আমাদের অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগে আমরা তো আমাদের দৃষ্টি সংযুক্ত রাখতে চাই, কিন্তু কিভাবে সংযত রাখবো বা সংযত রাখার উপায় কি। আজ সমাধান মিডিয়া দৃষ্টি সংযত রাখার ১৫ টি উপায় আলোচনা করবে, আমরা ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ উপায় গুলো পড়ে সেগুলোকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে নিজের দৃষ্টিকে অবনত রেখে চিরসুখের জান্নাত লাভ অর্জন করার জন্য সচেষ্ট থাকব ইনশাআল্লাহ।
১, আল্লাহর সাহায্য কামনা,
আল্লাহ ছাড়া বান্দার কোনো শক্তি বা সামর্থ্য নেই। তাই বান্দার উচিত আত্মনির্ভরতা পরিহার করে আল্লাহমুখী হওয়া, আল্লাহর কাছে শক্তি ও সামর্থ্য কামনার পাশাপাশি এই কামনা করা যেন তিনি দৃষ্টি সংযত রাখতে সাহায্য করেন। আর আল্লাহ সহজ করে দিলে কোনোকিছু আর কষ্টসাধ্য হয় না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিছু চাইলে, আল্লাহর কাছেই চাও; কারো কাছে সাহায্য কামনা করলে, আল্লাহর কাছেই কামনা করো। তিরমিযি শরিফ হাদীসে নং ২৫১৬
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের কথা স্মরণ করুন, যখন তিনি বলেছিলেন, কুরআনের ভাষায়, যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার ওপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। অতঃপর তার পালনকর্তা তার দুআ কবুল করে নিলেন। অতঃপর তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৩৩, ৩৪
২, আল্লাহর ভয় অন্তরে সর্বদা জারি রাখা,
বান্দা যখন এই কথা মনে রাখবে যে, আল্লাহ তার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন; তিনি চোখের খেয়ানত, মনের লুকোচুরি সবই জানেন, তিনি গোপন বিষয়াবলি সম্পর্কেও খুব ভালো করে জানেন। তিনি বান্দার প্রতিটি আচরণ ও উচ্চারণের খবর রাখেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই বান্দা আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের অপব্যবহার এবং তাঁর অবাধ্যতায় লিপ্ত হতে লজ্জাবোধ করবে।
৩, বিবাহ করে নেওয়া অথবা লাগাতার রোজা পালন করা
বিবাহ করে নেওয়া কিংবা লাগাতার রোজা পালন করা সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে যুবক সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে ফেলে। কেননা, বিয়ে চোখ ও যৌনাঙ্গ সংযত রাখার ক্ষেত্রে অধিক কার্যকরী। আর যে (বিয়ের) সক্ষমতা না রাখবে, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, তা-ই তার যৌন উত্তেজনা দমিয়ে রাখবে। বুখারী শরীফ হাদীছ নং ৫০৬৬
৪, দৃষ্টি সংযত রাখার লাভ এবং ক্ষতি অবগত হওয়া
কাজের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে জানা থাকলে যেমন সে-কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং কষ্টসাধ্য হলেও তা সহজ মনে হয়, তেমনি আখেরাতের কাজের বেলায়ও একই কথা। আখিরাতের কাজের লাভ এবং ক্ষতি জানতে হবে। দৃষ্টি সংযত রাখার লাভ ক্ষতি আমাদের জানতে হবে।
৫, নজর হেফাজত না রাখার ক্ষতি জানা,
নারীদের প্রতি অবাধ দৃষ্টিপাতের ফলে যে অনিষ্টের মুখোমুখি হতে হয়, নিজের চরিত্র ও আমলের যে অধঃপতন হয়, সে সম্পর্কে অবগত থাকা। এই জিনিসের প্রতি চিন্তা করার মাধ্যমে আশা করা যায় আমাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে।
৬, পরকালের নিয়ে চিন্তাভাবনা করা,
মৃত্যুর ফেরেশতার উপস্থিতি থেকে নিয়ে কবর, মুনকার-নাকিরের সুওয়াল- জওয়াব, জান্নাত-জাহান্নামে প্রবেশসহ পরকালের বিভিন্ন ধাপে নিজেকে কল্পনা করা। কারণ, পরকালের ভাবনা মানুষকে আল্লাহমুখী ও দুনিয়াবিমুখ করে। কাজে দৃষ্টির সংযত রাখতে পরকালের চিন্তাভাবনা করা খুবই জরুরী ব্যাপার।
৭,সৎসঙ্গ লাভ করা, অসৎসঙ্গ পরিহার করা,
সৎসঙ্গ লাভ করা অসৎ সঙ্গে পরিহার করা, মানুষ নিজের অজান্তে তার সঙ্গীর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ-কারণে দেখবেন, আপনার মুমিন বন্ধু আপনাকে নজর হেফাজতের ব্যাপারে সাহায্য করছে। আর দুষ্ট বন্ধু আপনাকে পাপাচারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবাদ বাক্যে বলা হয় সৎসঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
৮,সর্বদা কুরআন কারিম সঙ্গে রাখা
সর্বদা কুরআনে কারীম সঙ্গে রাখুন। যখনই সুযোগ হয়, কুরআন তিলাওয়াত করুন। এতে আপনার নজর হেফাজতে থাকবে। তাছাড়া কুরআন সঙ্গে থাকার বরকতে যেকোনো ধরনের গোনাহ করা থেকে বিরত রাখবে ইনশাআল্লাহ।
৯, আল্লাহর জিকিরের পাবন্দি করা,
জবানে সর্বদা আল্লাহর জিকির জারি রাখুন। কারণ, জিকিরের দ্বারা আপনার দৃষ্টি অনায়াসে সংযত থাকবে। জিকিরে মাশগুল থাকলে আপনার হৃদয় আল্লাহর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এতে করে আশেপাশে থাকা নারীদের দিকে আপনার চোখ পড়বেই না; ফিতনায় পড়া তো অনেক দূরের কথা। এবং জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসায় অন্তর তরতাজা থাকে। এমন তোর অত্যাচার অন্তর দিয়ে গুনাহ করা যায় না।
১০, নারীদের চলাফেরার স্থানসমূহ এড়িয়ে চলা,
নারীদের চলাফেরার স্থানসমূহ থেকে এড়িয়ে চলা, কেননা এসব স্থান থেকেই মূলত ফিতনার সূচনা হয়। আসলে, মানুষ নিজেকে সরাসরি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে চায় না। তাই শয়তান তাকে কৌশলে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। নারী ও পুরুষ প্রাকৃতিকভাবেই একে-অপরের আকর্ষিত হয়। এ আকর্ষণের কোনো শেষ নেই, কোনো সীমা নেই। নারীদের প্রতি আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে শয়তান ওইসব স্থানে যাওয়া এবং অবস্থান করার প্রতি পুরুষের মনে আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে।
এরপর ধাপে ধাপে তাকে ফিতনায় ফেলে। এজন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন- হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।সুরা নুর, আয়াত : ২১
১১, সর্বাবস্থায় দ্বীনের দাওয়াতের ফিকির রাখা,
গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে যখন একজন মুসলিম চিন্তায় মগ্ন থাকবে, তখন ফালতু কিছু নিয়ে তার চিন্তাভাবনার সময় থাকবে না। আর কীভাবে বিশ্বের সকল মানুষকে আল্লাহর অনুগত বান্দায় রূপান্তরিত করা যায় ,এরচেয়ে বড় ফিকির আর কী হতে পারে। অতএ ব আমাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে সর্বদায় আমরা দ্বীনের দাওয়াতের ফিকির করব মানুষকে ঈমানদার এবং আমলদার বানানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব।
১২, নিজেকে নিজেই পরীক্ষা করা
কিছু সময় একটি কাপড় দিয়ে আপনার চোখদুটো বেঁধে রাখুন, এবং ধরে নিন, আল্লাহ আপনার দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিয়েছেন। দেখুন কতক্ষণ থাকা যায়; তারপর বাঁধন খুলে ফেলুন। আশা করি এই একটু সময়েই আপনি এই মহান নিয়ামতের কদর অনুভব করতে সক্ষম হবেন। সুতরাং আসুন, আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত তাঁর অবাধ্যতায় ব্যবহার না করার ব্যাপারে আমরা আবারও প্রতিজ্ঞ হই।
১৩, তাওবা ও ইস্তেগফার
নারীদের থেকে দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপারে আমরা তাওবা করতে পারি। নজরের হেফাজতের ওপর আল্লাহ তাআলার সঙ্গে আবারও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারি। তবে অবশ্যই আমাদের এবারের প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
১৪, জান্নাতে মুমিনদের প্রতিদান নিয়ে ভাবা,
আল্লাহ তাআলা জান্নাতে আপনাকে যতগুলো নিয়ামত দিয়ে সম্মানিত করবেন, তার অন্যতম একটি হলো আয়তলোচনা হুরেরা। তাদের গুণ বর্ণনা করে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতি কোনো রমণী যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও জমিনের মাঝের সবকিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর চেয়ে উত্তম।বুখারি, হাদিস নং ২৭৯৬
জান্নাতি হুরদের সৌন্দর্যের সাথে দুনিয়ার নারীদের কি তুলনা চলতে পারে। দুনিয়ার নারীদের দিকে অবৈধ দৃষ্টিপাত করে জান্নাতি হুরদের থেকে বঞ্চিত হওয়া কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে!?
১৫, নিজের সাথে সংগ্রাম করা,
দৃষ্টি সংযত রাখার জন্য নিজে নিজে অভ্যাস করার চেষ্টা করা এবং এ কাজে ধৈর্যশীল হওয়া ও হাল ছেড়ে না দেওয়া। আল্লাহ বলেন, যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়নদের সাথে আছেন। সুরা আনকাবুত আয়াত-৬৯
উপসংহার
উপরন্তু লক্ষণীয় বিষয় এই যে, প্রবৃত্তির চাহিদার কোনো সীমা রেখা নেই। তাইতো একজন সুন্দরী নারীকে দেখার পর আবার এমন এক নারীর দিকে চোখ পড়ে, যাকে আরও বেশি সুন্দরী মনে হয়। আর এভাবেই চোখের ক্ষুধা দূর করার জন্য চেষ্টা চলতে থাকে, কিন্তু তার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। উপরোক্ত উপায় গুলো সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রেখে আমাদের ওপর আবশ্যক হলো, পরনারীদের থেকে নজর হেফাজত করা। তা ছাড়া নারী তো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মুমিনের একমাত্র উদ্দেশ্য তো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা এবং জান্নাতে প্রবেশ করা। চলুন আমরা এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে, আমরা আমাদের দৃষ্টিকে সংযত রেখে আখেরাতের চির সুখের জান্নাত লাভ করার জন্য চেষ্টা করব।