সমাজে চলতে ফিরতে সর্বদায় আমাদের দৃষ্টি কোন না কোন নারীর প্রতি পড়ে, এ থেকে বিরত থাকতে আমরা অপারগ। কেননা কোন সংসার নারী ব্যতিত কল্পনা করা যায় না। সংগত কারণেই আমাদের নারীদের প্রতি তাকাতে হয়। বাস্তবিক অর্থে সকল নারীর প্রতি দৃষ্টিপাতের বিধান এক নই। যেমন ভাবে নারীর সাথে সম্পর্কের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়,
তেমনি ভাবে তাদের প্রতি দৃষ্টিপাতেরেও বিধান ভিন্ন ভিন্ন। এখন আমাদের জানা উচিৎ নারীর প্রতি দৃষ্টিপাতের প্রকার ও তার হুকুম।
নারীদের দিকে পুরুষদের দৃষ্টিপাত আট প্রকারের হয়ে থাকে।
প্রথম প্রকার : কোনোরকম শরয়ি প্রয়োজন ব্যতীত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের দৃষ্টিপাত হোক সে নপুংসক প্রাপ্তবয়স্কা স্বাধীনা (দাসী নয়) আজনবি (মাহরাম নয় ) নারীর দিকে। এমন দৃষ্টিপাত হারাম। উল্লিখিত নারীর কোনো অঙ্গের দিকেই তাকানো বৈধ হবে না। এমনকি হাত-পায়ের নখ ও চুলের অগ্রভাগও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয় প্রকার : অতিবৃদ্ধা নারী যার প্রতি কোনোরকম আকর্ষণ অনুভব হয় না। কিংবা এমন কুৎসিত নারী যার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না।
এমন নারীদের কেবল চেহারার দিকে তাকানো যাবে। অন্যকোনো অঙ্গ দেখা যাবে না। এ প্রসঙ্গে কুরআন কারিমে এসেছে, বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে তাদের জন্য দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা নুর, আয়াত : ৬০]
তৃতীয় প্রকার : সাক্ষ্যগ্রহণ কিংবা লেনদেন-বিষয়ক প্রয়োজনে কোনো নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত। এক্ষেত্রে নারীদের চেহারা ও কবজি পর্যন্ত হাত দেখা বৈধ কারণ, এটি প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, বিচার-সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজকর্ম যেমন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সাক্ষ্যদাতাকে স্পষ্টভাবে চেনা জরুরি। কিন্তু এর বৈধতার তিনটি শর্তের ওপর নির্ভরশীল।
এক. স্বজাতির অনুপস্থিতি। অর্থাৎ, নারীদের চিহ্নিত করার জন্য পুরুষদের দর্শন তখনই বৈধ হবে, যখন এ কাজের জন্য আরেকজন নারী না পাওয়া যাবে। কিংবা তার উপস্থিতি কষ্টসাধ্য হবে। এমতাবস্থায়ই কেবল কোনো পুরুষ ওই নারীর চেহারা ও হাত দেখতে পারবে।
দুই. উপযুক্ত মাহরামের অনুপস্থিতি। অর্থাৎ, মাহরামের উপস্থিততে আজনবি পুরুষ কোনো নারীকে দেখতে পারবে না। যদি মাহরামকে উপস্থিত করা না যায়, তাহলেই কেবল আজনবি পুরুষ কোনো নারীকে দেখতে পারবে। উল্লেখ্য, এই অনুমতি কেবল হাত ও মুখের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এবং অবশ্যই নিঃসঙ্গ অবস্থায় হতে পারবে না।
তিন. যখন পর্দাবৃত্ত অবস্থায় সাক্ষাৎ যথেষ্ট হবে না। কেননা, পরনারী ও পরপুরুষের মাঝে সাক্ষাতের মৌলিক বিধান হলো পর্দা রক্ষা করে সাক্ষাৎ করা। যেমনটি কুরআন কারিমে বর্ণিত হয়েছে। যদি একান্ত কোনো কারণে পর্দা রক্ষা করা নাই যায়, তখন কেবল প্রয়োজন অনুপাতে পর্দা সরানো যাবে।
চতুর্থ প্রকার : নিজে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারীর দিকে তাকানো। এক্ষেত্রে কেবল তার হাত ও চেহারার দিকে তাকানো বৈধ হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ দেখা বৈধ হবে না।
পঞ্চম প্রকার : মাহরাম নারীদের দেখা। মাহরাম হলেন ওই সকল নারী, যাদের বিয়ে করা সর্বাবস্থায় হারাম। যেমন: বোন, ফুপু, দুধবোন, শাশুড়ি। এ ছাড়া শিশু ও দাসীরা এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।
এ-সকল নারীর দিকে তাকানো বৈধ। এবং যে সকল অঙ্গ সাধারণত প্রকাশ পেয়েই যায় যেমন : চুল, চেহারা, ঘাড়, হাতের বাজুর অর্ধেক এবং পায়ের গোছার অর্ধেক দেখাতে সমস্যা নেই।
ষষ্ঠ প্রকার : নারী ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক চিকিৎসা গ্রহণ। এক্ষেত্রে প্রয়োজন পরিমাণ পর্দা অনাবৃত করার বৈধতা রয়েছে। বাকি অঙ্গ অবশ্যই পর্দাবৃত রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রেও দুটি শর্ত রয়েছে। এক. নিঃসঙ্গ না-হতে হবে। অর্থাৎ ডাক্তার-রোগিণী ছাড়াও অন্য কেউ উপস্থিত থাকতে হবে। দুই. নারীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক বুদ্ধিমান মাহরাম উপস্থিত থাকতে হবে।
সপ্তম প্রকার : বিবাহ বৈধ নয়, এমন দাসী, নয় বছরের কমবয়সি বালিকার দিকে পুরুষের দৃষ্টিপাত, আজনবি পুরুষদের দিকে নারীদের দৃষ্টিপাত, নারীদের দিকে যৌনজ্ঞানহীন বালকের দৃষ্টিপাত, এক পুরুষের দিকে অপর পুরুষের দৃষ্টিপাত—এ সকল ক্ষেত্রে সতর-বহির্ভূত অঙ্গ দেখা বৈধ।
অষ্টম প্রকার : সহবাস করা হয়েছে এমন স্ত্রী এবং নিজ দাসীর দিকে পুরুষের দৃষ্টিপাত। এমন নারীর সর্বাঙ্গে স্বামী ও মুনিবের দৃষ্টিপাত বৈধ।
হে মুসলিম ভাইয়েরা আমার যারা নিজেদের দৃষ্টি শক্তি কে হেফাজত রাখার চেষ্টা করি তাদের জন্য এই আর্টিকেল টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কেননা এটি আর্টিকেল টির মাধ্যমে আমরা নারীদের প্রতি দৃষ্টিপাতের প্রকার ও তার বিধান বিস্তারিত ভাবে জানতে পারলাম। এখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে এই প্রত্যাশা করি তিনি যেন আমাদেরকে দৃষ্টি হেফাজতে রাখার তাওফিক দান করেন।