আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন সবাই আশা করি ভালো আছেন। জামাতে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব ও ফজিলত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এবং যারা নামাজে অলসতা করে তাদের কঠিন পরিণতি ও বর্ণিত হয়েছে। তাহলে চলুন আমরা উপরের উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে কিছু হাদিস জেনে নেই। প্রথমেই জামাতের পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
জামাত কাকে বলে?
জামাত শব্দের অর্থ হলো দল, সম্মেলন, গোত্র, গোষ্ট। পরিভাষায় জামাত বলা হয় দুই বা ততোধিক মানুষ একত্র হয়ে তাদের মধ্যে একজন ইমাম এবং অবশিষ্ট গন মুক্তাদির হয়ে নামাজ আদায় করাকে। ইমাম ব্যতিত এক ব্যক্তি নামাযে অংশগ্রহণ করলে জামাত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। চাই ব্যক্তিটি পুরুষ হোক বা মহিলা গোলাম হোক বা আজাদ, বালেগ হোক বা নাবালেগ বাচ্চা। তবে জুমুআ ও উভয় ঈদের নামাযের জামাত তিন ব্যক্তি ব্যতীত ছহীহ হয় না । (দুররে মুখতার - ১/৫৫৮)
জামাত ছহীহ হওয়ার জন্য ফরজ নামায হওয়া জরুরী নয় । বরং যদি নফল নামাযও দু'ব্যক্তি এমনভাবে একে অন্যের অনুসারী হয়ে আদায় করে তবে জামাত বিবেচিত হবে। চাই ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে নফল আদায়কারী হোক অথবা শুধু মুক্তাদী নফল আদায় করুক। তবে জামাতে নফল নামায পড়ায় অভ্যস্ত হওয়া বা তিনের অধিক মুক্তাদী হওয়া মাকরূহ। (দুররে মুখতার খন্ড ১ পৃঃ ৮২৭)
নিম্নে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার ফজিলত উল্লেখ করা হলো:.
১, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ, বর্ণনা করেন যে, জামাতের সাথে নামায পড়ার দ্বারা একাকি নামাজ আদায় করার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশী সওয়ার হয় । (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৯৫)
২. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একাকী নামায পড়ার চেয়ে দু'জনে মিলে নামায পড়া উত্তম। আর দুজন ব্যাক্তির সাথে পড়া আরও উত্তম। আর জামাতে লোক যত বেশী হবে ততই আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় হবে।(মিশকাত শরীফ পৃঃ ৯৬)
৩. হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযি. বর্ণনা করেন যে, সাহাবাগণ ইচ্ছা করলেন, স্বীয় প্রাচীন গৃহসমূহ ত্যাগ করে (যেগুলি মাসজিদে নববী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ছিল) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে এসে বসবাস করতে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাধ্যাম তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে, তোমরা দূর থেকে পায়ে হেঁটে জমিনের যেই অংশ বিচরণ কর, তজ্জন্য কি সওয়াব মনে কর না?(মিশকাত শরীফ পুঃ ৯৮) ফায়দা: এর দ্বারা একথা প্রতীয়মান হয় যে, যেই ব্যক্তি যতদূর থেকে মাসজিদে এসে নামায আদায় করবে সে ততটুকু পরিমাণই সওয়াবের অধিকারী হবে।
৪,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, যতটুকু সময় নামাযের অপেক্ষায় অতিবাহিত হবে, তা নামায় বলে গন্য হবে । (মিশকাত শরীফ পৃঃ৯৫)
৫, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন ইশার নামাযে উপস্থিত সাহাবাদেরকে বললেন যে, লোকেরা নামায পড়ে শুয়ে পড়েছে, আর তোমাদের যে সময়টুকু নামাযের অপেক্ষায় অতিবাহিত হচ্ছে সে সময় নামাযের মধ্যে গণ্য হবে । (বুখারী শরীফ)
৬, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত বুরাইদা আসলামী রাখি, বর্ণনা করেন যে, ঐ সকল লোকদেরকে সুসংবাদ দাও যারা অন্ধকার রাতে জামাতে নামায পড়ার জন্য মাসজিদে গমন করে, এই বিষয়ের সুসংবাদ রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন ঐ সকল লোকদের জন্য পূর্ণ আলো হবে।(মিশকাত শরীফ)
৭, হযরত উসমান রাঃ, বর্ণনা করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এশার নামায জামাতের সাথে আদায় করবে সে ব্যক্তি অর্ধ রাত ইবাদত করার সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এশা ও ফজর নামায জামাতের সাথে আদায় করবে সে পূর্ণ-রাত ইবাদাত করার সওয়াব পাবে। (মিশকাত শরীফ)
৪০ দিন জামাতে নামাজের ফজিলত
৮, হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি জামাতে নামাজ আদায় করবে এবং তাকবীরে উলা তথা প্রথম তাকবীরে ও পাবে তার জন্য দুইটি মুক্তির ঘোষণা লেখা রয়েছে এক, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, দুই, নেফাক থেকে মুক্তি। (তিরমিযি শরিফ হাদিস নং ২৪১)
জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার পাঁচ পুরস্কার
পরিণত আছে যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করিবে আল্লাহ তাআলা তাকে পাঁচটি পুরস্কার নিয়ে ভূষিত করবেন।
এক, আল্লাহ তাআলা তার নিজেকে অভাব দূর করে দিবেন।
দুই, কবরের আজাব থেকে মুক্তি দিবেন।
তিন, ডান হাতে আমলনামা দিবেন।
চার, বিজলির ন্যায় পুলসিরাত পার করবেন।
পাঁচ, বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
জামায়াতের সাথে নামাজ না আদায় করার পরিনতি
১, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে আমার মন এ কথা চায় যে, কাউকে হুকুম দেই লাকড়ী একত্রিত করার জন্য আর পরে আগযানের হুকুম দেই, অতপর অন্য কাউকে ইমামতির জন্য বলি আর আমি ঐ সকল লোকদের গৃহে গমন করি যারা এশার জামাতে আসেনি, আর তাদের গৃহগুলি জ্বালিয়ে দেই ।(মিশকাত শরীফ)
২, এক বর্ণনায় রয়েছে যে, যদি ছোট শিশু ও মহিলাদের প্রতি লক্ষ্য রাখার প্রয়োজন না হত তবে আমি এশার নামাযে মশগুল হতাম আর খাদেমদেরকে এ হুকুম দিতাম যে, তারা যেন জামাত ত্যাগকারীর গৃহের আসবাব ও মালসম্পদগুলো তাদেরকে সহ জ্বালিয়ে দেয়। (মুসলিম শরীফ)
ইশার নামাযকে এই হাদীসে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হল এ সময়টি হল ঘুমাবার সময় আর সাধারণত এ সময় সকল মানুষ গৃহে অবস্থান করে।
৩, হযরত আবু দারদা রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, যদি কোন বস্তি বা মরুভূমিতে তিনজন মুসলমান থাকে অথচ তারা জামাতের সাথে নামায আদায় না করে, তাহলে নিঃসন্দেহে শয়তান তাদের উপর বিজয় লাভ করবে। অতএব, হে আবু দারদা। তুমি নিজের উপর জামাতকে আবশ্যক মনে কর। স্বরণ রেখ, ব্যাঘ্র (শয়তান) ঐ বকরি (মানুষ) কে থাবা দেয় যে নিজ জামাত থেকে পৃথক থাকে। (মিশকাত শরীফ)
৪, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে জামাতে উপস্থিত না হয়। আর তার কোন প্রকার ওজর না থাকে, এমতাবস্থায় যে নামায সে একাকী পড়েছে তা কবুল হবে না। (পূর্ণ সওয়াব হবে না তবে নামায হবে) সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন সে ওজার কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ভয় অথবা অসুস্থতা। এ হাদীসে ভয় ও অসুস্থতার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়নি। বহু হাদীসে তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
৫, হযরত মিহজান রাঃ বলেন যে, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলাম। ইতিমধ্যে আযান হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়তে আরম্ভ করলেন আর আমি নিজ স্থানে বসে রইলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায শেষ করে বললেন, হে মিহজান! তুমি কেন জামাতের সাথে নামায পড়নি? তুমি কি মুসলমান নও? আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মুসলমান । কিন্তু আমি বাড়ী থেকে নামায পড়ে এসেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন মাসজিদে এসে জামাত হতে দেখবে তখন জামাতে শরীক হয়ে যাবে যদিও নামায পড়ে আস। (কিন্তু ফজর, আসর ও মাগরিব এই তিন নামায একাকী আদায় করলে জামাতে অংশগ্রহণ করবে না ।)
গভীরভাবে লক্ষ্য করার বিষয় হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রাণপ্রিয় সাহাবী মিহজান রাখি কে জামাতের সাথে নামায় না পড়ার কারণে কত কঠোর ও অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলেছেন। বলেছেন তুমি কি মুসলমান নও!
জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করার বিধান
জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কায়া বা ওয়াজিব। যেহেতু জামাতে নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কাজেই কোন ব্যক্তি যদি বিনা অজুড়ে জামাত ছেড়ে দেওয়ার অভ্যস্ত হয়ে যায় তাহলে সে ফাসেক হবে এবং কেয়ামতের ময়দানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবে। এবং জামাত যেহেতু ওয়াজিব তাই কোন ব্যক্তি যদি বিনা ওজুরের জামাত ছেড়ে দেয় তাহলে সে ফাসেক এবং গুনাগার হবে।
উপসংহার
উপযুক্ত আলোচনার মাধ্যমে জামাতের পরিচয় ও জামাতে নামাজ আদায় করার বিধান এবং ফজিলত ও জামাত তরক করার পরিণতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। এখন সকলের জন্য এই দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে আমৃত্যু জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি করার জন্য রইল অসংখ্য ধন্যবাদ। নতুন নতুন আর্টিকেল ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।