ডিপ্রেশন ইংরেজি শব্দ তার বাংলা অর্থ বিষাদ,দুশ্চিন্তা। এটা এমন একটা রোগ যে রোগে সকল শ্রেণীর মানুষ কে চায় সে শিক্ষিত- অশিক্ষিত, সাধারণ - অসাধারণ যেই হোক না কেন সকলেই কোন না কোন সময় আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ডিপ্রেশন এর কারণে কিছু কিছু মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ডিপ্রেশন বা বিষাদরোগ অন্য সকল রোগের মত দ্রুত শেরে উঠেনা। তার নিতে হয় কিছু পদক্ষেপ।এটাও জানা দরকার যে সাধারণ মন খারাপ আর ডিপ্রেশন এক নয়। কাজেই এখন ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষণ এবং তার থেকে বাঁচার উপায় আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা বা বিষাদরোগের কিছু লক্ষণ।
- সবসময় মন খারাপ থাকে।
- কিছু করতে ইচ্ছা করে না আর কিছু করতে ভাল লাগে না।
- কোন ব্যপারে মনস্থির করতে সময় লাগে।
- যে কাজ আপনি সহজেই করতে পারতেন তা করতে কষ্টসাধ্য হওয়া।
- খুব ক্লান্ত লাগা।
- খুব অস্থির লাগা বা ভোর্রিং লাগা।
- খুদা না লাগা ওজন কমে যাওয়া কিছু ক্ষেত্রে তার বিপরীত হওয়া খুদা বেড়ে যাওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়া।
- এক ঘন্টা বা দুই ঘণ্টা লাগা ঘুম আসতে তার পরও খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গে যাওয়া।
- সহবাসে অনিচ্ছা।
- আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং আস্থা হারানো।
- নিজেকে অপদার্থ এবং অকর্মা মনে করা।
- মানুষের সঙ্গ বর্জন করা।
- বিরক্ত লাগা।
- দিনের কোন এক সময় বেশি বিষন্ন লাগা।
- আত্মহত্যার কথা ভাবা।
- অকারণে ভয় ভয় লাগা।
- মাঝে মাঝে আমরা এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফলে আরো বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
- পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ডিপ্রেশন থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের প্রকোপ দ্বিগুণ বেশি হয়ে থাকে।
- আর্থিক সমস্যা, নিম্ন সামাজিক অবস্থা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ভিটামিন ডি-এর অভাব ডিপ্রেশনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
- জুয়া খেলার মাধ্যমে ডিপ্রেশন তৈরি হয়।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল এবং কর্টিকোস্টেরয়েড এবং বিটা ব্লকার-সহ কিছু ওষুধ বিষণ্ণতা বৃদ্ধি করার মাধ্যম হতে পারে ।
- হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ হয় , অন্যদিকে ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে ১ জনের বিষণ্ণতা অনুভব করতে পারে।
এছাড়া প্রিয়জনের মৃত্যু ও অসুখী বিবাহিত জীবন ও কর্মস্থলের বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্যা এবং একাকীত্ব, ইত্যাদিও মানুষের ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা বৃদ্ধি করে দিতে পারে।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
এক, নির্ধারিত তাকদিরের উপর ভরসা রাখুন।তথা আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির বহু পূর্বে তাকদির সৃষ্টি করেছেন সুতরাং চেষ্টা করার পরও যদি কোন কিছুতে হেরে যান তাহলে মনে করুন এটাই তাকদিরের ফায়সালা।
দুই, এটাকে আল্লাহ তায়ালা পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা মনে করুন। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা ও ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে- আল বাকারা-১৫৫
তিন, নিয়মিত সালাত আদায় করা কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন বিপদ দেখতেন তখন নামাযে দাড়িয়ে যেতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। আল্লাহর সাহায্য চলে আসলে আর কোন ডিপ্রেশন অবশিষ্ট থাকবে না।
চার, বিষন্নতা দূর করার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।ফলে ডাক্তার আপনার অবস্থা যাচাই করে আপনার পজিশন জেনে চিকিৎসা দিলে আশা করা যায় ডিপ্রেশন ভালো হয়ে যাবে।
পাঁচ, মনোবল ধরে রাখা, কোন ভাবেই হীনমন্যতায় ভোগা যাবে না। মনোবল ধরে রাখতে নিজে নিজের স্ত্রীর ও বাস্তব মতের উপর অবিচল থাকবেন। নিজেকে অপরাধী মনে করা যাবে না।
ছয়, ব্যায়াম করা,
সপ্তাহে অন্তত ৩ থেকে ৫ দিন আধঘণ্টা সময় আমরা ব্যয় করতে পারি এটা ইসলামের দৃষ্টিতে ও ভালো। বিভিন্ন গবেষকের মতে, শরীরচর্চা বা ব্যায়াম–
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে যা দেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখতে সহায়ক হয়। দেহের এন্ডোরফিন নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায় যা মন ভালো রাখতে সহায়ক হয়।
সাত,মাদকদ্রব্য পরিহার করা।
মদ এবং ফেনসিডিল ও ইয়াবা বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণে সাময়িক প্রশান্তি মেলে বলে ধারণা করা হলেও তা কিন্তু শরীরের জন্য একদমই উপকারী নয়। দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ডিপ্রেশন ও উদ্বিগ্নতার লক্ষণ আরও প্রকোপ হয়। দেহের ইমিউন সিস্টেমের যে অংশগুলো ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয়, সেগুলোর প্রভাব কমায়। অতএব মাদক কে সম্পূর্ণ ভাবে পরিহার করতে হবে।
আট:সীমা নির্ধারণ করতে শেখা,
কোনো বিষয় বা কাজ নিয়ে অতিরিক্ত মগ্ন হয়ে থাকা ডিপ্রেশন আর অস্থিরতা দুটোই বাড়িয়ে দিতে পারে। অতএব, ব্যক্তিজীবন এবং কর্মজীবনের মাঝখানে সীমা টানতে হবে।তাহলে আপনি অনেক ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারবেন।
নয়,বিডি সিগারেটকে না বলা,
সিগারেট আর ডিপ্রেশন একে অপরকে স্থায়ী করে তোলে। ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। এটি আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে।
দশ, শোসাল মিডিয়া তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।
বেশকিছু গবেষণা বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার ডিপ্রেশনের কারণ হতে পারে এবং আত্মসম্মানবোধ কমিয়ে দিতে পারে।
তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার কমিয়ে পরিবার, বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের বেশি সময় দেওয়া দিতে সবর্দা সচেষ্ট থাকা।এতে আপনার ডিপ্রেশন কমে যাবে।
এগারো,মানসিক চাপ কমানো
দীর্ঘসময় মানসিক চাপ নিয়ে থাকা ডিপ্রেশনের একটি সাধারণ কারণ। কোনো বিষয় বা কাজের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে গেলে তা ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। তাই নিজেকে বুঝিয়ে যা করা বা পাওয়া সম্ভব নয় তা নিয়ে চিন্তা করা বাদ দেওয়াই ভালো।
বার,ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভালো করে জানা,
যে ওষুধ খাওয়া হচ্ছে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো আগে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ডিপ্রেশন বাড়াতে পারে। তাই, যেকোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শমতো খাওয়া উচিত এবং ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ডিপ্রেশন হতে পারে কি না সেটা জেনে নেওয়া ভালো। শুধু এই ক্ষেত্রেই তা সীমাবদ্ধ না জীবনের সকল তা প্রয়োগ করা উচিৎ।
তের,নিজের যত্ন নেওয়া,
নিজে নিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে সহজেই ডিপ্রেশনের মাত্রা কমিয়ে আনা যায়। নিজে যদি নিজের যত্ন না নেন তাহলে অন্য কেউ আপনার যত্ন নিবে না ফলে আপনার ডিপ্রেশন বাড়তে পারে। পরিমিত ঘুমাতে হবে আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থাকতে হবে।
মন খারাপের কারণ হবে এমন মানুষদের এড়িয়ে চলতে হবে। যেসব কাজে আনন্দ পাওয়া যায়, তাতে বেশি বেশি অংশ নিতে হবে।নিজেকে ভালোবাসা বিষণ্ণতা কমানোর জন্য সবচেয়ে জরুরি।
চৌদ্দ, চিন্তা মুক্ত থাকার দোয়া পড়া।
ডিপ্রেশন দূর করার দোয়া, আল্লাহুম্মা ইন্নি আয়ুযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়া আয়ুযুবিকা মিনাল আযযি ওয়াল কাসালি ওয়া আয়ুযুবিকা মিনাল যুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া আয়ুযুবিকা মিন গলাবাতিত দায়নি ওয়া কহরির রাজাল। অর্থ হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট আস্রয় চায় চিন্তা পেরেশানি থেকে এবং আপনার নিকট আশ্রয় চায় অক্ষমতা অলসতা থেকে এবং আপনার নিকট আশ্রয় চায় কাপুরুষতা ও কৃপনতা থেকে এবং আপনার নিকট আশ্রয় চায় ঝণের বোঝা ও মানুষের ক্ষোভ থেকে। আবু দাউদ হাদিস নং ১৫৫৫
উপসংহার
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা যা ই হোক না কেন তা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই আসে।যখন বিপদ আসে আর তা আমাদের কে আল্লাহ মুখি করে তা রহমত আর যদি আল্লাহ বিমুখ করে তা রহমত নয়। উপরোক্ত যে উপসর্গ ও বাঁচার উপায় আলোচনা করা হলো যদি আমরা তা মেনে চলি বা যার মাঝে এই উপসর্গ পাওয়া যাবে তার শেয়ার করি আর সে তা মেনে চলে তাহলে ইনশাআল্লাহ এই রোগ থেকে আমারা মুক্তি পাব। যদি আর্টিকেল টি আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। সমাধান মিডিয়া সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।