আশুরার ফজিলত, আমল ও বিধি বিধান

আশুরা শব্দটি শুনতে সাধারণ মানুষের যেন গা শিউরে ওঠে, কারণ আশুরা বলতে তাদের ধারণা কারবালা আর কার বলা অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি ইমাম হুসাইন ইবনে আলী রাঃ এর পরিবারের মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনা। কাজেই আমাদের আশুরার প্রকৃত অর্থ ও আমল জানা উচিত।

আশুরার ফজিলত, আমল ও বিধি বিধান

আশুরার অর্থ

আল্লাহ তাআলা বারোটি মাসের মাঝে চারটি মাছ যথা:-জিলকদ, জিলহজ্ব, মোহররম ও রজবকে হারাম তথা সম্মানিত মাস করেছেন ।তার মধ্য থেকে চন্দ্র বছরের প্রথম মাস মহররমের দশম তারিখকে আশুরা বলা হয়। আরবিতে আশারা অর্থ ১০ এই আশারা থেকেই আশুরা নেওয়া হয়েছে।

আশুরার ফজিলত

হিজরী সালের বারোটি মাসের মধ্যে চারটি হারাম মাস ঝিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। শুরু হারাম মাস মহররম ও শেষ হারাম মাস জিলহজ এবং মধ্যখানে হারাম মাস রজব। আরব গন মহররম মাসকে সফরুল আউয়াল তথা:- প্রথম সফর নাম রেখে যুদ্ধকে তাদের ইচ্ছা মত হালাল ও হারাম করতো। আল্লাহ তাআলা ইহা বাতিল করে দিয়ে তার ইসলামী নামকরণ করলেন আল মহররম তাই গুরুত্বের জন্য মহররম মাসকে শাহরুল্লাহিল মুহাররম তথা আল্লাহর মহররম মাস বলা হয়েছে।

আশুরার দিন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন আমাদেরকে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দীন ইসলামের হেফাজতের উদ্দেশ্যে  হক প্রতিষ্ঠার জন্য এক মহান দিবস। আর এজন্যই দিনটিকে বিশেষ একটি ইবাদত, রোজার সাথে স্মরণ করা প্রতিটি মুসলিমের উচিত।

আশুরার রোজার ফজিলত 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা মোকাররমায় ছিলেন তখনও আশুরার দিন রোজা রাখতেন এরপর যখন মদিনা গেলেন তখন নিজেও রোজা রাখতেন অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। প্রথমে আশুরার রোজা ফরজ ছিল যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো, তখন আশুরার রোজা নফল রোজা হিসেবে নির্ধারিত হলো। তবে সাধারণ নফল রোজার চেয়ে এর গুরুত্ব বেশি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যে রুপ দূরত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য কোন সময় তা দেখিনি। সহীহ বুখারী হাদীস নং ২০০৬

অপর এক হাদিসে ইবনে আব্বাস রাঃ রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে ইহুদীরা আশুরার রোজা পালন করে, তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এই দিনে কেন রোজা রাখো? তারা বলল এটা একটি মহান দিবস, এই দিবসে আল্লাহ তাআলা মূসা আঃ ও তার জাতিকে নাজাত দেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে ধ্বংস করেন। তাই মুসা আঃ ও তার জাতি এই দিনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে রোজা রাখতেন ,এজন্য আমরাও রোজা রাখি। রাসূল সাঃ বললেন, আমরা মূসা আঃ এর অনুসরণ করার বেশি হকদার। এরপর তিনি আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবাগণ কেও রোজা রাখার জন্য নির্দেশ করেন। বুখারী শরীফ হাদিস নং ২০২৪।

আশুরার রোজা যেভাবে রাখতে হবে

আশুরা বা দশে মহররমের সঙ্গে আরো একদিন ৯ বা ১১ মহররমের রোজা রাখা ভালো

হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাঃ ইরশাদ করেন যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব। সহীহ মুসলিম ১/৩৫৯

অপর এক হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখো মুসনাদে আহমদ ২১৫৪ 

আশুরার রোজার ফজিল

হযরত আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আশুরা রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। নবী সাঃ বললেন, আল্লাহর কাছে আমার আশা তিনি এই রোজার মাধ্যমে বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। মুসলিম শরীফ ১১৬২ 

আশুরার কতিপয় বিধি-বিধান 

আশুরা সম্পর্কে আমাদের বহু ধরনের ভুল ধারণা এবং মন ভরা কিছু নিয়ম-কানুন প্রচলিত রয়েছে চলুন আমরা আশুরার দিনের কিছু বিধি বিধান জেনে নেই।

, শুধুমাত্র নবম তারিখের রোজা রাখা ঠিক না ইহা ইবনে আব্বাস রাঃ এর হাদিস দ্বারা কিছু মানুষ ভুল বুঝে থাকেন।

, আশুরার রোজা রাখতে না পারলে কাজা করার কোন বিধান নেই। কাজা করা ওয়াজিব বা মুস্তাহাব মনে করা সম্পূর্ণ ভুল ধারণ।

, ছোট বাচ্চাদেরকে রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা মা বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য।

, আশুরা ও মহররম মাসকে কেন্দ্র করে একমাত্র রোজা ছাড়া অন্য কোন এবাদত কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়।

,তা’যিয়া ও তৎ সংশ্লিষ্ট আরও যত ধরনের কুসংস্কৃতি পালিত হয়ে আসছে তা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক প্রকৃত মুসলমানের কর্তব্য। 

উপসংহার

পরিশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি তিনি যেন আমাদেরকে আমৃত্যু হক ও হক্কানিয়াত এর উপর অটল রাখেন। এবং সমস্ত ধরনের অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথা থেকে হেফাজতে রাখেন।

About the author

Somadanmedia
A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

إرسال تعليق