সূরা হুমাজাতে বর্ণিত তিনটি গুনাহ ও তার পরিণতি

সূরা হুমাজাহ মক্কায় অবতীর্ণ নয় আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা যা কোরআনে পাকের সূরার ক্রম ধরায় ১০৪ এবং ৩০ পারায়, সূরা আসরের পর এবং সূরা ফিলের আগে অবস্থিত। সূরা আসরের মধ্যে এমন চারটি মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং বঞ্চিত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। এ সূরার মধ্যে এমন তিনটি জঘন্য অভ্যাসের আলোচনা হয়েছে যা মানুষের মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে দেয়। সূরা আসরের মধ্যে সময় বিনষ্ট করার উপর সতর্ক করা হয়েছিল এবং তার থেকে বাঁচার জন্য চারটি মূলনীতি বর্ণিত হয়েছিল। এই সূরায় মনুষ্যত্ব ধ্বংস করে এমন কতগুলো অভ্যাসের আলোচনা হয়েছে। যেন মানুষ এ ধরনের অপবিত্র অভ্যাসসমূহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারে ।

সূরা হুমাজাতে বর্ণিত তিনটি গুনাহ ও তার পরিণতি

এ সুরায় বর্ণিত মানুষের তিনটি জঘন্য গুনাহ

এই সূরায়ে তিনটি জঘন্য গুনাহের বর্ননা ও তার শাস্তি এবং তার তীব্রতা বর্ণিত হয়েছে। গুনাহ তিনটি হচ্ছে।

এক, পশ্চাতে কারো দোষ বর্ণনা করা। একে গিবত বলা হয়, যা এক জঘন্য গুনাহ (সুরা হুজরাতের ১২নং আয়াতে যাকে কঠিন পাপ বলা হয়েছে)।

 দুই, কাউকে চেহারা-আকৃতি, বংশ-প্রতিপত্তি ও ধর্মের দিক থেকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। এটা মুনাফিকদের অভ্যাস। তারা দরিদ্র মুসলমানদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। তেমনিভাবে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা হক দীন নিয়ে ঠাট্টা করত।

তিন, দুনিয়ার মোহ, যাতে মত্ত হয়ে মানুষ আল্লাহর হক ভুলে যায়। এমনকি বান্দার হকও ভুলে যায়। তার অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসার কোনো স্থান থাকে না। যারা এব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল, সুরার শেষে তাদের পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে। (৫-৮)

হুমাযা, লুমাযা, জময়ে মাল এর ব্যাক্ষা

পেছনে নিন্দা করা ও সামনে দোষ বর্ণনা করা অধিকাংশ তাফসির কারক এর মতে। ‘হুমাযা,এর অর্থ গীবত ও পরনিন্দা করা এবং‘লুমাযা, এর অর্থ সামনাসামনি দোষারোপ করা ও মন্দ বলা। কেউ বলেন, হুযাহ বলা হয় মানুষের বংশের দিকে সম্বোধন করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা যেমন অমুক ব্যক্তি খারাপ তার মা এমন ছিল, তার পিতা এমন ছিল, তার বংশ ভালো না ইত্যাদি, এবং লুমাযাহ বলা হয় হাত পায়ের ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে কাউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করাকে। ইবনে কাসির বলেন, হুমাযাহ হল জিব্বাহ দ্বারা কারো খারাপি বর্ণনা করা এবং লুমাযাহ বলা হয় কাজের মাধ্যমে কারো অন্তরে কষ্ট দেওয়া। মোটকথা ওপর উল্লেখিত সমস্ত গুনা গুলোই বড় গুনাহ।

পেছনে নিন্দা

পশ্চাতে পরনিন্দার শাস্তির কথা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এর কারণ এরূপ হতে পারে যে, এ গুনাহে মশগুল হওয়ার পথে সামনে কোনো বাধা থাকে না। যে এতে মশগুল হয় সে কেবল এগিয়েই চলে। ফলে গুনাহ বৃহত্তর ও অধিকতর হতে থাকে। সম্মুখের নিন্দা এরূপ নয়। এতে প্রতিপক্ষও বাধা দিতে প্রস্তুত থাকে। ফলে গুনাহ দীর্ঘ হয় না। এ ছাড়া কারও পশ্চাতে নিন্দা করা একারণেও বড় অন্যায় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানতেও পারেনা যে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। ফলে সে সাফাই পেশ করার সুযোগ পায় না। 

সামনে দোষ বর্ণনা করা

গুনাহের দিক দিয়ে সম্মুখে নিন্দা ও গুরুতর। যার মুখোমুখি নিন্দা করা হয় তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা হয়। এর দ্বারা কষ্টও বেশি পৌঁছে। ফলে শাস্তিও হয় গুরুতর। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

شرار عباد الله المشاؤون بالنبيبة المفرقون

بين الاحبة الباغون للبراء العنت

অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম তারা যারা পরনিন্দা করে বন্ধুদের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে এবং নিরপরাধ লোকদের দোষ খুঁজে ফেরে। 

এই হাদিসের মধ্যে নিরপরাধ লোকদের দোষ অন্বেষণকারীদেরকে আল্লাহর নিকৃষ্ট বান্দা বলা হয়েছে। এমন জঘন্য অপরাধ যা আমাদের থেকে হর হামেশাই হয়ে থাকে।আজকের এই আলোচনা শোনার পর চলুন আমরা মানুষের ছিদ্রান্বেষণ করা থেকে বিরত থাকি।

অর্থলিপ্সা

যেসব বদ অভ্যাসের কারণে আয়াতে শাস্তির কথা উচ্চারণ করা হয়েছে, তন্মধ্যে তৃতীয় টি হচ্ছে অর্থলিপ্সা। আয়াতে একে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে অর্থ লিপ্সার কারণে সে তা বারবার গণনা করে। অন্যান্য আয়াত ও হাদিস সাক্ষ্য দেয় যে, অর্থ সঞ্চয় করা সর্বাবস্থায় হারাম ও গুনাহ নয়। তাই এখানে উদ্দেশ্য এই সঞ্চয় হবে, যাতে জরুরি হক আদায় করা না হয় কিংবা গর্ব ও অহমিকা লক্ষ হয় কিংবা লালসার কারণে দীনের জরুরি কাজে বিঘ্নত হয়।

উপরোক্ত গুনাহের শাস্তি

অপরগুলোকিত গুনাগারদের কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন যার নাম হল হতমা।

تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ

অর্থাৎ জাহান্নামে এই অগ্নি হৃদয়কে পর্যন্ত গ্রাস করবে। প্রত্যেক অগ্নির এটাও একটা বৈশিষ্ট্য। যা-কিছু তাতে পতিত হয় তার সকল অংশ জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। মানুষ তাতে নিক্ষিপ্ত হলে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হৃদয় ও জ্বলে যাবে যাবে। এখানে জাহান্নামের অগ্নির এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার কারণ এই যে, দুনিয়ার অগ্নি মানুষের দেহে লাগালে হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছার আগেই মানুষের মৃত্যু হয়ে যায়। জাহান্নামে মৃত্যু নেই। কাজেই জীবিত অবস্থাতেই হৃদয় পর্যন্ত অগ্নি পৌঁছাবে এবং হৃদয় দহনের তীব্র যন্ত্রণা জীবদ্দশাতেই মানুষ অনুভব করবে।(মায়ারেফুল কুরআন)


About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق