কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্ত্রীর অধিকার

কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্ত্রীর অধিকার

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, সমাধান মিডিয়াতে আপনাকে স্বাগতম। এই আর্টিকেলে স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। স্বামীর উপর স্ত্রীর কিছু অধিকার রয়েছে, যখন স্বামী স্ত্রীর অধিকার গুলো পরিপূর্ণ রূপে আদায় করবে তখন কোন স্ত্রী অসুখী হবেনা। স্ত্রীর কারণে যে সকল সমস্যার সৃষ্টি হয় সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। দাম্পত্য জীবন সুখী হবে। তবে পরিপূর্ণ ভাবে দাম্পত্য জীবনের শান্তি পেতে হলে স্ত্রীদের কিছু কর্তব্য রয়েছে যা স্বামী পায়। যখন স্বামী ও স্ত্রী প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে তখন আল্লাহর রহমতে দাম্পত্য জীবনে পরিপূর্ণ শান্তি পাওয়া যাবে। এখন কোরআন হাদিসের স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

স্বামীর প্রতি স্ত্রী'র কিছু অধিকার রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুর'আন কারিমে বলেন, নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের, এবং তাদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আল্লাহ হচ্ছেন মহা পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারা: ২২৮)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,পুরুষদের অধিকার রয়েছে স্ত্রীদের উপর এবং স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে তোমাদের উপর।(সহিহ মুসলিম: ১৪৯,আত তিরমিযি: ১১৫৯, সনদ সহিহ)

স্ত্রীর হৃদয় জয় করার উপায়

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবি তাকে জিজ্ঞেস করেন-

قُلْتُ يا رسول الله، مَا حَقُّ الْمَرْأَةِ عَلَى الزَّوْجِ؟ قَالَ: أَنْ يُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمَ، وَأَنْ يَكْسْوَهَا إِذَا اكْتَسَى، وَلَا يَضْرِبُ الْوَجْهَ، وَلَا يُقَبِّحُ، وَلَا يَهْجُرُ إِلَّا فِي الْبَيْتِ

হে আল্লাহর রাসুল! স্ত্রীগণ আমাদের ওপর কী কী অধিকার রাখেন?

উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন খাও তখন তাকেও খাওয়াও, তুমি যখন পরিধান কর, তখন তাকেও পরিধান করাও , মুখমণ্ডলে আঘাত করো না, তাকে গালি দিও না, (প্রয়োজনে ঘরে বিছানা পৃথক করতে পার), কিন্তু একাকিনী অবস্থায় রাখবে না। (ইবনু মাজাহ: ১৮৫০; মুস্তাদরাকে হাকেম: ২৭৬৪, সনদ সহিহ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহিস সাল্লাম বলেছেন, ন্যায়পরায়ণগন দয়াময় আল্লাহর ডানপাশে নূরের সিংহাসনে অবস্থান করবে। তাঁর দুটি হাতই ডান। যারা ইনসাফ করে বিচারের ক্ষেত্রে, পরিবারের ব্যাপারে এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনের সময়। (সহিহ মুসলিম: ৪৮২৫)

ইবনুল আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নিজেকে আমার স্ত্রীর জন্য সাজাতে পছন্দ করি, ঠিক যেভাবে আমি চাই আমার স্ত্রী আমার জন্য সাজুক।

স্ত্রীর অন্যান্য অধিকার

১, উত্তম সঙ্গী হ‌ওয়া

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন - আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবনযাপন করবে। (সূরা নিসা-১৯) 

, শিক্ষা।

 একজন নারীকে দীনের প্রয়োজনীয় সকল ইলম শিক্ষা দিতে হবে।

৩, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুর'আনে বলেন- আর তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও এবং তাতে অবিচল থাক। (সূরা তাহা - ১৩২)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন - হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর আগুন হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সূরা আত তাহরীম - ৬

, ঈর্ষার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা।

৫, দেনমহর আদায় করা 

স্ত্রীর দেনমহর আদায় করতে হবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন- তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও, পরে তারা খুশী মনে মোহরের বিয়দংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ কর। সূরা নিসা-৪

৬, ভরণ-পোষণ।

স্ত্রীকে সাধ্যমতো ভরণ পোষণ দিতে হবে, আল্লাহ তায়ালা বলেন - আর পিতার উপর কর্তব্য, বিধি মোতাবেক মা'দের খোর পোষের দায়িত্ব নেওয়া। সাধ্যের অতিরিক্ত কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সূরা বাকারা- ২৩৩

তবে কোন মহিলা যেন ভরণ পোষণের প্রাচুর্যৈ কোন জিনিসের অপচয় না করে, বিশেষ করে খাবারের অপচয় যে না করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খাদ্যের অপচয় করা একজন মহিলার জন্য পাপ হিসেবে যথেষ্ট হবে।

, যদি একাধিক স্ত্রী থাকে তবে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতে হবে।

একাধিক স্ত্রী থাকলে সবক্ষেত্রে তাদের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরণ এবং সমতা রক্ষা করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যদি একজন মানুষের দুইজন স্ত্রী থাকে এবং সে তাদের মাঝে ইনসাফ রক্ষা করে না, তাহলে পুনরুত্থানের দিন তার এক পাশ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। ( তিরমিযি হাদিস নং ১১৪১)

, মন্দ আচরণ না করা, এবং তার আবেগের সম্মান করা। 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় পরিবারকে সাহায্য করতেন, তিনি নিজের জুতা নিজে সেলাই করতেন, নিজের কাপড় সেলাই করতেন, নিজেই মেঝে পরিষ্কার করতেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড় সেলাই করতেন,জুতাকে তালি লাগাতেন। এছাড়াও অন্যান্য কাজ করতেন, যেগুলো গৃহে অন্যান্য পুরুষেরা করেনা। ( মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ২৪৯০৩)

আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেসা করলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কি করেন? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তিনি ঘরোয়া কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন, নামাজের সময় হলে নামাজ পড়তে যান। আয়েশা রাদিয়াল্লাহুকে আরো প্রশ্ন করা হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কী করেন? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তিনি তো তোমাদের মতই মানুষ। তিনি নিজ কাপড়ে তালি লাগান। বকরীর দুধ দোহন করেন, এবং নিজের যত্ন নেন।( সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬৭২)

৯, তার গোপনীয়তা ফাঁস না করা, এবং তার দোষ ত্রুটি অন্যের নিকট না বলা। নিজ স্ত্রীর কোনো দোষ অপরের কাছে বলা যাবে না। তার কোন গোপন কথা অন্যের সাথে শেয়ার করা যাবে না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- বিচার দিবসে আল্লাহর নিকট মানুষদের মধ্যে সবচে' নিকৃষ্ট ঐ মানুষ হবে, যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়, অতঃপর তার (স্ত্রীর) গোপনীয়তা ফাঁস করে।( সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৪৩৭)

১০, তার পিতামাতা, পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সাথে দেখা সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া।

১১, স্ত্রীকে অসৎ নারীদের সাথে মেলামেশা করতে না দেয়া। যে সকল নারী নোংরা এবং পাপ কাজ করে, তাদের থেকে স্ত্রীকে দূরে রাখা। অশালীন ম্যাগাজিন, বই, নোংরা ও অশ্লীল মুভি ইত্যাদি দেখা, শোনা ও পড়ার অনুমতি না দেয়া।

১২, রাতে অত্যাধিক বিলম্বে বাসায় না ফেরা।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে। ( সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৫১৯৮)

১৩, স্ত্রী যদি (দ্বীনের ভিতর সীমাবদ্ধ থেকে) কাজ করে তাহলে তার বেতন না নেয়া, মিরাস সূত্রে যদি সে সম্পদ পায় তাও না নেয়া।

উপসংহার

এই আর্টিকেলে স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে মোটামুটি আলোচনা করা হয়েছে। আমরা যদি প্রত্যেকেই সচেতন হয়ে যাই এবং স্ত্রীর হক আদায় করি তাহলে একে তো এবাদত হবেই, দ্বিতীয়ত দাম্পত্য জীবনে সুখ আনন্দ ফিরে আসবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে বান্দার সকল হক আদায় করার তৌফিক দান করুক। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق