ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন বা উপসর্গ এবং প্রতিকার

এখন বর্ষাকাল চলমান, বিভিন্ন দিকে ডেঙ্গু জ্বরের আক্রমণ ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঝরে পড়ছে হাজারো মানুষের প্রাণ। এই মরণবেদী ডেঙ্গু জ্বর কেন হয়! কিভাবে হয়? তার উপসর্গ গুলো কি? এবং তার চিকিৎসা কি? একজন সচেতন নাগরিকের এই সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকা দরকার।আজকের এই আর্টিকেলটিতে এ বিষয়গুলো সবিস্তারে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন বা উপসর্গ এবং প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর হলো মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ, এর বাহক এডিস মশা। বর্ষাকালে এই মশার উৎপাত বিপুল আকারে বৃদ্ধি পায়। এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে এবং সেখান থেকে ঘটে এই মশার বংশবিস্তার। ফলে ডেঙ্গু জ্বরের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

এডিস মশা কখন কামড়ায়

এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলাতেই কামড়ায়, রাতের বেলাও কামড়াতে পারে। এ মশা কখন সক্রিয় থেকে কামরায় তা নিয়ে প্রাণিবিজ্ঞানী ও কৃত তথ্য বৃদ্ধির মধ্যে সামান্য মতপার্থক্য রয়েছে।

তবে সব থেকে বেশি প্রচলিত তথ্য হচ্ছে, দিনের বেলায় এডিস মশা কামড়ায়, ভোর বা সূর্য ওঠার তিন থেকে চার ঘন্টা পর, বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এ মশা সক্রিয় থাকে। প্রাণিবিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শুধু দিনের বেলায় নয় এডিস মশা সক্রিয় থাকে উজ্জ্বল আলোতে। কাজেই ঘর আলোকিত থাকলে রাতের বেলাও এই মশা আক্রমণ করতে পারে।

এডিস মশা ভরদুপুরের চেয়ে আলো-আধার পছন্দ করে বেশি। এ কারণেই ভোর বা সূর্যদের সময় ও গোধূলি বা সূর্যাস্তের সময় এসব মশার ক্ষেত্রে কামড়ানোর জন্য পছন্দসই সময়। রাতের বেলায় যে কৃত্রিম আলো আঁধারি তৈরি করা হয় তাতেও এডিস মশা আক্রমণ করতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন বা উপসর্গগুলো হলো

  • ঠান্ডা ও জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রির ফারেনহাইট পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে।
  • মাথা ব্যাথা
  • বমি বমি ভাব বা বমি হ‌ওয়া
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • চামড়ায় লালচে রঙের ফুসকুরি ওঠা।
  • শরীরে শীতলতা অনুভব
  • খোদা কমে যাওয়া
  •  কোষ্ঠকাঠিন্য 
  • স্বাদের পরিবর্তন
  •  হৃদস্পন্দনের হার ও রক্তচাপ কমে যাওয়া 
  •  পেশীতেও গাঁটে ব্যথা হওয়া।
  • ক্লান্তি লাগা। 
  • ডেঙ্গু জ্বর গুরুতর হওয়ার লক্ষণ
  • প্রচন্ড পেট ব্যথা 
  • প্রস্রাবে রক্ত বের হ‌ওয়া।
  • ক্রমাগত বমি হওয়া 
  • মলে বা বমিতে রক্ত আসা
  •  ত্বকের নিচে রক্তপাত 
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া।

কখন হাসপাতালে যেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ধরনের চিকিৎসা করা উপযোগী তা নির্ভর করে ডেঙ্গু জ্বরের ধরন বা ক্যাটাগরির উপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে এ, বি, সি, ।

প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে তারা শুধু জ্বর অনুভব করে। এ ধরনের ডেঙ্গু রোগই বেশি। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বাড়িতে বিশ্রাম নেয় তাদের জন্য ভালো।

দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যদি রোগীর পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা ,জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উত্তম।

তৃতীয় ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে ভয়ানক। তাই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা বাঞ্ছনীয়।এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রয়োজন বেঁধে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গুজ্বর হলে বাড়িতে কি কি করবেন

  1. পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
  2. তরল জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। যেমন ঢাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস, খাবার স্যালাইন, ইত্যাদি কিছু সময় পরপর পান করতে হবে।
  3. ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রত্যেক দিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। তবে কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে তাহলে প্যারাসিটামল খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তার পর ঔষধ খেতে হবে।
  4. ডেঙ্গু জুড়ে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন, পক্লোফেনাক,আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবেনা। ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত ব্যক্তি এ জাতীয় ঔষধ সেবন করলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বর কি ছুয়াচে রোগ 

ডেঙ্গু জ্বর কোন ছোঁয়াচে রোগ নয় কাজেই ডেঙ্গু জুড়ে রোগী আক্রান্ত রোগী কি স্পর্শ করলে এবং তার সাথে চলাফেরা করলে এক বিছানায় ঘুমালে তিনবার তার ব্যবহৃত কোন জিনিস ব্যবহার করলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আশায় কোন বাধা নেই। এবং তাকে আলাদা কোন স্থানে রাখার ও প্রয়োজন নেই।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা 

যেকোনো রোগী হোক না কেন যখন রোগের উপসর্গ দেখা যায় তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা গ্রহণ করলে কিংবা নিচ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে গেলে অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। ডেঙ্গু জুড়ে আক্রান্ত হলে কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রাথমিকভাবে বাসাতেই পরিচর্যা করা ভালো। ডেঙ্গু জ্বরের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করা প্রয়োজন।

১। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।

২। জ্বরের মাত্রা অনুযায়ী 6 থেকে 8 ঘণ্টা পরপর ঔষধ সেবন করতে হবে।

৩। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রত্যেক দিন চারটি ঔষধ নিতে পারবেন এর বেশি নিলে লিভারের সমস্যা সহ নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে।

৪। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে জ্বর কমাতে গিয়ে ব্যাথা নাশক ঔষধ ,অ্যাসপেরিন অথবা এনএসএআইডি গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার না করা প্রতি কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডাক্তাররা।

৫। জ্বর কমানোর জন্য গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছা উপকারী অথবা গোসল করাও এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

৬। ডেঙ্গু জুড়ে আক্রান্ত রোগীরা যেহেতু অধিকাংশ সময় ক্লান্ত থাকে তাই তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া জরুরী।

৭। লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ভারী কাজ অথবা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম না করা ভালো। তবে শুধু শুয়ে-বসে থাকাটাও ঠিক নয়। স্বাভাবিক হাঁটাচলা বা দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে।এই পরিস্থিতিতে বাসার বাইরে না যাওয়াই ভালো।

উপসংহার

উপরোক্ত আর্টিকেলটি অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে বিষয়বস্তু কালেক্ট করে সাজিয়ে লেখা হয়েছে। কাজেই সব ধরনের রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নিয়মিত আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে হবে। ইসলামের সকল বিধি বিধানগুলো যথা নিয়মে পালন করার চেষ্টা করতে হবে। যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর রাজি খুশি হয়ে সকল বিপদ আপদ দূর করে দেন।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق