যায়।
যেমন মুহাম্মাদ বিন সীরিন (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার মুহাররমের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিলে তিনি উপরোক্ত নিয়মে তিনটি সওম পালন করেন। (ফাতহুল বারী: ইবনে হাজার) ও (যাদুল মাআ'দ ইবনুল কায়্যিম)
শরীয়তের মানদন্ডে আশুরার প্রচলিত আমলসমূহ
মুসলিম জনসাধারণের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন যে, তারা এ আশুরাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের কাজ-কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এবং এ কাজগুলো তারা আশুরার আমল মনে করেই করে থাকে। যেমন আশুরার রাত্রি জাগরণ, বিভিন্ন প্রকার উন্নত খাবারের ব্যবস্থা, পশু জবেহ, আনন্দ-ফুর্তির প্রকাশ, আবার কারবালায় ইমাম হুসাইন রা. এর শাহাদাতের স্মরনে মাযারের প্রতিকৃতি বানিয়ে তা নিয়ে মাতম ও তাযিয়া মিছিল বের করা, মাহফিল ও আলোচনা সভা ইত্যাদি এগুলো বিভ্রান্ত শিয়া ও রাফেজীদের কাজ হলেও দুঃখজনক ভাবে আমাদের সাধারণ মুসলিম জনগনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
তাই আমাদের জেনে নিতে হবে কোনটা আশুরা সম্পর্কিত আমল আর কোনটা ভেজাল বা বিদ'আত।
যদি আমাদের আমলগুলো শরীয়ত সম্মত হয় তা হলে তা দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সওয়াব লাভ করতে পারব। আর যদি আমলগুলো শরীয়ত সমর্থিত না হয়, বিদ'আত হয়, তাহলে তা পালন করার কারণে আমরা গুনাহগার হবো। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পরিবর্তে তার থেকে দূরে সরে পড়ব।
আমাদের সর্বদা ভাল করে মনে রাখতে হবে যে, যে কোন আমল আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হওয়ার জন্য দুটো শর্ত রয়েছে।
প্রথম শর্ত হল:
আমলটি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করতে হবে।
দ্বিতীয়টি হল:
আমলটি অবশ্যই আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশিত পদ্ধতিতে হতে হবে। সোজা কথায় রাসূলের তরীকায় হতে হবে। যদি আমরা আশুরার অতীত ও বর্তমানের প্রচলিত কাজ-কর্মের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, এ সকল কার্যাবলী ও অনুষ্ঠানাদি দু ভাগে বিভক্ত।
প্রথম ভাগ
প্রচলিত আমলগুলো ইবাদত হিসেবে স্বীকৃত কিন্তু সেগুলো এ দিনের সাথে খাছ (সংশ্লিষ্ট) নয়। যেমন আশুরার রাতে জাগ্রত থেকে নফল সালাত আদায় করা, কবর যিয়ারত করা, দান-ছদকাহ করা, ফরজ যাকাত আদায় করা, খিচুরী বা বিরিয়ানী পাক করে মানুষদের মাঝে বিলি করা, রাস্তা-ঘাটে মানুষকে পানী পান করতে দেয়া ইত্যাদি। যদিও এ কাজগুলো স্বতন্ত্রভাবে বিদ'আত নয় কিন্তু এগুলো আশুরার দিনের সাথে খাছ করা বিদ'আত।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বা তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা সাহাবায়ে কেরাম রা. এ কাজগুলো আশুরার দিনের সাথে খাছ করেননি। আর বিদ'আত এমন একটি বিষয় যার এমন কোন সীমা নেই যেখানে গিয়ে সে থেমে যাবে। সে সামনে অগ্রসর হতে থাকে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। ইবাদতের ক্ষেত্রের বিদ'আতগুলো কখনো ইবাদতের সত্যিকার রূপ ধারণ ও পরিবর্তন করে, ফলে মনেই হয় না যে, এ কাজটা বিদ'আত হতে পারে।
যেমন একটা বানোয়াট হাদীস আছে যে,
আশুরার রাতে চার রাক'আত সালাত আছে, তাতে একান্ন বার সূরা ইখলাছ পড়তে হয়।
দ্বিতীয় ভাগ
যে সকল কাজ ইবাদত নয়, মানুষের অভ্যাসের অন্তর্গত। যেমন এ দিনে গোসল করা, সুরমা ব্যবহার করা, উন্নত মানের খাবার-দাবার আয়োজন করা, গরু- ছাগল জবেহ করা, মেলার আয়োজন করা ইত্যাদি। এগুলো শিয়া ও রাফেজী সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ থেকে এসেছে। তারা হুসাইন রা. এর শাহাদাত স্মরণে শোক প্রকাশ ও মাতম করে থাকে।
তারা আশুরা উপলক্ষে এমন কিছু আচার অনুষ্ঠান যোগ করেছে যা ইসলাম ধর্মে নেই। বরং এগুলো ইহুদী ও মুশরিকদের উৎসবের অনুকরণ।
এক হিন্দু ভদ্রলোকের সাথে আলাপন
কোন এক সফরে আমার পার্শ্বে এক শিক্ষিত হিন্দু ভদ্রলোক বসা ছিলেন। তিনি এক কলেজের প্রফেসর। আমি তার কাছে হিন্দু ধর্মের বিধি-বিধান ও বিভিন্ন আচার- অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানার জন্য কিছু প্রশ্ন করলাম। তিনি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর এমনভাবে উপস্থাপন করলেন যেন আমি বুঝে নেই তাদের প্রতিটি আচার-পর্বের সাথে ইসলাম ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের মিল আছে।
আমি তাকে প্রশ্ন রাখলাম "আচ্ছা ভাই, আপনাদের রথ যাত্রাটা কি?
উনি বললেনঃ "কেন, এটাতো আপনাদের মহররমের তাযিয়া মিছিলের মতই।" তার এ উত্তর শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।
আমি কখনো তাযিয়া মিছিলে অংশ নেইনি ও রথযাত্রাও প্রত্যক্ষ করিনি। তবে বিভিন্ন মিডিয়াতে একাধিকবার এ দুটোর যে ছবি দেখেছি তাতে উভয়ের দৃশ্য আমার কাছে একই রকমই মনে হয়েছে।
এ দিনে চোখে সুরমা ব্যবহার করা সম্পর্কিত যে হাদীস রয়েছে তার সনদ অত্যন্ত দুর্বল।
মোটকথা
মোট কথা হল আশুরার সাথে সওম ব্যতীত অন্য কোন আমলের সম্পর্ক নেই। আশুরার আমল শুধু একটা। তা হল সওম পালন করা। এটাই হল রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রদর্শিত পথ ও তার আদর্শ।
এ ছাড়া আশুরাকে কেন্দ্র করে যা কিছু করা হবে সবই বিদ'আত হিসেবে পরিগণিত হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বারবার স্মরণ করে। (সূরা আহযাবঃ ২১)
পরিশেষে
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে এই আশা ব্যক্ত করি দিয়ে যেন আমাদেরকে সর্বদা সুন্নতের উপর অটল ও অবিচল থাকার তৌফিক দান করেন। বেদাত ও অপসংস্কৃতি থেকে যে দান করে সরাসরি পথে পরিচালিত করেন।