ইসলামে অভিশাপের বিধান ও পরিনতি

লানত (لعنت) বা অভিশাপ‎‫ এর অর্থ কাউকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া বা আল্লাহর‬‎ গজব এবং ক্রোধে পতিত হওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা করা বা দোজুখী বলে সম্বোধন করা। বা আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রহমত থেকে বিতারিত করুন কিংবা আল্লাহ 'তা'আলার গজব পতিত হোক কিংবা জাহান্নামে নিপতিত হোক। 

ইসলামে অভিশাপের বিধান ও পরিনতি

অভিশাপের তিনটি বস্তু আছে। 

প্রথম, যে আ'মাল এবং স্বভাবের জন্য কুরআন ও হাদীছে অভিশাপ দেয়া হয়েছে উক্ত গুণাবলী সম্বলিতদের ব্যাপকভাবে অভিশাপ ‎‫لعنت اللهِ عَلَى الْكَافِرِينَ لَعْنَتُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ কাফের এবং যালেমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক। এটা সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। 

দ্বিতীয়, কোন বিশেষ ভ্রষ্ট দলকে ভ্রষ্টতার জন্য লানত করা যে ইয়াহুদিরা নাসারাদের উপর লানত কিংবা রাফেযী ও খারিজীদের প্রতি অভিশাপ কিংবা সুদখুরদের উপর অভিশাপ। ইহাও সর্বসম্মত জায়িয। 

তৃতীয়, কোন বিশেষ ব্যক্তি যায়েদ ও উমর কিংবা নির্দিষ্ট দল যেমন অমুক শহরের বাসিন্দা বা কোন বংশ বা গোত্রের উপর অভিসম্পাত করা অত্যন্ত বিপৎসঙ্কুল ব্যাপার। এতে সতর্কতা অবলম্বন করা চাই। 

কেননা যে কর্মের কারণে কোন ব্যক্তি অভিম্পাতের উপযুক্ত হয় প্রথমে তো উহার পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তা প্রতিপাদনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৃঢ় হয় না যে, অমুক ব্যক্তি কিংবা সম্প্রদায় উক্ত কাজটি করেছে। অধিকাংশই উহাতে মন্দ ধারণা ও ভুল সংবাদের প্রভাব থাকে তাহকীক ব্যতীত কেবল ধারনার উপর অভিসম্পাত করা হারাম। 

দ্বিতীয়তঃ সেই মন্দ কর্মের উপরও অভিসম্পাদ তখনই উপযুক্ত হয় যখন জানা থাকে যে, সে ব্যক্তি উহা থেকে তাওবা করেনি এবং ভবিষ্যতে মৃত্যুর পূর্বেও তাওবা করবে না। আর ইহা স্পষ্ট যে, কোন বিশেষ ব্যক্তি বা সম্প্রদায় সম্পর্কে এইরূপ দৃঢ় জ্ঞান লাভ করা যে, সে তাওবা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না, ইহা ওহী ব্যতীত অসম্ভব। কাজেই ইহার হক অধিকার কেবল নবী ও রসূলের লাভ হতে পারে যে, কোন বিশেষ ব্যক্তি কিংবা সম্প্রদায় সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে জেনে বলবেন যে, অমুক কবীরা গুনাহে লিপ্ত রয়েছে এবং তাওবা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না, তার উপর অভিসম্পাত করবে। অন্য কারো এই হক- অধিকার নেই। এ জন্যই অধিকাংশ আলিম ইয়াযিদের উপর অভিসম্পাত করতে নিষেধ করেছেন। (ইহইয়াউল উলূম ১০২ পৃষ্ঠা)

অভিশাপের পরিনতি 

মোটকথা, কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত বিশেষ ব্যক্তি বা সম্প্রদায় ব্যতীত অভিসম্পাত করা হারাম। হাদীছে শরীফে আছে, যার উপর অভিসম্পাত করা হয় যদি সে ব্যক্তি অভিসম্পাতের উপযুক্ত না হয়, তাহলে সে অভিসম্পাত অভিশাপ বর্ষণকারীর উপর পতিত হয়। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ) 

হাদীছ শরীফে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আল্লাহ তা'আলার গজব, ক্রোধ বা জাহান্নামের অভিশাপ বা বদ-দু'আ কারো জন্য কর না। -(আবূ দাউদ তিরমিযী) 

অন্য হাদীছে আছে যে, মুমিনকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার ন্যায় গুনাহ। (বুখারী ও মুসলিম)। যেমন কোন মুসলমানকে অভিসম্পাত করা জায়েয নেই তেমন কোন নির্দিষ্ট কাফিরকে অভিসম্পাত করাও নাজায়েয, এমনকি কোন জীব জন্তুকেও না। 

হাদীছ শরীফে আছে, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির সঙ্গে সফরে ছিলেন, ঐ ব্যক্তি উটকে অভিসম্পাত করলে তিনি বললেন যে, উটকে তুমি অভিসম্পাত করেছো কাজেই ঐ উটে চড়ে আমাদের সঙ্গে চল না।

প্রাপ্ত উপদেশ 

 এ স্বাদহীন এবং অনুপকারী গুনাহর মধ্যে হাজার হাজার মুসলমান বিশেষ করে মহিলাগণ লিপ্ত রয়েছে। তাদের মুখে আল্লাহর মার, আল্লাহর অভিশাপ, রহমত থেকে বঞ্চিত, আগুন লাগুক, আল্লাহর গজব পড়ুক ইত্যাদি শব্দ এমনভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে যে, কথায় কথায় উক্ত শব্দগুলো উচ্চারিত হয়। অথচ এ সকল শব্দ অভিসম্পাত করার শব্দ বলে বিবেচিত। এগুলো ব্যবহার হারাম এবং এগুলো যারা বলে তাদের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ তা'আলা সকল মুসলমানকে তা থেকে রক্ষা করুন।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment