প্রকৃত মুমিনের পরিচয় ও গুণাবলী

ঈমান অর্থ বিশ্বাস আর মুমিন অর্থ বিশ্বাসী। ইসলাম অর্থ আনুগত্য প্রকাশার্থে মাথা নত করা আর মুসলিম অর্থ আনুগত্য প্রকাশার্থে মাথা অবনত কারী। মুমিন হলো সে, যে তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাত বিশ্বাস করে এবং ইসলামের সকল বিধ বিধান মেনে সে অনুযায়ী আমল করে। ঈমান ও ইসলাম কোন বংশিয় পরিচয় নয় বরং তা বিশ্বাস ও কাজের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। কুরআন ও হাদীসে মুমিনের পরিচয় ও গুণাবলী সবিস্তারে বর্ণনিত হয়েছে।

he-identity-and-qualities-of-a-true-believer

আল্লাহ তায়ালা বলেন তাঁরাই প্রকৃত মুমিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অন্তর দিয়ে স্বীকার করেছে, তারপর কোন সন্দেহে পড়েনি, তাদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, তারাই সত্যবাদী। সূরা হুজরাত- ১৫

একজন মুমিনের পরিচয় পাওয়া যায় তার মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহারে যে কথা কিংবা হাত দ্বারা অপর মুসলমানের মানহানি করা, মনে কষ্ট দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে রসূল সাঃ বলেন প্রকৃত মুসলমান সে যার হাত মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। এবং প্রকৃত হিজরত কারি সে, যে আল্লাহ তায়ালার নিষেধ সমূহ থেকে বিরত থাকতে পারে। বুখারী হাদীস নং ১০

একজন মুমিনের কর্তব্য হল সে নিজের জন্য যে জিনিসকে পছন্দ করবে তা অপর ভাইয়ের জন্য‌ও তা পছন্দ করবে নিজের জন্য যা ভালোবাসবে অপরের জন্য ও তা ভালোবাসবে। রসূল সাঃ বলেন ,কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ঐ বস্তু ভালবাসে যা সে নিজের জন্য ভালবাসে। বুখারী শরীফ হাদিস নং ১৩

সূরা মুমিনের আল্লাহ তায়ালা মুমিনের সাত টি গুণ বর্ণনা করেছেন যে গুণাবলী জানলে আমরা খাঁটি মুমিনের পরিচয় পেয়ে যাব।

মুমিনের সাতটি গুণ

এক, যারা নামাজে গভীরভাবে মনোযোগী হয়। খুশূ-খুযূর সাথে দেহ এবং মন একত্র করে আল্লাহ তায়ালার আদেশ নামাজ আদায় করে। কুরআনে পাকে আরো দুই প্রকার নামাজির কথা বর্ণিত হয়েছে ১, উদাসীন মুসল্লি যারা মনোযুগের সাথে নামাজ আদায় করে না ,আল্লাহ তায়ালা বলেন দূর্ভোগ ঐ সমস্ত নামাজিদের জন্য, যারা তাদের নামাজে উদাসীন। সূরা মাউন- ৫

২, অলস নামাজি যারা নামাজ আদায় করে কিন্তু অলসতার সাথে। আল্লাহ তায়ালা বলেন যখন তারা নামাজে দাড়ায় তখন অলসতার সাথে দাঁড়ায়।সূরা নিসা আয়াত-১৪২

উপরোক্ত তিন প্রকার নামাজির মধ্যে শুধু প্রথম প্রকার সফলকাম আর বাকি দুই প্রকার সফলকাম হতে পারেনি।

দুই, মুমিনের দ্বিতীয় গুণ অনর্থক কথা এবং কাজ এবং শিরক এবং বিদ'আতসহ সকল প্রকার পাপের কাজ এবং বাজে কাজসমূহ থেকে বিরত থাকে। রসূল সাঃ বলেন মানুষের সুন্দর ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হলো অনর্থক বিষয়সমূহ পরিহার করা। ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৩৯৭৬

সুতরাং মুমিন ব্যক্তি অযথা কোন কথা বা কাজে ব্যস্ত হয়ে নিজের অমূল্য সম্পদ সময় কে অতিবাহিত করেনা।যে অযথা কথাবার্তা ও কাজকর্ম বহু ফেতনা ফ্যাসাদের কারণ।

তিন, মুমিনের তৃতীয় গুণ নিয়মিত ভাবে যাকাত আদায় করা। যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের পাঁচ নাম্বার হলো যাকাত।যাকাত অর্থ পবিত্রতা। যাকাত আদায় করার মাধ্যমে যে ভাবে সম্পাদের পবিত্রতা অর্জন হয় তেমনি ভাবে মনের পবিত্রতা ও হাসিল হয়। পাশাপাশি গরিব দুঃখী মানুষের সেবা ও তাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে ইসলামী অর্থনীতির ভারসাম্যতা রক্ষা হয়।

চার, মুমিনের চতুর্থ গুণ হলো নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করা। একজন মুমিন পুরুষ তার নিজ স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ব্যতিত কন্যত্র যৌন বাসনা চরিতার্থ করতে পারেনা। অনুরূপভাবে মুমিন নারী তাদের স্বামী ব্যতিত অন্য কে কামনা করবে না এবং দাস কেও ব্যবহার করবেনা। এজ মুমিন কোনভাবেই যিনা-ব্যবিচার, পরকিয়া প্রেম ইত্যাদি করবে না। ইসলামের যে বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি হয় কঠোর সে বিধান মান্য করলে পুণ্য ও হয় প্রচুর। ইসলামে যিনা ও ব্যবিচারের শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড তাই যে ব্যক্তি তার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন তিনি হবেন প্রকৃত মুমিন এবং সফলকাম ও জান্নাতি। যিনা ও ব্যবিচারের প্রতি আকৃষ্ট কারি কোন কাজ‌ও তারা করবেনা। নিজের চোখ, হাত, পা কে সংযত রাখবে। সম্পূর্ণ শরিয়ী পর্দার সাথে চলাচল করবে।

পাঁচ, ছয়, মুমিন ব্যক্তি তার আমানত এবং অঙ্গীকার রক্ষা করে চলবে। একজন মুমিন দ্বীনি এবং দুনিয়াবী উভয় ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করে চলবে আর আমানতের খেয়ানত করা এবং ওয়াদা খেলাপি করা মুনাফিকের সবচেয়ে বড় লক্ষণ। রাসূল সাঃ বলেছেন মুনাফিকের নিদর্শন হল তিনটি এক, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। দুই ,যখন ওয়াদা করে তার খেলাফ করে।তিন,তার কাছে কিছু আমানত রাখলে তার খিয়ানত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন মুমিনগণ তোমরা জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে এবং তোমাদের মধ্যকার পারস্পরিক আমানত সমূহে খেয়ানত করো না। আনফাল আয়াত -২৭

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই তোমরা অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইসরা আয়াত-৩৪

সাত, মুমিন ব্যক্তি নামাজ সমূহেল হেফাজত করে। নামাজের মুস্তাহাব সযময়ে নিয়মিত ভাবে নামাজ আদায় করে। সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে নামাজের প্রত্যকটি রুকুন আদায় করে। এবং নামাজের ভিতর ও বাহিরের সকল শর্ত ও রুকুন সমূহ ভালভাবে আদায় করে।লোক দেখানো বা মানুষ কে খুশি করার জন্য নামাজ আদায় করে না। কেবল আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নামাজ আদায় করে।

কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে মুমিনের যে গুণাবলী থাকা উচিত তা একত্রে উল্লেখ করা হলো।

  1. যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি দ্বিধাহীনচিত্তে বিশ্বাস পোষণ করেন। যারা তাদের মাল ও জান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর পথে জিহাদ করেন। 
  2.  যারা ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী হন।
  3.  যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ হ’তে বিরত থাকেন।
  4.  যারা নিয়মিত যাকাত দেন।
  5.  যারা নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করেন।
  6.  যারা আমানত রক্ষা করেন।
  7.  যারা অঙ্গীকার রক্ষা করেন।
  8.  যারা তাদের ছালাতের যথাযথ হেফাযত করেন।
  9.  যারা অন্য মুসলিমের প্রতি যুলুম করেন না।
  10.  তাকে লজ্জিত করেন না।
  11.  যারা অন্য মুসলিমের সাহায্যে থাকেন।
  12.  যারা অন্যের কষ্ট দূর করেন।
  13.  যারা অন্য মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখেন।
  14.  যারা ছোটকে স্নেহ করেন ও বড়কে সম্মান করেন।
  15. যারা সৎকাজের আদেশ দেন ও অসৎকাজে নিষেধ করেন।

উপসংহার

পরিশেষে বলি সংক্ষেপে মুমিনের যে গুণাবলী উল্লেখ করা হলো হে আল্লাহ তুমি আমাদের সবাই কে এই গুণাবলী অর্জন করার তাওফীক দান করো। এবং প্রকৃত ও খাঁটি মুমিন না বানিয়ে মৃত্যু দান করিওনা।(ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment