Please subscribe your YouTube channel . Subscribe!

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত ও ইসলামী বিধান

 আপনার কোনো পরিজন, আত্মীয় ও পরিচিতজন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া আপনার দায়িত্ব। এতে ইসলামের বন্ধন মজবুত হয় এবং ভ্রাতৃত্ববোধও শক্তিশালী হয়। একজন দায়িত্বশীল মুসলিম হিসেবে আল্লাহর প্রতিশ্রুত পুরস্কারকে ছোটো মনে করার কোনো সুযোগ নেই। সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, একজন মুসলিম অপর কোনো অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গেলে তিনি মূলত জান্নাতের খুরফায় চলে যান এবং বাড়ি ফিরে আসা অবধি তিনি সেই খুরফাতেই অবস্থান করেন। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, জান্নাতের খুরফা কী? রাসূল সা. বললেন, 'খুরফা হলো সেই স্থান, যেখানে জান্নাতের ফসল রাখা হয়'।( মুসলিম: ২৫৬৮)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার ফজিলত ও ইসলামী বিধান
somadanmedia.com

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহ (হাশরের মাঠে) বলবেন, আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আমি কীভাবে তোমাকে আহার করাতে পারি! অথচ তুমিই তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে আহার করাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি তুমি তাকে আহার করাতে তবে তা আমার নিকট পেতে?'

আদম সন্তান! আমি পিপাসার্ত হয়ে পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি। বান্দা বলবে, হে রব! কেমন করে আমি তোমাকে পান করাতাম, অথচ তুমি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক! আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না, যদি তাকে পানি পান করাতে, তবে তা আমার নিকট পেতে?

আদম সন্তান! আমি রোগাক্রান্ত হয়েছিলাম, তুমি সেবা করোনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আমি কীভাবে তোমার সেবা করতে পারি, তুমি বিশ্বজাহানের রব।

তিনি বলবেন, 'তুমি কি জানতে না, আমার অমুক বান্দা রোগাক্রান্ত হয়েছিল? তুমি যদি তার সেবা করতে, তবে তা আমার নিকট পেতে অথবা তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে'।(মুসলিম: ২৫৬৯)

ইমাম আহমাদ এবং ইবনে হিব্বান রহ. তাদের হাদিস গ্রন্থে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেন। রাসূল সা. বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি রোগী দেখতে যায়, তা হলে সে মূলত আল্লাহর নিয়ামতের দিকে অগ্রসর হয়। যতক্ষণ তিনি রোগীর পাশে থাকেন, তিনি সেই নিয়ামত পেতে থাকেন। বাড়িতে ফিরে আসা অবধি আল্লাহর নিয়ামত ও করুণা তাকে ঘিরে রাখে।

আলী রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, কেউ বিকেল বেলা কোনো রোগী দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার সাথে রওনা হয় এবং তারা তার জন্য ভোর হওয়া পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকে। উপরন্তু তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি করা হয়। আর কোনো ব্যক্তি দিনের প্রথমভাগে রোগী দেখতে গেলে তার সাথেও সত্তর হাজার ফেরেশতা রওনা হয় এবং তারা সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। তার জন্যও জান্নাতে একটি বাগান তৈরি হয়।( আবু দাউদ: ১৩৬৭)

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দুআ করা 

রোগীর জন্য দুআ করা উচিত, যাতে তিনি দ্রুতই রোগমুক্তি লাভ করেন এবং অসুস্থ থাকাকালীনও আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। দুআর কারণে অসুস্থ ব্যক্তি মানসিকভাবে দৃঢ়তা ও প্রশান্তি লাভ করেন। মা আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোনো রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর নিকট যখন কোনো রোগীকে আনা হতো, তখন তিনি বলতেন, 'হে মানুষের রব! তার কষ্ট দূর করে দিন। তাকে আরোগ্য দান করুন, আপনিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। আপনার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান করুন, যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে।( মুসলিম: ২১৯১, আহমাদ: ২৪২৩০)

 অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে কতটা সময় থাকবেন 

রোগী দেখতে যাওয়ার পর ন্যূনতম কিছু আদব বজায় রাখলে গোটা সাক্ষাৎটি অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন ও বরকতময় হয়ে উঠতে পারে। আপনার মূল দায়িত্ব হলো, রোগীর কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করা, অসুস্থতার পর নিয়ামত হিসেবে তিনি যে সুস্থতা লাভ করবেন, সে ব্যাপারে তাকে আশাবাদী ও সচেতন করে তোলা।

রোগী দেখার সময়টা দীর্ঘায়িত করবেন না। অসুস্থ ব্যক্তি খুব দীর্ঘ সময়ের সাক্ষাৎ দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকেন না। জুমার দুই খুতবার মাঝে যেটুকু সময় বিরতি থাকে, রোগী সাক্ষাতের সময়টিও ততটুকু হওয়ায় বাঞ্ছনীয়। সাক্ষাৎটি এতটুকু সময়ের জন্য হবে যাতে রোগীকে সালাম দেওয়া যায়, তার অসুস্থতার খোঁজখবর ও সর্বশেষ খবরাখবর জানা যায় এবং তার সুস্থতা কামনায় দুআ করা যায়। বিদায় নেওয়ার পর আর এক মুহূর্তও রোগীর সামনে থাকা উচিত নয়; বরং তাকে তার মতো করে থাকার সুযোগ দেওয়া দরকার।

ইবনে আবদুল বার রহ. তাঁর ফিকহ গ্রন্থের শেষাংশে বলেন, আপনি কোনো সুস্থ বা অসুস্থ মানুষ- যাকেই দেখতে যান না কেন, আপনি সেখানেই বসবেন, যেখানে আপনাকে বসতে বলা হবে। কেননা, যার বাড়ি তিনি ভালো জানেন যে কীভাবে তার ঘরের গোপনীয়তা সংরক্ষণ করতে হয়। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া সুন্নাত। সবচেয়ে উত্তম সাক্ষাৎ হলো, স্বল্পমেয়াদি সাক্ষাৎ। যিনি রোগী দেখতে যাবেন, তার বেশি সময় নেওয়া উচিত নয়। যদি রোগী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয় হয় এবং সে তার সাক্ষাৎটি উপভোগ করে তা হলে ভিন্ন কথা।

রোগীকে দেখার আদব

রোগী দেখতে যাওয়ার সময় পরিষ্কার পোশাক পরিধান করবেন। গায়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা যেতে পারেন। তা হলে রোগী আধ্যাত্মিক ও শারীরিকভাবে স্বস্তি অনুভব করবেন। তবে খুব কড়া মানের সুগন্ধি ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কেননা, তাতে রোগী বিরক্ত হতে পারেন। রোগী দেখতে যাওয়ার সময় খুব আমুদে বা উৎসব উপযোগী পোশাক পরা উচিত নয়। কেননা, এই ধরনের পোশাক আনন্দ উৎসব আয়োজনের জন্যই বেশি মানানসই। বরং সাধাসিধা পরিচ্ছন্ন সিন্ধ পোশাক বাছাই করবেন। রোগী দেখতে গেলে কথাবার্তা খুবই হালকা মানের হওয়া উচিত। এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়, যাতে রোগীর মন খারাপ হয়ে যায় কিংবা তার মনে হতাশা ভর করে। এরকম সাক্ষাতের ক্ষেত্রে রোগীকে কোনো খারাপ সংবাদ দেওয়া উচিত নয়।

 উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ কিংবা কারও মৃত্যু সংবাদ দেওয়া মোটেও উচিত নয়। সাক্ষাৎ করতে গেলে রোগীর অসুখের বিস্তারিত জানতে চাওয়াও ঠিক নয়। সাক্ষাৎপ্রার্থী যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হয় তা হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। ঠিক একইভাবে, ভালো জানাশোনা না থাকলে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে রোগীকে কোনো খাবার বা ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়াও ঠিক নয়। এটা তারাই বলতে পারেন যারা বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। না জেনে পরামর্শ দিয়ে বসলে তাতে বরং রোগীর ক্ষতি হতে পারে। রোগটি আরও জটিলতর হয়ে শেষে রোগী মারাও যেতে পারেন।

একজন ডাক্তার হয়তো একভাবে রোগীর চিকিৎসা করছেন। রোগী দেখতে গিয়ে কারও সেই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তোলা বা সমালোচনা করা ঠিক নয়। কেননা, এতে রোগীর মনে তার চিকিৎসা সম্বন্ধে সংশয়ের সৃষ্টি হতে পারে। যদি আপনি নিজেই চিকিৎসক হন, তা হলে এই ধরনের আলাপ করতে পারেন। তবে তা রোগী বা রোগীর অ্যাটেনডেন্টদেন সাথে না করে বরং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে করাই বাঞ্ছনীয়।

 একজন রোগী কীভাবে নিজের অবস্থা বর্ণনা করবেন

একজন রোগীর কাছে কেউ যদি শারীরিক অবস্থা জানতে চায়, তা হলে সর্বাগ্রে সেই অসুস্থ মানুষটির উচিত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তারপর তার অবস্থা বর্ণনা করা। যদি এই পথে না গিয়ে রোগী সরাসরি অভাব-অভিযোগ শুরু করে, তা হলে মনে হতে পারে যে, রোগী আল্লাহর ফয়সালার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছেন। রাসূল সা. এবং তাঁর সাহাবিগণ তো বটেই এমনকি তাবেয়িগণও এই রীতিরই অনুসরণ করেছেন।

আবদুর রহমান আত তাবিবের জীবনীগ্রন্থতেও এই ধরনের অনুশীলনের তথ্য পাওয়া যায়। আবদুর রহমান আত তাবিব ছিলেন ইমাম আহমাদ এবং বিশর আল হাফির ব্যক্তিগত চিকিৎসক। আবদুর রহমান বলেন, একবার ইমাম আহমাদ ও বিশর আল হাফি একইসাথে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাদেরকে একই স্থানে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছিল। যখন আমি বিশরকে দেখতে গেলাম এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাইলাম, তিনি প্রথম আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালেন। তারপর তিনি বললেন, 'আমি শরীরের অমুক স্থানে ব্যথা অনুভব করছি।'

এরপর আমি যখন ইমাম আহমাদকে দেখতে গেলাম এবং জানতে চাইলাম, তিনি কেমন বোধ করছেন। উত্তরে ইমাম আহমাদ রহ. বললেন, আমাদের ভাই বিশর তো আরও অসুস্থ। আমি যখন আবার সুনির্দিষ্টভাবে তাঁর অবস্থা জানতে চাইলাম, তখন তিনিও প্রথম আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তারপর নিজের অবস্থা জানালেন।

ইবনে শিরিন রহ.-এর বর্ণনানুযায়ী, যদি কেউ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তারপর তার অভিযোগ বর্ণনা করে, তা হলে এটা আর অভিযোগ থাকে না; বরং বিষয়টি এমন হয় যে, বান্দা তার রব আল্লাহ তায়ালার একটি ফয়সালার বর্ণনা দিচ্ছেন।

উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, একজন রোগীর সবার আগে আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত এবং তারপর অভিযোগগুলো প্রকাশ করা উচিত। এমনটা হলে আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার দায় বান্দার ওপর পড়বে না।(ইসলামিক ম্যানারস)

Getting Info...

About the Author

A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
×