সালামের গুরুত্ব, ফজিলত ও মাসায়েল

সালাম আরবি শব্দ তার অর্থ হল শান্তি, নিরাপত্তা। সালাম ইসলামের নিদর্শন, সালামের আদান-প্রদানের মাধ্যমে মুসলমানিত্ব প্রকাশ পায়। সুতরাং আমাদের সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত জানা উচিত যেন আমরা তার উপর আমল করতে পারি। এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করতে পারি।

সালামের গুরুত্ব, ফজিলত ও মাসায়েল

সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত

রসূল সাঃ বলেন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আঃ কে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করার পর বললেন ফেরেশতাদের কে সালাম দিতে, হযরত আদম আঃ ফেরেশতাদের কে বললেন আসসালামুয়ালাইকুম ফেরেশতারা উত্তরে বলল ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ, এখান থেকেই সালামের প্রচলন শুরু যা আল্লাহ তায়ালার আদেশ হযরত আদম আঃ ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে আসসালামুয়ালাইকুম বলেছিলেন এবং ফেরেশতার তার উত্তর দিয়ে ছিল। এটাকেই আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য পরস্পর সাক্ষাত কালে অভিবাদন হিসেবে চালু করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন যখন তোমাদের কে সালাম দেয় তাহলে তোমরা তার জবাবে তার থেকে উত্তম টি দিবে বা ঐ শব্দটাই বলবে ( যা সালাম প্রদানকারী বলেছিল) নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জিনিসের হিসাব গ্রহণকারী। সূরা নিসা আয়াত ৮৬

সালাম জান্নাতে যাওয়ার সোপান

রসূল সাঃ বলেন তোমরা সালামের প্রচার কর এবং মানুষদের কে খাবার খাওয়াও এবং মানুষদের ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তাহাজ্জুদের নামায আদায় কর এবং নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো। তিরমিযি হাদিস নং২৪৮৫

অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না ঈমান না আনবে এবং তোমরা ঈমানদার হতে পারবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত মুহাব্বত না করবে। আমি কি তোমাদের কে এমন একটি আমলের কথা বলবনা যখন তোমরা এটা পালন করবে তখন তোমরা পরস্পরে মুহাব্বত করতে পারবে? সে আমলটি হলো তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচার কর। মুসলিম হাদিস নং ৫৪

উপরোক্ত দুটি হাদিস এই বিষয় প্রমাণ করে যে সালামের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত দান করবেন।

আগে সালাম দেওয়ার ফজিলত

রসূল সাঃ বলেন আল্লাহ তায়ালা কাছে সর্বোত্তম ব্যক্তি হল সে যে আগে সালাম দেয়। আবু দাউদ হাদিস নং ৫১৯৭

রসূল সাঃ বলেন কথা বলার আগে সালাম বলা হলো বিধান। তিরমিযি হাদিস নং ২৬৯৯

রসূল সাঃ বলেন এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে তিন দিনের বেশি কথা না বলা জায়েজ নাই সাক্ষাতে একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এই দুই জনের মাঝে উত্তম হলো যে আগে সালাম দেয়। মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ২৩৫৭৬

রসূল সাঃ বলেন প্রথমে সালাম প্রদানকারী অহংকার হতে মুক্ত। মিশকাত শরীফ।

ঘরে প্রবেশ কালে সালাম দিয়ে প্রবেশ করা

অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এমনি ভাবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য তার আয়াত সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা বুঝতে পার। নূর আয়াত ৬১

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন হে ঈমানদারগণ তোমরা নিজেদের ঘর ব্যতিত অন্য কারো ঘরে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিবে এবং সালাম দিবে এটা তোমাদের জন্য উত্তম যেন তোমরা নসিহত অর্জন করতে পার। সূরা নূর আয়াত ২৭

উক্ত আয়াতে প্রথমে অনুমতি তার পর সালামের কথা সাহিত্যে প্রতি লক্ষ করে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে বিধান হলো আগে সালাম তার পর অনুমতি নিতে হবে।

সালামের উত্তর দেওয়া মুসলমানদের হকের মধ্যহতে একটি কাজেই সালাম দেওয়া সুন্নাত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। 

সালাম দেওয়ার দারা গুনাহ মাফ হয়ে যায়

রসূল সাঃ বলেন যখন একজন মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ করে সালাম দেয় এবং হাতে ধরে মুসাফা করে তখন তাদের গুনাহ গুলো এভাবে ঝরে পড়ে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। (আততারগীব ওয়াত তারহীব)

আবু হুরায়রা রা হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিসে বাসা এক ব্যক্তি পাশ দিয়ে অতিক্রম কালে রসূল সাঃ কে বলল আসসালামুয়ালাইকুম রসূল সাঃ (উত্তর দিয়ে ) বললেন দশ নেকি। তারপর আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করল এবং বলল আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ রসুল সাঃ বললেন বিশ নেকি, তার আরেক ব্যক্তি অতিক্রম করল এবং বলল আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহ রসূল সাঃ বললেন ত্রিশ নেকি। আল আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং ৯৮৬

সালাম সংক্রান্ত জরুরী মাসায়েল

মাসয়ালা,কে কাকে সালাম দিবে। হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ বর্ণনা করেন ছোট ব্যক্তি বড় ব্যক্তিকে এবং আরোহী ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কম মানুষ বেশি মানুষ কে সালাম দিবে। আরেক বর্ণনায় এসেছে গাড়িতে আরোহী ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলন্ত ব্যক্তিকে এবং দাঁড়ানো ব্যক্ত বসা ব্যক্তি কে সালাম দিবে।বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬২৩১-৩২

মাসয়ালা,কাকে কোন সময় সালাম দেয়া যাবেনা।

নামাজিকে, কুরআন শরীফের তেলাওয়াতকারীকে, যিকির কারিকে, হাদিস পাঠদানরত ব্যক্তিকে, খুৎবা প্রদান কারিকে, ফিকহি মাসায়েল আলোচনা কারিকে, মুকাদ্দামার ফায়সালার জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তিকে,আযান রত ব্যক্তিকে, ইকামত ব্যক্তিকে, পাঠদানকারীকে, কোন অপরিচিত মহিলাকে সালাম না দেওয়া উচিত যদি তার মধ্যে ফিতনার আশংকা থাকে, দাবা খেলনেওয়ালা ব্যক্তিকে এবং তার মত খেলায় ব্যস্ত ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর সাথে নির্জনে বসে রয়েছে, কাফের কে, যে ব্যক্তির সতর খোলা রয়েছে, প্রস্রাব পায়খানারত ব্যক্তিকে, আহহারকারী ব্যক্তিকে,তবে যদি কোন খুদার্ত হয় এবং সালাম দিলে তাকে খাবারে শরিক করার সম্ভাবনা থাকে, গানবাজনা কারি এবং কবুতর নিয়ে খেলায় ব্যস্ত ব্যক্তিকে সালাম করা যাবে না।

এছাড়াও যে ব্যক্তি কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত এবং সালামের কারণে তার কাজে ব্যাঘাত ঘটবে, যে ব্যক্তি পাপাচারের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে, যাকে সালাম দেওয়ার ফলে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে, এ সকল ব্যক্তিকে এবং অমুসলিমকে প্রথমে সালাম দেওয়া যাবে না।

মাসয়ালা, সালাম দেয়ার সুন্নাত পদ্ধতি,

প্রথম ব্যক্ত বলবে আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

শ্রবণকারী জবাবে বলবে ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

উপসংহার

ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আসুন আমরা সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত ও মাসায়েল জেনে সঠিক ভাবে সঠিক পদ্ধতিতে সালামের প্রচার ও প্রসার করি এবং যা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার কারণ হবে।হে আল্লাহ তুমি আমাদের কে বেশি বেশি নেক কাজ করার তাওফীক দান করো।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment