যে দোয়া পাঠ করলে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মিলে

 দোয়া অনেক উপকারী। দোয়ার মধ্যে কিছু আছে প্রতিরক্ষামূলক আর কিছু প্রতিষেধক। প্রতিরক্ষামূলক দোয়া হলো- প্রত্যেক মুসলিম মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিয়ে, তাঁর কাছে বিনীত হয়ে দোয়া করবে, তিনি যেন তাকে সকল দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা করেন এবং তার ও দুশ্চিন্তার মাঝে দূরত্ব তৈরি করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সর্বদা এমনটা করতেন। 

যে দোয়া পাঠ করলে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মিলে
somadanmedia.com

এক, দুশ্চিন্তা না আসার দোয়া 

রাসুলের খাদিম আনাস বিন মালিক রাঃ এ ব্যাপারে বর্ণনা করেন-

كنت أخدم رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا نزل فكنت أسمعه كثيراً يقول: اللهمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمَ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُيْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

 অর্থ:- আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমত করতাম। যখনই তিনি কোনো মনজিলে অবতরণ করতেন, আমি তাঁকে প্রায়ই বলতে শুনতাম:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمَّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

অর্থ:- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অস্বস্তি, দুশ্চিন্তা, অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, ভীরুতা, ঋণের ভার এবং মানুষের আধিপত্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।( বুখারী শরীফ- ২৮৯৩)

এই দোয়াটি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার পূর্বে তা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী।আর প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে সহজ।

দুশ্চিন্তা দূর করার প্রথম দোয়া

ভবিষ্যতের কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী দোয়ার একটি হলো, যা রা‌সুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন। আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহ আনহু বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِيدِينِي الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّخَيْرٍ وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٌّ.

অর্থ:- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, "আল্লাহ! আপনি আমার দ্বীন ইসলাহ (পরিশুদ্ধ) করে দিন, যে দ্বীনে আমার রক্ষাকবচ; আপনি সংশোধন করে দিন আমার দুনিয়াকে, যেথায় আমার জীবিকা (রয়েছে); আপনি ইসলাহ (কল্যাণকর) করে দিন আমার আখিরাতকে, যেখানে আমার প্রত্যাবর্তনস্থল (রয়েছে); আপনি প্রতিটি কল্যাণময় কাজের জন্য আমার জীবনকে দীর্ঘায়িত করে দিন এবং আপনি আমার মৃত্যুকে সব মন্দ (ও অনিষ্টকর বিষয়) থেকে আরামদায়ক বানিয়ে দিন।

দুশ্চিন্তা দূর করার দিতীয় দোয়া

যদি কষ্ট ও পেরেশানি কোনো ব্যক্তিকে গ্রাসও করে ফেলে, তখনও দোয়ার দরজা বন্ধ না হয়ে তার জন্য খোলা থাকে। মহা দয়ালু আল্লাহ তা'আলার দরজায় যখন প্রার্থনা করা হয়, তখন তিনি দান করেন এবং দোয়ার জবাব দেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ 

অর্থ:- আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ইমান আনে। আশা করা যায়, তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা- ১৮৬)

দুশ্চিন্তা দূর করার তৃতীয় দোয়া

দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর করা এবং কষ্টের পর স্বস্তি আসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়ার একটি হলো সেই প্রসিদ্ধ মহান দু'আ, যা শেখা ও মুখস্থ করার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম সেই সব লোককে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যারাই দোয়াটি শুনবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَا أَصَابَ أَحَداً قَظُ هَمٌّ وَلَا حَزَنُ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أُمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِي حُكْمُكَ عَدْلٌ فِي قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ ربيع قلبي وَنُورَ صَدْرِي وَجِلاءَ حُزْنِي وَذَهَابَ هَمِّي إِلَّا أَذْهَبَ اللَّهُ هَنَّهُ وَخَزَانَهُ وَأَبْدَلَهُ مَكَانَهُ فَرَجًا قَالَ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَا نَتَعَلَّمُهَا فَقَالَ بَلَى يَنْبَغِي لِمَنْ سَمِعَهَا أَنْ يَتَعَلَّمَهَا

অর্থ:- যে ব্যক্তিকে কখনো কোনো দুশ্চিন্তা বা দুঃখ-কষ্ট আক্রান্ত করেছে, সে যদি বলে, (অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার পুত্র, তোমার বান্দীর পুত্র। আমি তোমার হাতের মুঠে, আমার অদৃষ্ট তোমার হাতে। তোমার হুকুম আমার ওপর কার্যকর, তোমার আদেশ আমার পক্ষে ন্যায়। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার সেসব নামের অসিলায়, যাতে তুমি নিজেকে অভিহিত করেছ অথবা তুমি তোমার কিতাবে নাজিল করেছ কিংবা তুমি তোমার সৃষ্টির কাউকেও তা শিক্ষা দিয়েছ অথবা তুমি তোমার বান্দাদের ওপর ইলহাম (অদৃশ্য অবস্থায় থেকে অন্তরে কথা বসিয়ে দেয়া) করেছ কিংবা তুমি গায়েবের পর্দায় তা তোমার কাছে অদৃশ্য রেখেছ- তুমি কুরআনকে আমার অন্তরের বসন্ত ও বক্ষের নুর এবং দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তা দূর করার মাধ্যম বানিয়ে দাও।) 

যে বান্দা যখনই তা পড়বে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেবেন এবং তার পরিবর্তে মনে নিশ্চিন্ততা (প্রশান্তি) দান করবেন। বর্ণনাকারী বলেন, বলা হল ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা কি তা শিখব না? তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই, যে ব্যক্তিই এটি শুনবে, তার উচিত এই দুআ শিখে নেওয়া। (মুসনাদে আহমদ- ৩৭১২)

মহান এই হাদিস বান্দার এই স্বীকারোক্তিকে ধারণ করছে যে, সে আল্লাহর বান্দা; আল্লাহ তাআলা থেকে সে অমুখাপেক্ষী নয়; তিনি ছাড়া তার কোনো মনিব নেই; সে রবের ইবাদাতকে আঁকড়ে ধরেছে; রবের সামনে অনুগত হয়েছে এবং রবের আদেশ ও নিষেধকে মেনে নিয়েছে; আল্লাহ তাআলা তাকে যেভাবে ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। এই হাদিসে রয়েছে আল্লাহর বিধানের সামনে আত্মসমর্পণ ও তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্টির ঘোষণা। অতঃপর আল্লাহ তাআলার সমস্ত নামের দ্বারা অসিলা গ্রহণ করে কাঙ্ক্ষিত প্রার্থনা এবং প্রয়োজনীয় বিষয় কামনা।

দুশ্চিন্তা দূর করার চতুর্থ দোয়া

নবিজির হাদিসে দুশ্চিন্তা, পেরেশানি ও মানসিক চাপের ব্যাপারে আরও দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর কিছু এখানে উল্লেখ করছি-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ عِنْدَ الْكَرْبِ

ইবনু আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সংকটের সময় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুআ পড়তেন:

لا إله إلا اللهُ الْعَظِيمُ الحَلِيمُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ

অর্থ:- আল্লাহ ছাড়া কোনো (প্রকৃত) ইলাহ নেই, যিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও অশেষ ধৈর্যশীল; আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই, যিনি মহান আরশের রব; আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, যিনি আসমান ও জমিনের প্রতিপালক এবং সম্মানিত আরশের মালিক। (বুখারী শরীফ-৬৩৪৬)

দুশ্চিন্তা দূর করার পঞ্চম দোয়া

وعن أنس رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا حزبه أمر قال

অর্থ:- আনাস রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে কোনো কঠিন বিষয় উপস্থিত হলে বলতেন:

يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيتُ

অর্থ:- হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! তোমার রহমতের অসিলায় আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি। (তিরমিযি- ৩৫২৪)

দুশ্চিন্তা দূর করার ষষ্ঠ দোয়া

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ قَالَتْ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُعَلِّمُكِ كَلِمَاتٍ تَقُولِينَهُنَّ عِنْدَ الْكَرْبِ أَوْ فِي الْكَرْبِ

আসমা বিনতু উমায়িস রাজিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবো না, যা তুমি বিপদাপদের সময় পাঠ করবে? তা হচ্ছে-

اللهُ اللَّهُ رَبِّي لَا أُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا

আল্লাহ, আল্লাহ, আমার প্রতিপালক, আমি তাঁর সাথে কোনো কিছুকেই শরিক করি না। (আবু দাউদ-১৫২৫)

দুশ্চিন্তা দূর করার সপ্তম দোয়া

এই বিষয়ে আরেকটি উপকারী দোয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন-

دَعَوَاتُ الْمَكْرُوبِ

বিপদগ্রস্ত লোকের দুআ হলো:

اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ وَأَصْلِحُ لِي شَأْنِي كُلَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ

হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতের প্রত্যাশী; অতএব, আপনি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নফসের হাতে সমর্পণ করবেন না। আর আপনি আমার সব ব্যাপার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আপনি ছাড়া আর কোনো (প্রকৃত) ইলাহ নেই। (আবু দাউদ- ৫০৯০)

কোনো বান্দা যখন আল্লাহর সামনে অন্তরকে হাজির করে ও সত্য নিয়ত এবং দোয়া কবুলের সকল উপায়-উপকরণ অর্জনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার সাথে এই দোয়াগুলো পাঠ করতে থাকবে, আল্লাহ তাআলা তার দুআ, আশা ও কাজ বাস্তবায়ন করে দেবেন; তার দুশ্চিন্তাকে খুশি ও আনন্দে বদলে দেবেন।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق