ইফতারির গুরুত্ব ফজিলত ও বরকত

ইফতারির গুরুত্ব ফজিলত ও বরকত 

ইফতারির করা এবং করানো দুনোটাই অনেক সাওয়াবের কাজ ।তার মধ্যে নিহিত রয়েছে অনেক অনেক বরকত। চলুন ইফতারি সম্পর্কে কিছু আলোচনা জেনে নেয়া যাক।

ইফতার অর্থ কী?

ইফতার আরবি শব্দ, তার শাব্দিক অর্থ হলো ভঙ্গ করা। পরিভাষায় ইফতার বলা হয়, মুসলমানগণ সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত রোযা রেখে সূর্যাস্তের পর খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করে। রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার এবং যে খাবারের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করে তাকে ইফতারি বলা হয়।

ইফতারের সময় কখন?

ইফতারের সময় হলো যখন সূর্যাস্ত হয় তখন ইফতারের সময় শুরু হয়। হাদিস শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রাত্র ঐদিক দিয়ে আগমন করে এবং দিন ঐদিক দিয়ে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে বা সূন যায়। তখন রোজাদাররা ইফতার করবে। বুখারী শরীফ, হাদিস নং ১৯৫৪

ইফতারির দোয়া কি? 

হাদিস শরীফের মধ্যে ইফতারির কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে তার থেকে দুটি দোয়া উল্লেখ করা হলো।

এক, আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতার্তু।

রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন, আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতার্তু।

অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার রিজিক দ্বারা ইফতার করেছি। আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং ২৩৫৮

দুই,যাহাবায যময়ু ওয়াব তাল্লাতিল ওরুকু,ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, যাহাবায যময়ু ওয়াব তাল্লাতিল ওরুকু,ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ। অর্থাৎ পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, রগ সমূহ ভিজে গেছে, আল্লাহ চাহে তো প্রতিদান নির্ধারিত হয়ে গেছে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৩৫৭ 

ইফতারির সময় উপরোক্ত দুটি দোয়া থেকে যে কোন একটি বা উভয় টি পড়তে পারবে।

যে ব্যক্তি ইফতার করায় তার জন্য দোয়া। 

আফতারা ইন্দাকুমুস সয়ীমুনা ওয়া আকালা ত্বয়ামাকুমুল আবরার ওয়া তানায্যালাত আলায়কুমুল মালায়িকা।

হযরত আনাস ইবনে মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ যখন বাড়িতে নিকট ইফতার করতেন তখন বলতেন, আফতারা ইন্দাকুমুস সয়ীমুনা ওয়া আকালা ত্বয়ামাকুমুল আবরার ওয়া তানায্যালাত আলায়কুমুল মালায়িকা।

অর্থাৎ তোমাদের নিকট রোজাদাররা ইফতার করেছে এবং নেককারগণ তোমাদের খাবার খেয়েছে এবং তোমাদের উপর ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১২১৭৭

ইফতার তারাতাড়ি করা সুন্নত

যখন ইফতারের সময় হয় তখন বিলম্ব না করে দ্রুত ইফতার করে ফেলা সুন্নত।

হযরত সাহল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইফতারকে তাড়াতাড়ি করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে না। বুখারী শরীফ, হাদিস নং ১৯৫৭

ইফতারি এবং মাগরিবের নামাজ দুনোটাই তাড়াতাড়ি করা সুন্নত।

ইফতারি সময় হলে তাড়াতাড়ি ইফতারি করা এবং অনতিবিলম্বে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নেওয়া সুন্নত।

হযরত উমরতা, আবি আত্বিয়াতা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি এবং মাসরুক হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা ঘরে প্রবেশ করলাম।সে তাকে বলল, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুইজন সাহাবী উভয় জন‌ই কল্যাণকে বিনষ্ট করে না। একজন ইফতার এবং মাগরিবের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়েন। আরেকজন ইফতার এবং মাগরিবের নামাজ দেরিতে করেন। অতঃপর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বললেন কে ইফতার এবং মাগরিবের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়েন? সে বলল আব্দুল্লাহ। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন। সহীহ মুসলিম হাদিস নং1099

 খেজুর দিয়ে ইফতারি করা সুন্নত

রসুল সাঃ মাগরিবের নামাজ আদায় করার পূর্বে ইফতারিতে খেজুর খেতেন।

 হযরত সালমান ইবনে আমের বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতারি করে।যদি খেজুর না পায়, তাহলে পানি দিয়ে ইফতারি করে। কেননা পানি হলো পবিত্র কারী।

সুনানে দারেমি হাদিস নং ১৭৪৩

পানি দিয়ে ইফতারি করা সুন্নত

রসুল সাঃ শুধু পানি দিয়ে ইফতারি করেছেন।

এক সাহাবি বর্ননা করেন আমি রসূল সাঃ কে দেখেছি সুকিয়া কূপ থেকে নিজের মাথায় পানি দিচ্ছে। হয়তো গরমের কারণে বা পিপাসার কারণে, এমতাবস্থায় যে তিনি রোজাদার। অতঃপর রোজা থাকা অবস্থায় কাদিদ নামক স্থানে আসলেন। অতঃপর পানি চাইলেন। তারপর ইফতারি করলেন এবং মানুষেরা ও ইফতারি করলো।আর তা ছিল বিজয়ের বছর। মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ২৩১৯০

ইফতার জামাতের সাথে করা সুন্নত

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন, যে দিন সকলে রোজা রাখে সে দিন রোজা। যেদিন সকলে রোজা ভঙ্গ করে সেদিন হলো রোজা ভঙ্গের দিন। যেদিন তোমরা কোরবানি করবে সেদিন কুরবানীর দিন। কিছু আহলে এলেমগন এই হাদিসের ব্যাখ্যা করেছেন, রোজা রাখা এবং রোজা ভঙ্গ করা বড় একটা জামাতের সাথে হয়ে থাকে।তিরমিযি শরিফ হাদিস নং ৬৯৭

রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত কি

রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতারি করালো সেই ব্যক্তি ঐ পরিমাণ সওয়াব পাবে যে পরিমাণ সওয়াব রোজাদার পেয়েছে তবে রোজাদারের সওয়াবের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না।

হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করালো। সে ঐ রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে তবে ওই রোজাদারের সওয়াবের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না। তিরমিজি শরিফ হাদিস নং ৮০৭

ইফতারের বিধান কি?

ইফতারি করা সুন্নত এবং অনেক বরকতের কাজ। আর প্রত্যেক সুন্নত পালনের মধ্যেই রয়েছে উম্মতে মুহাম্মদীর সফলতা।

সংকলনে

মুফতি মুনির হুসাইন

উপসংহার

ইফতারির মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় একটি বিষয়ে আমরা কিছু বিষয় জানতে পেরেছি। যদি উক্ত আলোচনায় কোন ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাবেন আমরা শুধরে নেব। কিংবা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق