হযরত আলী রাঃ যাদের কে মুত্তাকী বলেছেন। Hazrat Ali RA called whom Muttaki.

সমাধান মিডিয়া ডেস্ক: হাম্মান ইবনে শুরাইহ আলি রাযিয়াল্লাহু আনহুর একজন সাথী, তিনি তাঁকে তাকওয়াবান ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন যাতে করে তিনি ধর্মভীরুদের চিনতে পারেন। আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন - আল্লাহ যখন তাঁর সৃষ্টিকে তৈরি করেন, তখন তিনি তাঁদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য করার অথবা আনুগত্য না করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তৈরি করেন। বান্দা আনুগত্য করলে আল্লাহর কোনো লাভ হয় না, আবার বান্দা হঠকারিতা দেখালেও আল্লাহর কোনো ক্ষতি হয় না। 

হযরত আলী রাঃ যাদের কে মুত্তাকী বলেছেন। Hazrat Ali RA called whom Muttaki.

অতঃপর তিনি সৃষ্টিদের মাঝে দুনিয়াবী রসদ বণ্টন করে দেন। যে সকল সৃষ্টির মাঝে তাকওয়া রয়েছে, তাঁদের মধ্য কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়ে দেন, তারা সর্বদা সত্য বলে, তাঁদের কাপড় হয় মধ্যম মানের, তাঁদের হাঁটা-চলার সময় তাঁরা থাকে বিনয়ী, তাঁরা চোখ নামিয়ে নেয়, যখন তাঁরা এমন কিছু দেখে যা আল্লাহ তাঁদের জন্য দেখা হারাম করেছেন, তাঁরা উত্তম কথা শুনে, সুখে-দুঃখে, নিঃস্বতা-সমৃদ্ধিতে, উভয় অবস্থায় তাঁরা সত্য কথা বলে এবং চারিত্রিক সরলতা বজায় রাখে।

আল্লাহ কি তাঁদের মৃত্যুর সময় লিখে রাখেননি? তাঁদের রূহ অতিরিক্ত এক সেকেন্ডও শরীরে থাকতে পারবে না, বরং তা ব্যাকুল হয়ে উঠবে আল্লাহর অবধারিত পুরস্কার বা শাস্তি পেতে। আল্লাহ তাঁদের চক্ষুকে সবচে' উঁচু মাকামের দিকে আবদ্ধ করে রেখেছেন, তাই দুনিয়ার বাকি সবকিছু তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন। তাঁরা জান্নাতে থাকবে, এবং তা তাঁরা দুনিয়াতেও কিছুটা বুঝতে পেরেছে, জান্নাতের উপস্থিতি তাঁরা দুনিয়াতেই উপভোগ করেছে। তাঁদের অন্তরে থাকে নিদারুণ দুঃখ, আর তাঁদের শরীর হয় জীর্ণ-শীর্ণ। তাঁদের চাহিদা হয় কম।

তাঁরা কয়েক দিন ধৈর্য ধরে এবং পরে চিরন্তন স্বস্তি ও শান্তি লাভ করে। এটা হল লাভজনক বিনিময়, তাঁদের রব তাঁদের জন্য বেসুমার আযোজন করেছেন। দুনিয়া তাঁদের আকৃষ্ট করে, প্রবলভাবে প্রলুব্ধ করে, কিন্তু তাঁরা এই ফাঁদে পা দেয় না। দুনিয়া তাঁদের বন্দি করার চেষ্টা করে, কিন্তু তাঁরা মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত হয়ে যায়।

রাতের সময় তাঁরা কাতারে দাঁড়ায়, কুর'আনের কিছু অংশ পাঠ করে। তাঁরা মনোযোগের সাথে তিলাওয়াত করে, যা তাঁদের অন্তরে প্রবেশ করে, তাঁরা তা পান করে যেন কুর'আনের তিলাওয়াত হল একটি ঔষুধ। যখন কোনো আবেগী আয়াত তাঁদের সামনে এসে পড়ে, তাঁরা তখন বিশ্বাস করে সেটাই তাঁদের গন্তব্য। যখন কোনো ভীতিপ্রদর্শন মূলক আয়াত সামনে আসে, তাঁরা আয়াতকে অন্তরের অন্তস্থলে অনুভব করে, এবং বিশ্বাস করে জাহান্নাম। তাঁরা মনে করে জাহান্নাম প্রচণ্ড জোরে ভয়ঙ্কর চিৎকার করছে এবং তা তাঁরা কানে শুনতে পাচ্ছে। তারা কপাল এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে ঘুমাই। (অর্থাৎ তাঁরা এত বেশি রাতের সালাতে মশগুল থাকতেন যে সিজদাহে মাথা ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়তেন।)

 দিনে তাঁদের দেখা যায়, একজন জ্ঞানি, সহনশীল, দয়ালু এবং আল্লাহভীরু হিসেবে। আল্লাহকে ভয় করার প্রভাব তাঁদের দেহের উপর এমনভাবে পড়ত যে, কেউ তাঁদের দেখলে মনে করবে তাঁরা মানুষ নয়, যেন কোনো সোজা দণ্ডায়মান লাঠি। কেউ ধারণা করেন তাঁরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় থাকেন। বাস্তবে আল্লাহর ভয়ের প্রভাবে তাঁদের দেখতে এমন মনে হয়। যদি তাঁদের কাউকে কেউ দ্বীনদার বলে মন্তব্য করে তখন তিনি ভয় পেয়ে যান এবং বলেন-'আমি নিজেকে তোমার চাইতে ভালো করে জানি। 

আমার রব আমাকে আমার চাইতেও ভালো করে জানেন। হে আল্লাহ! তারা আমার সম্পর্ক যা বলেছে আমি তা থেকে মুক্ত, এবং আমার সম্পর্কে তাঁরা যা ধারণা করে আমাকে তাঁর চাইতেও উত্তম বানিয়ে দিন। আমার যেসকল পাপ সম্পর্কে তাঁরা জানে না তা ক্ষমা করুন।'

তাঁদের নিদর্শন হল-তাঁরা দ্বীনের মধ্যে অটল থাকেন। তাঁদের নম্রতার মাঝেও তারা দৃঢ়সংকল্প থাকেন। তাঁদের বিশ্বাসে অনড় থাকেন। ইলম হাসিলের জন্য তাঁরা ব্যাকুল থাকেন। ঐশ্বর্যে তাঁরা মধ্যমপন্থা অনুসরণ করেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায়ও তাঁরা হাসিখুশি থাকেন। অসুস্থ অবস্থায় থাকেন ধৈর্যশীল। হালালের তালাশে থাকেন। সর্বাবস্থায় মানুষদের নসিহত করেন।

তাঁরা উত্তম কাজ করেও তা কবুল না হওয়ার ভয়ে থাকেন। তাঁরা সন্ধ্যা অতিবাহিত করেন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে, আর সকাল অতিবাহিত করেন আল্লাহকে স্মরণ করে। তাঁদের নিকট ঘুম হল একটি শক্ষা, আর জেগে থাকা হল আনন্দ। তারা ইলম এবং সহনশীলতার মধ্যে এবং কথা ও কাজের মধ্যে যোগসূত্র কায়েম করেছেন।

তুমি দেখবে তাঁদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা অবাস্তবিক নয়, এবং তাঁদের ভুল অতি অল্প; তাঁদের হৃদয় বিনয়ী থাকে, এবং তাঁরা নিরভিমানী হন। তাঁদের বিষয়াবলি হয় একদম সাধারণ। তাঁদের খোরাক একদম অল্প। তাঁদের দ্বীন সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। তাঁদের ফাহশা মরে গেছে। তাঁদের রাগ সব সময়ের জন্য প্রশমিত হয়েছে। উত্তম জিনিসই তাঁদের থেকে কাম্য করা যাবে, মন্দ সব কিছু তুমি তাঁদের অবস্থান থেকে দূরে পাবে। যারা তাদের কষ্ট দেয়, তাঁরা তাদের ক্ষমা করে দেন; যারা তাঁদের

পরিত্যাগ করে তাঁরা তাদের সাথে দেখা করেন; যারা তাঁদের বঞ্চিত করে বিপদে তাঁরা তাদের সাহায্য করে। তাঁরা কারোর ঘৃণাকে পরওয়া করেন না, আবার কারোর তোষামোদিতেও গলে যান না। তাঁরা কাউকে অভিশাপও দেন না।

নীরবতা তাঁদের নিঃসঙ্গ করে না। তাঁরা হাসলেও শব্দ উঁচু করেন না। যদি তাঁদের সাথে অবিচার করা হয়, তাঁরা তখন ধৈর্য ধরেন। তাঁরা নিজেরা কষ্টে জীবন যাপন করেন, অন্যদিকে তাঁদের সাথীরা আরামে জীবন অতিবাহিত করে। অহংকার ও গর্ব কখনো তাঁদের অন্তরে স্থান পায় না, সরলতা ও নিরভিমানীতা কখনো তাঁদের থেকে পৃথক হয় না।"

সূত্রঃ  

নাহযুল বালাগাহ- ২৪১

উপসংহার

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহিহ দ্বীনের উপর থাকার তাওফিক দান করুক। মুত্তাকিনদের দলের অন্তর্ভুক্ত করে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তিময় জীবন দান করুক।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment