আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি আদায় করার সময় শয়তান আমাদেরকে ধোকা দিয়ে নষ্ট করে দেয়। এভাবে যে আমাদের নিয়তকে পরিবর্তন করে দেয়। শয়তান বলে যদি নামাজ পড়ো তাহলে মানুষ দেখবে এবং তোমাকে নামাজি বলবে। এই মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়লে কিংবা অন্য কোন ইবাদত করলে সে এবাদত কোন লাভজনক হয় না। চলুন আমরা লোক দেখানো এবাদতে পরিণতি সম্পর্কে জেনে আসি।
![]() |
somadanmedia.com |
লোক দেখানো আমলের করুন পরিণতি
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ'তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, সে হবে একজন (ধর্মযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী) শহীদ। তাকে আল্লাহর নিকট উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ পাক তাকে (দুনিয়াতে প্রদত্ত) নে'মতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সেও তা স্মরণ করবে। এরপর আল্লাহ তা'আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়াতে তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য (কাফেরদের সাথে) লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তোমাকে যেন বীর-বাহাদুর বলা হয়, সেজন্য তুমি লড়াই করেছ। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) তোমাকে দুনিয়াতে তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর সে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দ্বীনী ইল্ম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেছে (এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে)। তাকে আল্লাহ পাকের দরবারে হাযির করা হবে। অতঃপর তিনি তাকে নে'মতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নে'মতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, আমি স্বয়ং দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছি এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরআন তেলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং তুমি এজন্য ইল্ম শিক্ষা করেছ, যেন তোমাকে 'বিদ্বান' বলা হয় এবং এজন্য কুরআন অধ্যয়ন করেছ, যাতে তোমাকে 'ক্বারী' বলা হয়। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) তোমাকে বিদ্বান ও ক্বারীও বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। সুতরাং তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর এমন এক ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহ তা'আলা বিপুল ধন-সম্পদ দান করে বিত্তবান করেছিলেন। তাকে আল্লাহ তা'আলা প্রথমে প্রদত্ত নে'মতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সে তখন সমস্ত নে'মতের কথা অকপটে স্বীকার করবে। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সমস্ত নে'মতের শুকরিয়ায় তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে ধন- সম্পদ ব্যয় করলে তুমি সন্তুষ্ট হবে, তোমার সন্তুষ্টির জন্য সেসব খাতের একটি পথেও ব্যয় করতে ছাড়িনি। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছিলে, যাতে তোমাকে বলা হয় যে, সে একজন 'দানবীর'। সুতরাং (তোমার অভিপ্রায় অনুসারে দুনিয়াতে) তোমাকে 'দানবীর' বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। নির্দেশ মোতাবেক তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (মুসলিম হা/১৯০৫ 'নেতৃত্ব' অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৩; মিশকাত-আলবানী হা/২০৫, 'ইলম' অধ্যায়)।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আমি আমার উম্মতের জন্য ছোট শিরকের ভয় যত করছি, এত ভয় অন্য কোনো বিষয়ে করি না। উপস্থিত সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ছোট শিরক কি? হুজুর সাঃ উত্তর দিলেন, তা হচ্ছে- রিয়া।
রিয়া অর্থ হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদত তথা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ব্যতিরেখে মানুষকে দেখানো উদ্দেশ্যে এবাদত করার নামই রিয়া।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, দুর্ভোগ ওই সমস্ত মুসল্লিদের জন্য যারা নামাজের মধ্যে অলসতা করে এবং যারা লোক দেখানোর ইবাদত করে। (সূরা মাউন ৩-৪)
হাদিস শরিফে হজরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন- যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে, আল্লাহ তার বদলে “কেয়ামতের দিন” তাকে শুনিয়ে দিবেন।আর যে লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে “কেয়ামতের দিন” তাকে দেখিয়ে দিবেন। অর্থাৎ তিনি এসব লোকদেরকে কেয়ামতের দিন মানুষের সামনে অপমানিত করবেন এবং কঠোর শাস্তি দিবেন। (বুখারি ও মুসলিম)
শিক্ষা:
লোক দেখানো আমলের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই সর্বদা আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে এবং প্রতিটি কাজ একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে। এবং লোক দেখানো সমস্ত কাজকর্ম থেকে বিশেষ করে লোক দেখানো ইবাদত থেকে বিরত থাকতে হবে আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।