তাওবা করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া

তাওবা করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া, এই আর্টিকেল টি পাঠ করলে আশা করি তাওবা করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আর কোন ব‌ই কিংবা আর্টিকেল পাঠ করতে হবে না।

তাওবা অর্থ:- প্রত্যাবর্তন, অনুশোচনা, অনুতাপ, ক্ষমা। শরীয়তের পরিভাষায় তাওবা বলা হয়:- অতীত পাপ কাজ থেকে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে পাপ কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। সূরা তাহরীম এর ৮ নং আয়াতে তাওবার সাথে ‘‘নাসুহা,, শব্দ যুক্ত করা হয়েছে যার অর্থ হলো খাঁটি। তাওবাতুন নাসুহা এর অর্থ হয় খাঁটি তওবা। এই খাঁটি তওবা করার কিছু নিয় এবং শর্ত রয়েছে আজকে সেই সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

তাওবা করার সঠিক নিয়ম ও দোয়া

তাওবা করার সঠিক নিয়ম

আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তিগণ বলে থাকেন যে, পরিপূর্ণ তাওবা দুই ভাগে বিভক্ত। এক, সংক্ষিপ্ত তওবা। দুই, পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে সবিস্তারে সবকিছু থেকে তওবা করা। সংক্ষিপ্ত তওবার নিয়ম হচ্ছে: মানুষ একবারে ধ্যানের সাথে বসে নিজের জীবনের সব গুনাহকে স্মরণ করে সংক্ষিপ্তভাবে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবে। এবং তার সঠিক নিয়ম হলো:- প্রথমে তাওবার নিয়তে দু'রাকাত নামাজ পড়বে। এরপর আল্লাহর দরবারে খুব কান্নাকাটির সাথে এক একটা গুনাহকে স্মরণ করে এভাবে দোয়া করবে, হে আল্লাহ এই পর্যন্ত আমার যে সমস্ত গুনাহ হয়েছে। প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে, তোমার হক সম্পর্কে হোক বা বান্দার হক সম্পর্কে, ছোট হোক বা বড়, আমি সবগুলো থেকে ক্ষমা চাচ্ছি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

বিস্তারিতভাবে তাওবা

উপরে যে সংক্ষিপ্ত তওবার আলোচনা হল: এর উদ্দেশ্য এই নয় যে,এখন গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ পাক সাফ হয়েছে। এখন আর কোন দায়িত্ব নেই। বরং এরপর বিস্তারিতভাবে সব গুনাহ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে।

এর সঠিক পদ্ধতি হলো, এই সমস্ত গুনাহের ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয় সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ গুলো আদায় না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার তওবা সম্পূর্ণ হবে না।

ক্ষতিপূরণ দুই ধরনের। এক,বান্দর হকের ক্ষতিপূরণ। দুই, আল্লাহর হকের ক্ষতিপূরণ। 

আল্লাহর হকের ক্ষতিপূরণ

 ফরজ নামাজ সঠিক সময় আদায় করা আল্লাহর হক। যদি কেউ ফরজ নামাজ কাজা করে থাকে তাহলে তার জন্য শুধু তওবা যথেষ্ট নয়। শুধু তওবা করে বসে গেলেই হবে না। বরং জীবনের শুরুলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত যত নামাজ কাজা হয়েছে এর সমস্ত কাজা নামাজ আদায় করে নিতে হবে। কারণ এই সমস্ত গুনাহের ক্ষতিপূরণ দেওয়া মানুষের ক্ষমতার ভিতরে। এবং সংশোধনের প্রথম স্তর হচ্ছে পরিপূর্ণ তাওবা। এগুলো আদায় না করলে তওবা পরিপূর্ণ হবে না এবং সংশোধনের কোন পথেই খুলবে না।

উমরী কাজা আদায়

বালেগ হওয়ার পর থেকে নিয়ে জীবনের যত নামাজ কাজা হয়েছে এই নামাজগুলোকে হিসাব করে আদায় করবে। যদি সম্পূর্ণভাবে হিসাব করা সম্ভব হয় তাহলে তো ভালোই। আর যদি পরিপূর্ণভাবে হিসাব করা সম্ভব না হয় তাহলে প্রবল ধারণার উপর ভিত্তি করে সর্বসংখ্যক কাজা কে নির্ধারণ করবে। যেন জীবনের কাজার চেয়ে কম না হয়ে যায়। কাজা করবে শুধু ফজরের দুই রাকাত, যোহরের চার রাকাত, আসরের চার রাকাত, মাগরিবের তিন রাকাত, এশার চার রাকাত ও তিন রাকাত বেতের। কোন সুন্নত নামাজের কাজা করতে হবে না। এবং তার পদ্ধতি হলো প্রত্যেক ওয়াক্তিয়া ফরজ নামাজের পর সাথে সাথে এক ওয়াক্ত কাজা আদায় করে নিবেন, আর যদি সময় থাকে তবে একের অধিক আদায় করা যেতে পারে। যত তাড়াতাড়ি নামাজগুলো শেষ করা যায় ততই উত্তম। নামাজের পর যে নফল নামাজ পড়ার নিয়ম আছে সেই নফলের পরিবর্তে কাজা নামাজ আদায় করবেন। ফজর এবং আসরের পর নফল পড়ার নিয়ম নেই কিন্তু কাজা আদায় করা জায়েজ আছে। কাজা নামাজ আদায়ের যেহেতু আল্লাহতালা এত সুযোগ দিয়েছেন তাই আমাদের সেই সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত। এবং যতগুলো নামাজ আদায় করা হয় তা কাগজে লিখে রাখবেন যে এত ওয়াক্ত আদায় হয়েছে আর এত ওয়াক্ত বাকি আছে।

কাজা রোজার হিসাব ও তার ওসীয়ত

এমনিভাবে নামাজের ন্যায় কাজা রোযার‌ও হিসাব লাগাতে হবে অর্থাৎ বালেগ হওয়ার পর থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত কোন রোজা ছুটেছে কিনা। যদি না ছুটে থাকে তবে তো বেশ ভালো কথা। আর যদি ছুটে থাকে তবে তা হিসাব করে নিজের কাছে একটি ওছিয়ত নামা লিখে রাখবেন যে, আমার উপর রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত এতগুলো রোজা কাজা হয়েছে। আমি আজ থেকে এগুলোর কাজা আরম্ভ করলাম আমি যদি আমার জীবনে এগুলো আদায় করে যেতে না পারি তবে যেন আমার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে এর কাফফারা আদায় করে দেওয়া হয়। এ ওসিয়ত নামা লিখার পর যতগুলো রোজা আদায় করা হয় তা কাগজে লিখে রাখবে এবং কতগুলো বাকি থাকে তাও উল্লেখ করবে যেন হিসাব করা সহজ হয়।

যাকাতের হিসাব ও তার ওসীয়ত

অতঃপর যাকাতেরও হিসাব লাগাবেন যে, আমার বালেগ হওয়ার পর থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত কত বছর নির্ধারিত যাকাত আদায় ব্যতীত অতিবাহিত হয়েছে। প্রত্যেক বছরের যাকাত আলাদা আলাদা হিসাব করে আদায় করে দিবেন। যদি সঠিকভাবে স্মরণ না থাকে তবে খুব সতর্কতার সাথে এমন ভাবে অনুমান করবেন যাতে কিছু বেশি আদায় হয়। কোনভাবেই যেন কম না হয়। অতঃপর ওসিয়ত নামাই লিখে রাখবেন যে আমি এতটুকু আদায় করতে পেরেছি, আর এ পরিমাণ আদায় করতে পারিনি। যেন হিসেব স্পষ্ট থাকে। 

জীবনে একবার ফরজ হয়ে থাকে। যদি আপনার হজ ফরজ হয়ে থাকে তাহলে খুব দ্রুত তা আদায়ের জন্য চিন্তা-ভাবনা করবেন।

বান্দর হকের ক্ষতিপূরণ

বান্দর হোক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। কোন ব্যক্তি যদি কারো হক নষ্ট করে থাকে। আর ওই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তাকে মাফ না করে তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহতালা তাকে মাফ করবেন না। সুতরাং জীবনের শুরুলগ্ন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যাদের সাথে সম্পর্ক হয়েছে, লেনদেন আছে, ওঠাবসা আছে এবং যত বন্ধুবান্ধব আছে সবার সাথে মুখে অথবা পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের প্রাপ্য হক হকের কথা জানিয়ে দিন। যদি কারো মালের হক আপনার উপর থেকে থাকে তবে তাও আদায় করে দিন। আর যদি জানের হক থেকে থাকে যেমন:- কারো গীবত করেছেন কাউকে গালি দিয়েছেন বা অন্য কোনভাবে কষ্ট দিয়েছেন তাহলে এগুলো থেকেও ক্ষমা চেয়ে নিবেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যদি কোন ব্যক্তি অন্য কারো উপর জুলুম করে থাকে সে যেন মালের উপর হোক বা জানের উপর আর যেন সে জালেম মাজলুমের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয় অথবা সোনা-রুপা দিয়ে ঐদিন আসার পূর্বে ক্ষমা চেয়ে নেয় যেদিন শোনার কথা থাকবে না। বা সোনা রূপার কোন মূল্যই থাকবে না।

যদি বান্দার হক থেকে যায়?

একথা তো সবারই জানা আছে যে আল্লাহর হক তওবা করার দ্বারা মাফ হতে পারে কিন্তু বান্দার হক ততক্ষণ পর্যন্ত মাফ হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সে তার হক প্রাপক কে আদায় করে, কিংবা তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে না নিবে। আর যদি এমন কোন ব্যক্তির হোক সে নষ্ট করে থাকে যাকে সে এখন খুঁজে পাচ্ছে না। তাহলে ঐ ব্যক্তি যে পরিমাণ টাকা-পয়সা পায়, সে পরিমাণ টাকা পয়সা ঐ ব্যক্তির নামে সদকা করে দিবে। এতে আশা করা যায় ওই ব্যক্তি তার আমলনামায় সদকা করার সওয়াব দেখে কেয়ামতের ময়দানে তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

তাওবার শর্ত সমূহ

  • এক, কৃত গুনাহের উপর লজ্জিত হওয়া।
  • দুই, এই গুনার কাজকে ছেড়ে দেওয়া।
  • তিন, ভবিষ্যতে এই কোনার কাজ না করার ধীর-সংকল্প করা।
  • চার, আল্লাহর হক কিংবা বান্দার হক খুজে খুজে আদায় করে দেওয়া।
  • পাঁচ, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাওয়া।

তাওবার দোয়া

তাওবার দোয়া

বাংলা উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিউ ওয়াতুবু ইলাইহি ওয়া লা- হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি আলিয়িল আযিম।

অনুবাদ: হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট সমস্ত গুনাহ থেকে তওবা করেছি এবং আপনার নিকট প্রত্যাবর্তন করেছি। আপনার তাওফিক ব্যতীত কোন গুনা থেকে বাঁচার উপায় নেই এবং কোন নেক কাজ করার ক্ষমতা নেই। আপনি ক্ষমতাবান এবং মহান।

উপসংহার

হে প্রিয় পাঠক বন্ধু আমার চলুন আজ থেকে আমরা জীবনের সকল পাপ পঙ্কিলতা মুছে ফেলে, একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে, তাকে রাজি খুশি করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সঠিকভাবে তার রাস্তায় তওবার মাধ্যমে ফিরে আসার তৌফিক দান করুক....

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment