তালাকের পরিচয় ও প্রকারভেদ

আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন সবাই আশা করি ভালো আছেন।আজ সমাধান মিডিয়া তালাকের পরিচয় ও প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করবে ইনশাল্লাহ। কেননা বর্তমান সময়ে মানুষ যে সকল সমস্যার সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হয় তাহলো তালাক। এখন এমন এক কাল চলমান যার মধ্যে সেকেন্ডে সেকেন্ডে কারণে অকারণে তালাক , ডিভোর্স সংঘঠিত হচ্ছে। অনেক আবার তালাকের বিধিবিধান না যেনে তালাক দিচ্ছে এবং এই ব‌উ কে নিয়ে সংসার‌ও চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রত্যেক স্বামী ও স্ত্রীর তালাকের পরিচয় ও প্রকারভেদ ও বিধি বিধান সম্পর্কে বেসিক ধারনা থাকা দরকার। তাই চলুন আমরা তালাকের পরিচয় ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নেই।

Identity and types of divorce

তালাক কাকে বলে?

তালাকের শাব্দিক অর্থ হলো:- ত্যাগ, পরিত্যাগ, বর্জন,বিবাহবিচ্ছেদ,তালাক। তালাককে ইংরেজিতে divorce বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় তালাক বলা হয়:- বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে বর্তমানে বা ভবিষ্যতে বিবাহ বন্ধনকে ছিন্ন করে দেওয়া। সহজ ভাষায় তালাক বা ডিভোর্স হলো বিশেষ কিছু শব্দে প্রয়োগের মাধ্যমে বিবাহ সম্পর্ক কে ভেঙ্গে ফেলা। যার ফলে নিজ স্ত্রী আর স্ত্রী থাকে না বরং আপরিচিতা হয়ে যায়। এবং তার সাথে পর্দা করা ফরজ হয়ে যায়।

তালাকের প্রকারভেদ:- 

তালাককে পর ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক আবার বিবাহ বন্ধনে ফিরিয়ে আনার অধিকার থাকা এবং না থাকার হিসেবে তালাক তিন প্রকার।তথা: এক, তালাকে রজিয়ি তথা প্রত্যাহারযোগ্য তালাক। দুই,তালাকে বায়েন তথা চুরান্ত তালাক। 

প্রথম প্রকার:- তালাকে রজিয়ি তথা প্রত্যাহারযোগ্য তালাক বলা হয়:- যদি স্বামী স্ত্রীকে স্পষ্ট তালাকের শব্দ অথবা স্পষ্টের মত শব্দের মাধ্যমে এক অথবা দুই তালাক প্রদান করে তাহলে স্বামীর জন্য স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে ততালাক কে প্রত্যাহার করার অধিকার থাকবে তথা স্ত্রীকে আবার বিবাহ বন্ধনে ফিরিয়ে আনতে পারবে। এবং ইদ্দতের পর স্বামী স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ করা শরীয়ত সম্মত হবে এইরূপ তালাকে কে তালাকে রজিয়ি বা প্রত্যাহারযোগ্য তালাক বলা হয়।

তালাকের স্পষ্ট শব্দ:- যে শব্দ তালাকের জন্যই ব্যবহৃত হয় অন্য কিছুর জন্য ব্যবহৃত হয় না তাকে তালাকের স্পষ্ট শব্দ বলা হয়। যেমন:- তুমি তালাক,আমি তোমাকে তালাক দিলাম, তুমি তালাক প্রাপ্তা এবং এই জাতীয় শব্দ সমূহ।

স্পষ্টের মত শব্দ:- তুমি ইদ্দত পালন কর, তুমি তোমার জরায়ু পরিষ্কার করো।

দ্বিতীয় প্রকার:-তালাকে বায়েন তথা চুরান্ত তালাক, তা আবার দুই প্রকার যথা:- এক, মুখাফ্ফাফা তথা লঘু তালাক। দুই, মুগাল্লাযা তথা কঠুর তালাক।

প্রথম প্রকার:- যদি স্বামী স্ত্রীকে কেনায়া শব্দ তথা পরোক্ষ উল্লেখ শব্দের দ্বারা এক অথবা দুই তালাক দেয় তাহলে এই ক্ষেত্রে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার অধিকার থাকবে না। তবে স্বামী স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে দ্বিতীয়বার বিবাহ করা শরীয়তসম্মত হবে, এমন তালাক কে তালাকে বাইন তথা চূড়ান্ত তালাক বলা হয়।

কেনায়া শব্দ তথা পরোক্ষ উল্লেখ শব্দ:- যে শব্দ তালাকের জন্য গঠন করা হয় নাই এবং তা তালাকের সম্ভাবনার সাথে সাথে তালাক ব্যতীত অন্য কিছুরই সম্ভাবনা রাখে এরূপ শব্দকে কেনায়া বা পরোক্ষ উল্লেখ শব্দ বলা হয়। এই ধরনের শব্দের দ্বারা নিয়ত অথবা অবস্থার পরিপেক্ষ ব্যতীত তালাক হবে না। যেমন:- তুমি পৃথক, তুমি আলাদা, তুমি হারাম, তুমি মুক্ত, তোমার রশি তোমার কাঁধে, তুমি তোমার পরিবার চলে যাও এবং এই জাতীয় শব্দ সমূহ।

দ্বিতীয় প্রকার:- তালাকে মুগল্লাযা তথা কঠুর বা শক্ত তালাক:- যদি স্বামী স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয় তাহলে স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য শর্ত হলো:- স্ত্রীর অন্যত্র সঠিক ভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হ‌য়ে সহবাস করার পর যদি দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দেওয়া কিংবা মৃত্যুবরণ করা। এই শর্ত ব্যতীত প্রথম স্বামী আর এই স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। এই রূপ তালাকে তালাকে মুগাল্লাসা তথা কঠুর তালাক বলা হয়।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক তালাক অত্যন্ত সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর একটি বিষয়। সুতরাং কোন কারণে যদি তালাক সংঘটিত হয়ে যায় তাহলে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিকটস্থ কোন বিজ্ঞ হক্কানী আলেমের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং বিস্তারিত ঘটনা বলে তার কাছ থেকে সঠিক সমাধান বুঝে নিতে হবে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে সমাধান মিডিয়ার সাথেই থাকুন।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق