ডিপ্রেশন প্রতিরোধে আল্লাহ উপর ভরসা

 দুনিয়াতে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন সময় দুশ্চিন্তা পেরেশানিতে ভুগে। অনেক মানুষ দুশ্চিন্তার কারণে স্ট্রোক করে, আবার কেউ কেউ দুশ্চিন্তা পেরেশানি ডিপ্রেশনের কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা। সর্বদা হাস্যজ্জল চেহারা টিও মলিন হয়ে যায়। যেন আমাবস্যা রাত্রির অন্ধকার তার মাঝে প্রভাব বিস্তার করেছে। এই ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা পেতে আমাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অনেক উপায় বলে দিয়েছেন, আজ আমরা ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করব। সম্পূর্ণ আলোচনাটি পড়বেন আশা করি অনেক প্রশান্তি লাভ করবেন ।

Trust in Allah to prevent depression
somadanmedia.com

ডিপ্রেশন প্রতিরোধে আল্লাহ উপর ভরসা

যে ব্যক্তি এটা বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তাআলা সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান, তিনি সকল কিছু গ্রহণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয়। আর বান্দা নিজেকে নিজে পরিচালনার তুলনায় বান্দাকে আল্লাহ তাআলার পরিচালনা করা কল্যাণকর। কেননা তিনি বান্দার স্বার্থের ব্যাপারে স্বয়ং সেই বান্দা থেকে ভালো জানেন। সেই স্বার্থ অর্জন ও হাসিলের ক্ষেত্রে তিনি বান্দা থেকে অধিক সক্ষম। বান্দার জন্য তার নিজের চেয়ে বেশি কল্যাণকামী এবং তার উপর তার নিজের থেকে বেশি দয়ালু। তার নিজের তুলনায় বেশি অনুগ্রহকারী। 

সে যখন আরও জানবে যে, তার রবের আদেশের সামনে একটি পদেক্ষপ নিতেও সক্ষম নয় এবং রবের সিদ্ধান্ত থেকে এক কদম পিছিয়ে আসতেও সক্ষম নয়। কেননা তার রবের ফায়সালা ও সিদ্ধান্তকে কোন কিছুই এগিয়ে দিতে পারে না বা পেছাতে পারে না। তখন সে নিজে রবের সামনে সমর্পণ করবে এবং নিজের সকল বিষয় তাঁর কাছেই ন্যস্ত করবে। রবের সামনে এমনভাবে লুটিয়ে পড়বে যেভাবে দুর্বল গোলাম শক্তিশালী মনিবের সামনে লুটিয়ে পড়ে। সেই মনিব তার গোলামের সাথে যা ইচ্ছা করতে পারে এবং সেই গোলাম নিজের ব্যাপারে কোনো কিছু করার সামর্থ্য রাখে না। ঠিক তখনই সে, সমস্ত দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, দুঃখ ও আফসোস থেকে মুক্তি পাবে। তার সকল প্রয়োজন ও কল্যাণ হাসিলের ভার এমন সত্তা বহন করে নেবেন, যিনি কোনো বোঝাকে পরোয়া করেন না এবং কোনো কিছু তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা বা তাঁকে ক্লান্ত করতে পারে না। 

তখন তিনি বান্দার দায়িত্ব গ্রহণ করে নেন এবং বান্দাকে নিজের দয়া, অনুগ্রহ, রহমত ও বদান্যতা প্রদর্শন করেন বান্দার কোনো কষ্ট বা বিপদ ব্যতীত। এমনকি বান্দার কোনো মনোযোগ দেয়া ছাড়াই। কেননা সে তো একমাত্র রবকে তার সকল মনোযোগের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে। তাই তিনিও তার দুনিয়ার সকল প্রয়োজন ও স্বার্থ অর্জন থেকে তার মনোযোগকে সরিয়ে দিয়েছেন এবং তার অন্তরকে সেসব থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় তার জীবন কতই না পবিত্র ও তার অন্তর কতই না পরিশুদ্ধ এবং তার আনন্দ ও খুশি কতই না মহৎ।

নিজের পরিচালনার তার নিজ কাঁধে নেওয়া 

তবে যে ব্যক্তি নিজের পরিচালনার তার নিজ কাঁধে তুলে নেলে, নিজের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেবে এবং আল্লাহ তাআলার পরিবর্তে নিজের অবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করবে, তখন তিনি তাকে তার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেন, সে যেদিকে যেতে চায়, সেদিকে যেতে দেবেন। ফলে তার ওপর সকল পেরেশানি, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, ভয়, ক্লান্তি, দুর্দশা চেপে বসবে; মন বিষণ্ণতায় ভরে উঠবে এবং অবস্থা খারাপ হতে থাকবে; তার অন্তর পরিশুদ্ধ হবে না, তার কাজগুলো ভালো হবে না; মনে কোনো আশা জাগ্রত হবে না; প্রশান্তি অর্জন করতে পারবে না; কোনো স্বাদ ভোগ করবে না; বরং কখনো হয়তো তার আনন্দ-ফুর্তি ও চক্ষু শীতলকারী বিষয় থেকে বাধা দেওয়া হবে। তখন সে দুনিয়ার পেছনে পশুর মতো খেটে যাবে; কিন্তু তা থেকে কোনো আশার আলো পাবে না এবং ভবিষ্যতের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারবে না।

অন্তর যখন আল্লাহর ওপর ভরসা করবে

অন্তর যখন আল্লাহর ওপর ভরসা ও তাওয়াক্কুল করবে, কোনো কল্পনার সামনে নত হবে না, কোনো খারাপ দুশ্চিন্তা তার ওপর ভর করবে না, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখবে এবং তাঁর দয়ার প্রতি আগ্রহী হবে, তখন এর মাধ্যমে তার সকল দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হয়ে যাবে; তার অনেক মানসিক ও শারীরিক রোগ সুস্থ হয়ে যাবে; অন্তরের মধ্যে এমন শক্তি, প্রফুল্লতা ও খুশি অর্জিত হবে, যা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। সে আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দায় পরিণত হবে, যাকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং অন্তরের সাথে মুজাহাদার তাওফিক দিয়েছেন, যাতে অন্তরকে শক্তিশালী করার ও দুশ্চিন্তা দূর করার সকল উপকারী মাধ্যম অর্জন করতে পারে।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

অর্থ: আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। ।

অর্থাৎ, তার দ্বীন ও দুনিয়ার সকল চিন্তার সমাধানের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ প্রণীত আল-ফাওয়ায়িদ: ২০৯)

তাওয়াক্কুলকারী বান্দা শক্তিশালী অন্তরের অধিকারী হয়

সুতরাং আল্লাহ তাআলার ওপর তাওয়াক্কুলকারী বান্দা এমন শক্তিশালী অন্তরের অধিকারী, যার ওপর কোনো দুশ্চিন্তা প্রভাব ফেলতে পারে না এবং কোনো ঘটনা তাকে পেরেশান করতে পারে না। কেননা, সে জানে যে, এগুলে। হল দুর্বল অন্তরের ফসল এবং এমন ভয় ও শঙ্কা, যার কোনো বাস্তবতা নেই। সেই সাথে সে এটাও বিশ্বাস করে যে, যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার পরিপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। 

ফলে সে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবে এবং তার ওয়াদার ব্যাপারে আশ্বস্ত হবে। তখন তার দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হয়ে যাবে; তার সংকীর্ণতা প্রাচুর্যতায় ভরে যাবে; দুঃখ আনন্দে পালটে যাবে এবং তার ভয় নিরাপত্তায় পরিণত হবে। তাই আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে চাই যে, তিনি যেন আমাদের অন্তরের শক্তি ও পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুলের ওপর অবিচলতা দান করেন, যে অন্তরের শক্তি ও পূর্ণ তাওয়াক্কুলের অধিকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা সকল কল্যাণের জিম্মাদার হয়েছেন, যাদের থেকে সকল অকল্যাণ ও ক্ষতিকে দূর করে দিয়েছেন। 

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment