আজ সমাধান মিডিয়া আপনাদের সামনে চুল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করবে যদি আপনি চুল সংক্রান্ত বিধিবিধান জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
somadanmedia.com |
মাসয়ালা সমূহ
১. মাসআলাঃ সম্পূর্ণ মাথায় কানের লতি বা তার চেয়ে কিছুটা নিচ পর্যন্ত দীর্ঘ চুল রাখা সুন্নত। আর মাথা মুণ্ডন করলে সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত।। মাথার চুল কাটাও জায়েয, তবে কাটলে সবগুলো চুল (সমানভাবে) কাটতে হবে। মাথার সামনের ভাগের চুল কিছুটা বড় রাখা, যা বর্তমান যুগে ফ্যাশন হিসেবে প্রচলিত রয়েছে তা জায়েয নেই। এমনিভাবে কিছু অংশ মুণ্ডন করা এবং কিছু অংশ রেখে দেওয়া জায়েয নয়। এতে বুঝা গেল যে, বর্তমানে যেভাবে। হিন্নিকাট চুল রাখা বা আধুনিক ফ্যাশনে চুল কাটা বা মাথাকে গোলাকার দেখবার জন্য সামনের দিকের চুল লম্বা রাখার প্রচলন রয়েছে তা জায়েয নয়।
২. মাসআলা: চুল অনেক বড় রেখে মহিলাদের মত করে খোঁপা বাঁধা (পুরুষদের জন্য) জায়েয নয়।
৩. মাসআলাঃ মহিলাদের মাথা মুণ্ডন করা, চুল কাটা হারাম। হাদীসে এ সম্পর্কে অভিসম্পাত করা হয়েছে।
৪. মাসআলা: ঠোঁটের চামড়ার সাথে মিশিয়ে সমান করে মোচ কাটা সুন্নত। মোচ মুণ্ডন করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বিদআত বলেন, আবার কেউ জায়েযও বলেন। তবে মুণ্ডন না করাই হল সতর্কতা।
৫. মাসআলাঃ মোচ লম্বা না রেখে মোচের দুই পার্শ্ব লম্বা করা জায়েয।
৬. মাসআলা: দাড়ি মুত্তন করা ও কর্তন করা হারাম। অবশ্য এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলা জায়েয। এমনিভাবে দাড়িকে গোলাকার ও সমান। করার জন্য সবদিক থেকে কিছু কিছু কাটাও জায়েয।
৭. মাসআলাঃ গণ্ড দেশের উপর উদগত চুলসমূহ হেঁটে ফেলে দাড়ি সমান। করা জায়েয। এমনিভাবে ভ্রযুগল সমান করার জন্য তার কিছুটা অংশ কেটে ফেলাও জায়েয।
৮. মাসআলা: গলার চুল মুণ্ডন না করা চাই। তবে ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এতে কোন অসুবিধা নেই।
৯. মাসআলা : নিচের ঠোঁটের নিম দাড়ির দু'পাশের পশম মুণ্ডন করাকে ফিকাহবিদগণ বিদআত বলেছেন। সুতরাং এরূপ না করা চাই। এমনিভাবে ঘাড়ের পশম ছাঁটাকেও ফিকাহবিদগণ মাকরহ বলেছেন।
১০. মাসআলা: সৌন্দর্য রক্ষার্থে সাদা চুল বাছাই করে ফেলে দেওয়া নিষিদ্ধ। অবশ্য শত্রুর মনে ভয়-ভীতি সঞ্চারিত করার উদ্দেশ্যে মুজাহিদের সাদা চুল বেছে ফেলা উত্তম।
১১. মাসআলাঃ নাকের পশম উপড়ে ফেলা উচিত নয়; বরং তা কাঁচি দ্বারা কাটা চাই।
১২. মাসআলা: বুক ও পিঠের পশম কাট-ছাঁট করা জায়েয, তবে তা নিয়ম বহির্ভূত ও অনুত্তম কাজ।
১৩. মাসআলা: পুরুষদের নাভির নিচের পাশ ক্ষুর ইত্যাদি দ্বারা মুণ্ডন। করার সময় নাভির নিচ থেকে মুণ্ডন শুরু করবে। মুগুনের পরিবর্তে হরিতাল ইত্যাদি বা অন্য কোন লোমনাশক পদার্থ দ্বারাও তা পরিষ্কার করা জায়েয। মহিলাদের জন্য এর সুন্নত মুতাবিক পদ্ধতি হল ক্ষুর ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে নখ বা চিমটি দ্বারা উপড়ে ফেলা।
১৪. মাসআলা : বগলের পশম চিমটি ইত্যাদি দ্বারা উপড়ে ফেলা উত্তম। তবে ক্ষুর ইত্যাদি দ্বারা মুণ্ডন করাও জায়েয।
১৫. মাসআলা: উপরিউক্ত পশমসমূহ ব্যতিরেকে শরীরের আরও বিভিন্ন স্থানের পশমসমূহ মুণ্ডন করা ও রাখা উভয়টি জায়েয। (কিয়াস নির্ভর মাসআলা)
১৬. মাসআলা: পায়ের নখ কাটাও সুন্নত। অবশ্য মুজাহিদের জন্য দারুল হরবে নখ ও মোচ না কাটা মুসতাহাব।
১৭. মাসআলা: হাতের নখ এভাবে কাটা উত্তমঃ ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে শুরু করে কনিষ্ঠা আঙ্গুল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কাটবে। তারপর বাম হাতের কণিষ্ঠা আঙ্গুল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের নখগুলো কেটে তারপর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে সমাপ্ত করবে। পায়ের নখ কাটার সময় ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে শুরু করে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলিতে সমাপ্ত করবে। এরূপ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নখ কাটা উত্তম। তবে এর ব্যতিক্রম করাও জায়েয।
১৮. মাসআলা: কাটা নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা চাই। যদি মাটিতে না পোঁতা হয়, তবে কোন সংরক্ষিত স্থানে ফেলে দেওয়াও জায়েয। তবে নাপাক ও আবর্জনাময় স্থানে ফেলবে না। এতে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
১৯. মাসআলা: দাঁত দ্বারা নখ কাটা মাকরূহ)। এতে শ্বেতরোগ হয়ে থাকে।
২০. মাসআলা: গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় চুল, নখ কাটা এবং নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করা মাকরুহ।
২১. মাসআলা: সপ্তাহে একবার নাভির নিচের পশম ও বগলের পশম পরিষ্কার করা এবং মোচ, নখ ইত্যাদি কাটা, গোসল করে ও ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হওয়া উত্তম। তবে সবচেয়ে উত্তম হল জুমুআর দিন এভাবে পাক-সাফ হওয়া। অর্থাৎ, জুমুআর নামাযের পূর্বে এভাবে পাক-সাফ হয়ে জুমুআর নামাযে যাওয়া। প্রতি সপ্তাহে সম্ভব না হলে অন্ততঃ পনের দিনে একবার করবে। এসব পরিষ্কার। করার সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন। এর চেয়ে বেশি বিলম্ব করার অবকাশ নেই। যদি চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় এবং উপরিউক্ত বিষয়াদি থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন না করে, তবে গুনাহগার হবে।
উপসংহার
উল্লেখিত মাসালা গুলো হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর রহঃ রচিত বেহেস্তি গাওহার কিতাব থেকে সংকলন করা হয়েছে। আশা করি আমরা উপর উল্লেখিত মাসয়ালা সমূহের উপর আমল করতে সচেষ্ট হব ইনশাআল্লাহ।