ইতিকাফের গুরুত্ব, ফজিলত ও মাসায়েল।
আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমরা এবারও রমজান মাস পেয়েছি এবং রোজা রাখার তৌফিক প্রাপ্ত হয়েছি,সামনে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ আসতেছে যা আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক বড় সাওয়াব ও মর্যাদার বিষয়। রাসুল সাঃ রমজানের শেষ দশকে সর্বদা ইতিকাফ করেছেন, তাঁর ইন্তেকালের পর রসুল সাঃ এর পবিত্র স্ত্রীগন ইতিকাফ করেছেন।
ইতিকাফ কাকে বলে?
ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ হলো বিরত থাকা, আবদ্ধ রাখা।শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ রেখে ইবাদতের মধ্যে লিপ্ত থাকা কে ইতিকাফ বলা হয়।যে ব্যক্তি নিজেকে মসজিদের মধ্যে আবদ্ধ রাখেন তাকে বলা হয় মুতাকিফ।
ইতিকাফের সময়
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এতেকাফের সময় হলো, রমজান মাসের শেষ দশকের দিন সমূহ।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ বলেন রাসূল সাঃ রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। (বুখারী শরীফ হাদিস নং ২০২৫) আর ওয়াজিব ইতিকাফের সময় যে সময় এতেকাফ করার মান্নত করা হয়েছে।নফল ইতিকাফের কোন সময় সীমা নেয় এক মুহুর্ত ও হতে পারে।
ইতিকাফ কত প্রকার
ইতিকাফ তিন প্রকার:- যথাঃ- ১,ওয়াজিব ২,সুন্নতে মুয়াক্কাদা ৩,মুস্তাহাব।
১, ওয়াজিব:- যে ইতিকাফ করার মান্নত করা হয়েছে চায় মান্নত সর্তযুক্ত হোক বা শর্ত মুক্ত হোক, সে এতেকাফ আদায় করা ওয়াজিব। শর্ত যুক্ত যেমন: কোন ব্যক্তি বলল আমার ঐ কাজ টি হয়ে গেলে আমি ৫ দিন ইতিকাফ করবো।
২, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা:- রমজানের শেষ দশদিনের ইতিকাফ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কেননা রাসুল সাঃ রমজানের শেষ দশ দিন গুরুত্ব সহকারে এতে কাজ করেছেন, এটা সহি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। অবশ্য এই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিছু লোক আদায় করলে মহল্লার সকলেই দায়িত্বমুক্ত হবে।
৩, মুস্তাহাব:- রমজানের শেষ দশ দিন ব্যতীত বৎসরের অন্য যেকোন সময় ইতিকাফ করা মুস্তাহাব বা নফল।
ইতিকাফের শরয়ী হুকুম
ইতিকাফের শরয়ী হুকুম হলো রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া তথা মহল্লার কিছু লোক আদায় করলে মহল্লার সকলেই দায়িত্বমুক্ত মুক্ত হয়ে যায়। সুন্নাত এবং নফল সকল ইতিকাফ আল্লাহ তায়ালা বড় একটি ইবাদত।
ইতিকাফের উদ্দেশ্য
ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো রসূল সাঃ এর সুন্নত অনুসরন করে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করা হলো ইতিকাফের উদ্দেশ্য।
মহিলাদের ইতিকাফের বিধান
মহিলাগন তাদের স্বামীর অনুমতি নিয়ে নিজ ঘরের মসজিদে বা নামাজের স্থানে ইতিকাফের উদ্দেশ্য বিশ তারিখে সূর্য ডুবার পূর্বে বসে যাবে এবং ঈদের চাঁদ দেখা গেলে উক্ত স্থান থেকে বের হবে।
ইতিকাফের ফজিলত
রসুল সাঃ বর্ননা করেন ঐ ব্যক্তি বহু পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং তাকে এত নেকি দেওয়া হয় যত নেকি অন্যান্য সকল ভালো কাজের কর্তাকে দেওয়া হয়। ইবনে মাজাহ হাদিস নং ১৭৮১
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য একটি মাত্র দিন এতেকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। এক খন্দকের দূরত্ব হলো জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত ব্যবধানের মত।তাফসিরে দুররে মানসুর ১ খন্ড পৃষ্ঠা ২০২
বিখ্যাত তাবিয়ী হযরত হাসান বসরী রহঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য প্রত্যেক দিনের এতেকাফের বদৌলতে একটি করে হজের সওয়াব রয়েছে। তাফসিরে দুররে মানসুর ১ খন্ড পৃষ্ঠা ২০২
ইতিকাফের সবচেয়ে বড় ফজিলত
ইতিকাফের সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো শবে কদর প্রাপ্তি, যখন কোন ব্যক্তি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করবে সে নিশ্চিত শবে কদর পাবে।যা হাজার মাস ইবাদত করার থাকে ও উত্তম। যদি সুন্নাত ইতিকাফ করা সম্ভব না হয় তাহলে যতবেশি সম্ভব নফল ইতিকাফ করবে। কেননা নফল ইতিকাফের ও রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা এবং সওয়াব রয়েছে।
ইতিকাফের শর্ত সমূহ
এক, যে মসজিদে নামাযের জামায়াত হয় সে মসজিদে ইতিকাফ করা।
দুই, ইতিকাফের নিয়ত করা, নিয়ত ছাড়া মসজিদে অবস্থান করলে এতেকাফ বলা হবে না। যেহেতু নিয়ত সহিহ হওয়ার জন্য নিয়তকারী মুসলমান এবং জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া শর্ত সুতরাং ইতিকাফ কারির জ্ঞান সম্পন্ন ও মুসলমান হওয়া জরুরী।
তিন, ইতিকাফকারী হায়েয,নেফাস ও জানাবাত (গোসল ফরজ হওয়া) হতে পবিত্র হওয়া জরুরী।
ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ সমূহ
এক, সহবাস করা ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ, কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। সূরা বাকারা আয়াত ১৮৭
দুই, শরয়ী কোন অযুর ব্যতিরেখে মসজিদ থেকে বের হওয়া। আম্মাজান হযরত আয়েশা রাঃ বলেন রাসূল সাঃ মসজিদে থাকা অবস্থায় নিজের মাথা মুবারক বের করে দিতেন এবং আমি মাথা আচরিয়ে দিতাম, এবং যখন তিনি ইতিকাফ অবস্থায় থাকতেন তখন শরয়ী কোন অযুর ব্যতিত মসজিদ থেকে বের হতেন না। বুখারী শরীফ হাদিস নং ২০২৯
ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান
সবচাইতে উত্তম মসজিদে হারাম বা কাবা শরীফের ইতিকাফ, তারপর যথাক্রমে মসজিদে নববী তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের ইতিকাফ অতঃপর জামে মসজিদের ইতিকাফ যেখানে জামাতের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি জামে মসজিদে জামাতের ব্যবস্থা না থাকে তবে মহল্লার মসজিদের এতেকাফ অতঃপর সেই মসজিদে যেখানে জামাতে মানুষ বেশি হয়।
ইতিকাফরত অবস্থার আমল
এক, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা।
দুই, জিকির ও তাসবিহ সমূহ পাঠ করা।
তিন, বেশি বেশি নফল ইবাদত আদায় করা।
চার, একেবারে চুপ করে বসে না থাকা। কেননা চুপ করে বসে থাকা কোন ইবাদত নয়।
ইতিকাফ অস্থায় কি কি কাজ করা জায়েয
এক, খাওয়া ও পান করা। যদি মসজিদে খাবার পৌঁছে দেয়ার লোক না থাকে তাহলে বাড়িতে গিয়ে খাবার খেয়ে আসতে পারবে।
দুই, শরয়ী প্রয়োজন যেমন প্রস্রাব পায়খানা করার জন্য মসজিদের বাহিরে যাওয়া জায়েয।
তিন, প্রয়োজন হলে ব্যবসায়ী পণ্য মসজিদে না এনে বেচাকেনা করা জায়েয।
চার, দীনি আলোচনা করা ও শুনা।
পাঁচ, মসজিদের ভিতরে কোন এক পাশে তাবু টানানো জায়েয।
ছয়, মসজিদে অযু গোসল করা জায়েয।
সাত, স্ত্রীর সাথে কথা বলা জায়েয।
আট, মুস্তাহাযা মহিলার ইতিকাফ করা জায়েয।
উপসংহার
ইতিকাফ হলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। ইতিকাফরত অবস্থায় বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করা।অযথা কোন ধরনের কথা বা কাজে সময় অপচয় না করা। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের কে ইতিকাফের হক অনুযায়ী আদায় করার তৌফিক দান করুক আমীন।