কুরআন হাদিসের আলোকে জুমার দিনের ফজিলত ও আমল

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই জুমার দিনে অনেক নেয়ামত দান করেছেন, তাই এই দিনের ফজিলত অন্য সকল দিন থেকে অনেক বেশি। চলুন আমরা এক এক করি জুমার দিনের ফজিলত এবং আমলগুলো জেনে নেই। প্রিয় পাঠক বন্ধু, বর্তমান সময়ের জুমার দিন এবং জুমার নামাজের ব্যাপারে মানুষের এত উদাসীনতা এবং অলসতা যা সকলের জানা।তাই জুমার দিনের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে আলোচনা করা।যেন সত্য অনুসন্ধান কারীগন আলোর দিশা পায়।

কুরআন হাদিসের আলোকে জুমার দিনের ফজিলত ও আমল

সকল দিনের মধ্যে জুমার দিন‌ই শ্রেষ্ঠ

হযরত আসওয়াদ ইবনে আওস রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী করীম বলেছেন তোমাদের দিনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এই দিনে তার রুহ কবজ করা হয়েছে এবং এই দিনে শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং এই দিনের মানুষ জ্ঞানহীন হয়ে পড়বে তথা কিয়ামত হবে সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরুদ আমার নিকট এই দিনেই পেশ করা হয়। সাহাবীরা বললেন ইয়া রাসুল সাঃ আপনি মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পর কিভাবে আপনার নিকট আমাদের দরুদ পেশ করা হবে। নবী করিম সাঃ বললেন তোমরা কি ভাবছো আমি মাটির সাথে মিশে যাবো। নিশ্চয়ই আল্লাহতালা নবীদের শরীর খাওয়াকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছে (আবু দাউদ শরীফ)

 অপর এক হাদীসে বর্ণিত নবী করিম সাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি মৃত্যুবরণ করার পর কিভাবে আমাদের দরুদ ও সালাম এর উত্তর দিবেন। নবী করীম সাঃ বললেন আল্লাহ তায়ালা নবীদের শরীর খাওয়াকে মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন। কেউ আমাকে সালাম দিলে আল্লাহ তা'আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দেন। আর আমি তার সালামের উত্তর দেই।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, জুমার দিন সকল দিনের সর্দার এবং আল্লাহতালার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত, এমনকি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা থেকেও আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক মর্যাদাবান। ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা: ৭৬

প্রতি কদমে এক বছরের ইবাদতের সওয়াব

আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তম রূপে গোসল করে, কোন বাহনে সাওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে অতঃপর খুতবা শ্রবণ করে এবং তার মাঝে কোনো অনর্থক কাজ না করে তাহলে সে তার প্রতি কদমের পরিবর্তে এক বছরের ইবাদতের সওয়াব পাবে। অর্থাৎ এক বছরের রোজার এবং এক বছরের নামাজের সওয়াব পাবে। (তিরমিজি শরীফ)

কবরের আযাব থেকে মুক্তি

নবী করীম সাঃ এরশাদ করেন যে মুসলমান জুমার দিনে বা জুমার রাত্রে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আযাব থেকে নিরাপদে রাখেন। (তিরমিজি শরীফ)

জুমার দিনে দোয়া কবুলের একটি মূহুর্ত রয়েছে।

আল্লাহর রাসূল সাঃ এরশাদ করেছেন জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলমান এই সময়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করলে অবশ্যই তা কবুল হয়। (বুখারী শরীফ)

তবে হাদিসে উল্লেখিত এই মুহূর্তে কখন তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে অনেক মতভেদ রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো দুইটি মত বা সময়, প্রথম টি হল, উক্ত মুহূর্তটি খুতবা পাঠের সময় হতে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।

 দ্বিতীয়টি হল সেই মুহূর্তটি জুমার দিনের শেষ অংশ। দ্বিতীয় মত আলেম সম্প্রদায়ের বড় একটি দল গ্রহণ বা সমর্থন করেছেন। শায়েখ মুহাদ্দিসে দেহলবী বলেন, বিশুদ্ধ বর্ননা মতে, হযরত ফাতেমা রাঃ জুমার দিনে নিজের খাদেমাকে নির্দেশ দিতেন যে, যখন জুমার দিন শেষ হওয়ার উপক্রম হবে। তখন যেন তাকে অবহিত করা হয়। যাতে তিনি এ সময় জিকির ও দোয়ায় লিপ্ত হতে পারেন। (আশিয়্যাতুল লুম‌আত)

নবি সাঃ ইরশাদ করেন সূরা বুরুজে উল্লেখিত শাহিদ শব্দ দ্বারা জুমার দিন উদ্দেশ্য। কেননা অন্য কোনদিন জুমার দিনের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান নয়। এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যে মুহূর্তে কোন মুসলমান দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। আর কোন কিছু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাকে আশ্রয় প্রদান করেন। তিরমিযি শরিফ ২/১৭১

জুমার দিনে বেশি থাকে বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন তোমাদের সকল দিনের মধ্যে জুমার দিন উত্তম। এদিনের সিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে। এদিনে আমার উপর বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করো। কেননা এদিনেই আমার সামনে দরুদ পেশ করা হয়। সাহাবাগণ আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসূল আপনার সামনে কিভাবে পেশ করা হয় অথচ মৃত্যুর পরে তো আপনার হাড্ডি ও থাকবে না। হুজুর সাঃ বললেন আল্লাহ তায়ালা চিরদিনের জন্য জমিনের উপর নবীগনের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন। আবু দাউদ শরীফ ১/১৫০

একবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু আয়াত اليوم اكملت لكم دينكم পাঠ করলেন। তখন তার নিকট একজন ইহুদী বসা ছিল। সে বলল আমাদের উপর যদি এইরুপ আয়াত অবতীর্ণ হতো তাহলে সেই দিনটিকে আমরা ঈদের দিন বানিয়ে নিতাম। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন এই আয়াতটি দুই ঈদের দিন অবতীর্ণ হয়েছে। জুমার দিন ও আরাফার দিন। অর্থাৎ আমাদের নতুন করে ঈদ বানানোর কি প্রয়োজন যখন সে দিনটিতে এমনিতেই দুই ঈদ ছিল। বুখারী শরীফ পৃ:৬৬২

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, জুমার রাত্র একটি উজ্জ্বল রজনী আর জুমার দিন হল একটি উজ্জ্বল দিবস। মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা: ১২১

প্রতিদিন দুপুরের সময় জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি করা হয় তবে জুমার দিনে জুমার বরকতে তা তীব্র করা হয় না। ইহিয়াউল উলুম খ:১ পৃষ্ঠা ২৮৬

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক জুমার দিন এরশাদ করলেন হে মুসলমানগণ! এই দিনটিকে আল্লাহতালা ঈদের দিন নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং এই দিনে তোমরা গোসল করো এবং সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার কর। আর এই দিনে মিসওয়াক করাকে আবশ্যক করে নাও। ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা: ৭৭

এই দিনে আল্লাহ তায়ালা দীদার মিলবে 

কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা জান্নাতের অধিকারীদেরকে জান্নাতে এবং জাহান্নামের উপযুক্তদেরকে জাহান্নামে পাঠাবেন তখনো এই জুমার দিন হবে। যদিও সেখানে দিনরাত থাকবে না তথাপি আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দিনরাতির পরিমাণ ও ঘন্টা গণনা শিক্ষা দিবেন। 

সুতরাং যখন জুম্মার দিন আসবে এবং সে সময় মুসলমানরা জুম্মার নামাজের জন্য বের হতো সেই সময় হবে তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে হে জান্নাতের অধিবাসীগণ মাজীদ ময়দানে চলো।এটা এমন একটি ময়দান হবে যার দীর্ঘ ও প্রস্থের পরিমাণ আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কেউ অবগত নয়।

সেখানে আকাশ সমান স্তূপিকৃত মেশকের পাহাড় হবে। নবীগণকে নূরের মেম্বারে উপবেশন করানো হবে। আর মুমিনগণকে বসানো হবে ইয়াকুতের নির্মিত চেয়ারে।

যখন সকলে তাদের নিজ নিজ স্থানে উপবেশন করবেন, তখন আল্লাহ তাআলা এমন একটি বাতাস প্রবাহিত করবেন যার ফলে স্তুপিকৃত মেশকগুলো উড়ে গিয়ে তাদের কাপড় ও মুখ ও চুলে লাগবে। আর এই বাতাস মেশক লাগানোর পদ্ধতি সেই নারী থেকেও বেশি জানে যাকে সারা দুনিয়ার খুশবু প্রদান করা হয়েছে। এবং সে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তা ব্যবহার করছে।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা আরশ বহন করি ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন, আরশকে সকলের মাঝে নিয়ে রাখো। তারপর আল্লাহ তায়ালা সকল লোকদের লক্ষ্য করে বলবেন, হে আমার বান্দাগণ যারা আমাকে না দেখেও গায়েবের প্রতি ঈমান এনেছ এবং আমার নবীগণকে সত্য বলে স্বীকার করেছো আর আমার নির্দেশ পালন করেছো তারা আজ আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করো আমি তা প্রদান করব। আজকের দিন মাজিদ নিয়ামত তথা পুরস্কার বৃদ্ধির দিন।

তখন সকল মানুষ সমস্বরে বলবে হে আমাদের প্রতিপালক আমরা আপনার উপর সন্তুষ্ট আপনিও আমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তাআলা বলবেন হে জান্নাতবাসী করুন আমি যদি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট না হতাম তাহলে তোমাদেরকে আমার জান্নাতের স্থান দিতাম না। অন্য কিছু চাও আজকের এই দিনটি হল অধিক দানের দিন।

তখন সকলে এক সাথে বলবে হে পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে আপনার সৌন্দর্য প্রদর্শন করুন। আমরা আপনার পবিত্র সত্তাকে স্বচক্ষে দেখতে চাই। তখন আল্লাহ তা'আলা পর্দা সরিয়ে তাদের সকলের সামনে প্রকাশিত হবেন। আর সিও জগতজোড়া সৌন্দর্য দ্বারা তাদেরকে বেষ্টন করে ফেলবেন। জান্নাতীদের জন্য যদি এই আদেশ পূর্ব থেকে না হতো যে, "তাদেরকে কখনো জ্বালানো হবে না"তাহলে তারা কখনো উক্ত নূরের তাপ সহ্য করতে পারত না, ফলে তারা জ্বলে যেত।

অতঃপর তাদেরকে বলবেন এখন তোমরা নিজ নিজ স্থানে ফিরে যাও। তখন আল্লাহ তা'আলা হাকীকে নূরের প্রভাবে তাদের সৌন্দর্য ও কামনীয়তা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাই তারা যখন তাদেরই স্ত্রীদের নিকট আগমন করবে তখন স্ত্রীগন ও তাদেরকে দেখতে পাবে না। এবং তারাও স্ত্রীদেরকে দেখতে পাবে না।

কিছুক্ষণ পর যখন তাদের থেকে আবৃতকারী নূর চলে যাবে তখন একে অপরকে দেখতে পাবে। তাদের স্ত্রীগন বলবে যাওয়ার সময় তোমার যে আকৃতি ছিল এখন আর তা নেই। অর্থাৎ তার চেয়ে হাজার হাজার গুন সৌন্দর্য তোমার বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারা বলবে হ্যাঁ এটা এই কারণেই যে আল্লাহ তা'আলা তাঁর পবিত্র সত্তাকে আমাদের উপর তার নূর প্রকাশ করেছেন আর আমরা স্বচক্ষে তা প্রত্যক্ষ করেছি। (শারহু সিফরিস সায়াদাহ)

পরিশেষে বলি জুমার দিনের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিস উল্লেখ করা হলো।আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এই হাদিস শরিফে উসিলায় তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুক...

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق