আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন সবাই আশা করি ভাল আছেন। সমাধান মিডিয়ার পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনি যদি যুক্তির আলোকে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার রহস্য জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। কেননা পবিত্র কোরআন এবং হাদীস শরীফে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার রয়েছে বহু তাকিদ ও গুরুত্ব। সুতরাং কুরআন ও হাদীস মেনে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা ব্যতিত কোন উপায় নাই চাই বুঝে কিংবা যুক্তিতে আসুক বা না আসুক। তবে কুরআন ও হাদীস যুক্তি বিরোধী না বিধায় আজ যুক্তির নিরিখে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করার রহস্য ও উপকারিতা বনর্না করবো ইনশাআল্লাহ।
জামাআতে নামায পড়ার হিকমত সম্পর্কে শ্রদ্ধেয় আলিমগণ বহু কিছু লিখেছেন । কিন্তু আমার সীমিত দৃষ্টি যতটুকু পৌঁছেছে তাতে হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবীর সার্বিক ও সূক্ষ্ম তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা অপেক্ষা উৎকৃষ্টতম অন্য কারও বক্তব্য আমার দৃষ্টিগোচর হয় নি। যদিও হযরত শাহ সাহেব (রহ.)-এর ভাষায় সে আলোচনা শুনতে পারলে পাঠকবৃন্দ অধিক স্বাদ আস্বাদন করতে পারতেন। কিন্তু আমি বিষয়বস্তু সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে তার বক্তব্যের সারমর্ম এখানে বর্ণনা করছি।
জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার রহস্য ও উপকারিতা সমূহ।
১. কোন ইবাদতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সেটাকে সমাজে ব্যাপক প্রচলন দান করার চেয়ে অধিক কার্যকর কোন পন্থা নেই। ফলে সেটি এমন এক জরুরী ইবাদতে পরিণত হয়, যা বর্জন করা কোন চিরাচরিত অভ্যাস বর্জন করার ন্যায় দুষ্কর হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, নামাযের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্ববহ কোন ইবাদত নেই, যার জন্য এ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
২. ধর্মের (অনুসারীদের) মধ্যে সবধরনের লোক থাকে। অজ্ঞ লোকও থাকে, আলিমও থাকে । সুতরাং এটা অধিক যুক্তিসঙ্গত যে, সকলে এক জায়গায় মিলিত হয়ে পরস্পরের সামনে এ ইবাদত আদায় করবে। কারও কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে অন্য ব্যক্তি তা সংশোধন করে দেবে। যেন আল্লাহ তা'আলার ইবাদত একটি অলংকার বিশেষ। পরীক্ষাকারীরা তা পরীক্ষা করে দেখে, তাতে কোন দোষ থাকলে বলে দেয় এবং যা ভাল হয় তা পছন্দ করে। অতএব, জামাআত হল নামাযকে পূর্ণাঙ্গ করার একটি উৎকৃষ্ট পন্থা।
৩. যারা বে-নামাযী তাদের পরিচয়ও প্রকাশ হয়ে পড়বে এতে তাদেরকে ওয়াজ ও নসীহত করার সুযোগ হবে।
৪. কতিপয় মুসলমানের মিলিতভাবে আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর নিকট দু'আ প্রার্থনা করা আল্লাহর রহমত নাযিল হওয়ার ও ইবাদত কবুল হওয়ার ব্যাপারে এক আশ্চর্যজনক বিশেষত্ব রাখে।
৫. এ উম্মতের দ্বারা আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশ্য হল, তাঁর বাণীকে সমুন্নত করা ও কুফরকে অধঃপতিত করা এবং পৃথিবীর বুকে কোন ধর্ম যেন ইসলামের মুকাবিলায় প্রবল না থাকে। এটা তখনই সম্ভব হতে পারে, যখন এই নিয়ম নির্ধারিত হবে যে, সাধারণ-অসাধারণ, মুকীম মুসাফির, ছোট-বড় সকল মুসলমান নিজেদের কোন বড় ও প্রসিদ্ধ ইবাদতের জন্য এক স্থানে সমবেত হবে এবং ইসলামের শান-শওকত প্রকাশ করবে। এ সকল যুক্তিতে শরীয়তের পূর্ণ দৃষ্টি জামাআতের দিকে নিবদ্ধ হয়েছে, তার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং জামাআত ত্যাগ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
৬. জামাআতে এ উপকারিতাও রয়েছে যে, সকল মুসলমান একে অপরের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে থাকবে। একে অপরের ব্যথা বেদনায় শরীক হতে পারবে। ফলে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব ও ঈমানী ভালবাসার পূর্ণ বিকাশ ও তার দৃঢ়তা সাধিত হবে। এটা শরীয়তের একটি বড় উদ্দেশ্য। কুরআন পাক ও হাদীস শরীফের বিভিন্ন স্থানে এর তাকীদ ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
আক্ষেপের বিষয় যে, আমাদের এ যুগে জামাআত তরক করা একটি সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জাহেলদের তো কথাই নেই, আমাদের অনেক (দীনী শিক্ষায় শিক্ষিতদেরকে এ অপরাধের শিকার দেখা যায়। দুঃখের বিষয় যে, তারা হাদীস পড়ে এবং তার অর্থ বুঝে, কিন্তু জামাআত সংক্রান্ত কঠোর হুশিয়ারী বাণীগুলো তাদের পাথরধিক কঠিন হৃদয়ে কোন প্রভাব ফেলে না। কিয়ামতের দিন মহা বিচারকের সামনে যখন সর্বপ্রথম নামাযের মোকদ্দমা পেশ করা হবে এবং যারা নামায আদায় করে নি বা আদায়ের ক্ষেত্রে ত্রুটি করেছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে তখন তারা কি জওয়াব দেবে ?
উপসংহার
প্রিয় দীনি ভাই আমার উপরে জামাতের কি রহস্য ও উপকারিতা উল্লেখিত হয়েছে তাও আবার যুক্তির আলোকে। এছাড়াও জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার বহু উপকারিতা রয়েছে। চলুন আমরা জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে করার তৌফিক দান করুক আমীন।