জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইসলামী ইসলামি সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম যা ১৯১৯ সনে মুফতী কেফায়তুল্লাহ দেহলভী রহঃ এর নেতৃত্বে এবং শায়খুল হিন্দ রহঃ এর নিসবতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ‌ও কোটি কোটি মানুষের আন্তরিক ভালবাসার চূড়ায় অবস্থান করছে। শতবর্ষাধিক বয়সী এই এই রাজনৈতিক সংগঠনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বা পরিচিত সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা উচিত। কাজেই চলুন সেই সংগঠনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে নেই।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জমিয়ত প্রতিষ্ঠান লগ্নে পৃথিবী

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বৃটেনে প্রথম কয়লা আবিষ্কার হয়। তাই বৃটেন ও ফ্রান্সে মিল-ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠে। মিল-ফ্যাক্টরির জন্য কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। যেমন- চিনির জন্য আখ, কাপড়ের জন্য তুলা, কাগজের জন্য বাঁশ, ঔষধের জন্য লতাপাতা ইত্যাদি। কয়লার আবিষ্কারের পর বৃটিশ ও ফরাসীরা ইঞ্জিন চালিত জাহাজ আবিষ্কার করে এবং কাঁচামালের সন্ধানে বের হয়। ধীরে ধীরে তারা এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। এই আধিপত্যবাদকে কেন্দ্র করে প্রথম মহাযুদ্ধের সূচনা হয়।

বৃটিশ, ফ্রান্স, রাশিয়া, সার্বিয়া ও বেলজিয়াম একপক্ষ। উসমানী খেলাফত, জার্মান, ইতালি, বুলগেরিয়া ও অস্ট্রিয়া অপরপক্ষ। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধ চলাকালীন ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর ও পারস্য উপসাগরে বৃটিশ- ফ্রান্স বাহিনী তাণ্ডব চালিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বহনকারী খাদ্যের জাহাজ ডুবিয়ে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং বিভিন্ন ধরণের চাপ সৃষ্টি করে উসমানী হুকুমতকে খণ্ড বিখণ্ড করে ফেলে।

অতঃপর একদিকে আমেরিকা বৃটিশের পক্ষ নেয়, অপরদিকে সরকারের ভাড়াটে কিছু মুফতীদের ফতোয়াকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সন্য বৃটিশের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। ফলে বৃটিশরা যুদ্ধে বিজয় লাভ করে। উসমানী খেলাফত ভেঙ্গে প্রায় ত্রিশটি দেশে বিভক্ত হয়। উসমানী খেলাফত শুধু তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। মহাযুদ্ধের পরে একে একে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ এবং এশিয়ার অধিকাংশ দেশ পশ্চিম ইউরোপিয়ানরা দখল করে নেয় । ৫০ টি দেশ বৃটেন দখল করে। ফ্রান্স ২৬ টির অধিক দেশ দখল করে নেয়, ইতালি ৭ টি এবং পর্তুগাল ৫ টি দেশ দখল করে নেয়।

এভাবেই ইউরোপিয়ানরা পৃথিবীকে ভাগ করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এবং মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন জেল কোনহত্যার তাণ্ডব চালাতে থাকে এবং মানুষের ধন-সম্পদ লুট করতে থাকে।

ভারতবর্ষকেও শোষণে কোন কমতি করেনি। তারা দেশে সব ধরনের ধনো বান্দার, উৎপাদিত ফসল সহ সবকিছুই শোষণ করে নিত। তাছাড়া তারা পৃথিবীর সব দেশে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে মুসলমান এবং অন্যান্য জাতিকে খ্রিস্টান বানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাদের এমনই জয়জয়কার অবস্থা ছিল যে তাদের বিরোধিতা করার মতো ক্ষমতা কারো ছিল না। ওই মুহূর্তে মালটার দ্বীপে বন্দি বিভিন্ন দেশের রাজবন্দিরা হযরত শাইখুল হিন্দ কে বলতো শায়েখে হিন্দ আপনি যদি আপনার দেশকে স্বাধীন করতে পারেন তাহলে আমরাও স্বাধীনতার চিন্তা করতে পারব। আর ভারত যদি স্বাধীন হতে না পারে তাহলে আমরাও তো স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পারবো না। যখন পৃথিবীতে এই ভয়াবহ অবস্থা বিরাজমান ছিল তখনই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়।

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রতিষ্ঠা

১৯১৪ থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে ১৯১৮ পর্যন্ত চলতে থাকে। বিশ্বযুদ্ধে খেলাফতে উসমানিয়া থেকে আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বৃটিশরা বিচ্ছিন্ন করে খেলাফতকে তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে সীমাবদ্ধ রেখে খলীফাকে অকার্যকর করে ফেলে। তাই খেলাফতের পুণরুদ্ধারের জন্য ভারতবর্ষের মুসলমানরা তাহরীকে খেলাফত নামে দেশজুড়ে সংগঠন গড়ে তুলে আন্দোলন শুরু করে। হিন্দুরাও মুসলমানদের সাথে মিলে আন্দোলন বেগবান করে। ইতিমধ্যে সরকার বিশ্বযুদ্ধে বিজয়কে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে শুকরিয়া মাহফিল ও বিজয় দিবস উদযাপনের প্রোগ্রাম হাতে নেয়। অপরদিকে দেশের সর্বত্র খেলাফত কনফারেন্স করে ভারতবাসী শুকরিয়া মাহফিলকে বর্জন ও বিজয়দিবস উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২৩ নভেম্বর ১৯১৯ ঈসায়ী খেলাফতের কনফারেন্স দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে এই সভায় দেশের অধিকাংশ প্রদেশ থেকে হিন্দু মুসলিম নেতারা শরীক হন। মাওলানা মুহাম্মদ আলী রাহ., মাওলানা শওকত আলী রাহ., মুফতী কেফায়তুল্লাহ রহঃ, স্বামী শ্রী শ্রদ্ধান্দ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, এই খুনি, সন্ত্রাসী, অবৈধ দখলদার সরকারের শুকরিয়া মাহফিলে কেহ অংশগ্রহণ করবে না এবং কোন বিজয়দিবস উদযাপন হবে না।

২৩ নভেম্বর ১৯১৯ ঈসায়ী রাত্রে দেশের নেতৃস্থানীয় উলামায়ে কেরাম এক জরুরী বৈঠকের আয়োজন করেন। এই সভা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকে। যেখানে বিভিন্ন প্রদেশের ২৬ জন উলামা উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী রাহ. এর প্রস্তাবে ও মাওলানা মনীরুজ্জামান ইসলামাবাদী রাহ. এর সমর্থনে মাওলানা আবদুল বারী ফেরেঙ্গী মহল্লী রাহ. এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় অনেক আলোচনা পর্যালোচনার পর স্বাধীনতাকামী, ইনকিলাবী, দ্বীনী, রাজনৈতিক সংগঠন গঠন করা হয় এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” তার নামকরণ করা হয়। মাওলানা মুফতী কেফায়তুল্লাহ রাহ. ও মাওলানা আকরম খাঁকে জমিয়তের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয় ।

মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী জমিয়তের অস্থায়ী সভাপতি হিসাবে মুফতী কেফায়তুল্লাহ ও অস্থায়ী সেক্রেটারী হিসাবে মাওলানা হাফিজ আহমদ সায়ীদ দেহলভীর নাম প্রস্তাব করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়।

মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ও মাওলানা দাউদ গজনভী পরবর্তী সভা অমৃতসরে অনুষ্ঠানের আগ্রহ প্রকাশ করলে উপস্থিত সবাই তা গ্রহণ করেন।

২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ১৯১৯ তারিখে অমৃতসরে পণ্ডিত মতিলাল নেহরুর সভাপতিত্বে অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হিন্দু-মুসলিম ডেলিগেট সেখানে উপস্থিত হন। ২৮ ডিসেম্বর ১৯১৯ ঈসায়ী মাওলানা শওকত আলী রাহ র সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় খেলাফত কমিটির সভা অমৃতসরে অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আরও বহু সভা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ইংরেজ খেদাও আন্দোলন এবং বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক কার্যক্রমে বন্ধে জমিয়তে নৃত্রীত্ব দিয়ে আসছে। যার ফলে আজ আমরা স্বাধীনভাবে ইসলামী জীবন যাপন করতে পারি।

উপসংহার

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য র‌ইল হাজার হাজার মোবারকবাদ। আর্টিকেলটির কোন তথ্য সম্পর্কে কথা থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন এবং ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরিশেষে সকলের প্রতি জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ রাজনৈতিক পার্ট ফর্মে যোগদান করার আহ্বান জানাচ্ছি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আকাবির দের দলে সংযুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুক, আমীন।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment