Please subscribe your YouTube channel . Subscribe!

কুরআন ও হাদীসের আলোকে রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত

কুরআন ও হাদীসের আলোকে রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত

রোজার আরবি শব্দ হলো স‌ওম,আর স‌ওমের শাব্দিক অর্থ হলো বিরত থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় রোজা বলা হয় প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী প্রত্যেক নরনারী সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া,পান করা ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকা।

রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ‘হে ঈমানদারগণেরা তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।-সূরা বাকারা : ১৮৩

অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পায় সে যেন অবশ্যই তাতে রোজা রাখে। সূরা বাকারা: ১৮৫

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন যখন তোমরা (রমজান মাসের) চাঁদ দেখবে তখন থেকে রোজা রাখবে, আর যখন (শাওয়াল মাসের) চাঁদ দেখবে তখন রোজা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে ৩০ দিন রোজা পূর্ণ করবে। সহি বুখারী হাদিস নং ১৯০৯, সহি মুসলিম হাদিস নং ১০৮০

উপরুক্ত আয়াত ও হাদিস এবং অন্যান্য দলিল দ্বারা রোজা পালন করা ফরজ তা প্রমাণিত হলো। সুতরাং কোন ব্যক্তির উপর রোজা ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যদি তা পালন না করে তাহলে সে অনেক বড় পাপ করলো এবং ইসলামের একটি স্তম্ভকে ভেঙ্গে দিল। পরকালে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। 

হযরত আবু উমামা বাহেলী রাঃ বলেন আমি রসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি, রসুল সাঃ বলেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুইজন ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার দুই বাহুতে ধরে একটি দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এল, অতঃপর আমাকে বলল আপনি এই পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম আমি তো উড়তে পারবো না। তারা বলল আমরা আপনাকে সহজ করে দিব, আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতল ভূমিতে পৌঁছলাম হঠাৎ ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম এসব কিসের আওয়াজ! তারা বলল এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল, হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশি দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাদের মুখে দুই প্রান্ত বা পার্শ ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোজা ভেঙ্গে ফেলে এরাই তারা। সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং : ১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং : ৭৪৪৮; সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং : ৩২৮৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ১৬০৯; তবারানী, হাদীস নং : ৭৬৬৬

যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও রোজা রাখল না হাদিসে থেকে হতভাগা বলা হয়েছে

হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে কিন্তু তার মধ্যে রোজা রাখেনি সে হতভাগা। যে ব্যক্তি পিতা-মাতা অথবা উভয়ের কোন একজন পেয়েছে কিন্তু তার সাথে সদ্ব্যবহার করেনি এবং আমার নাম যার কাছে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সে দুরুদ পড়েনি, সেও হতভাগ। মাজমাউয যাওয়ায়েদ, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪০।

রমজান মাসের একটি রোজা না রাখলে তা শুধু গোনাহের কারণ নয় বরং রমজানের এক রোজার পরিবর্তে সারা জীবন রোজা রাখলেও যে পরিমাণ সাওয়াব, মর্যাদা ও রহমত এবং বরকত ঐ রোজার মধ্যে ছিল তা অর্জিত হবে না।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বর্ননা করেন যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত একটি রোজা ভঙ্গ করল, সে আজীবন রোজা রাখলেও ওই রোজার হক আদায় হবে না। বুখারী শরীফ।

হাদিস শরীফে বর্ণিত রোজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১। রোজাদারদের জান্নাতে যাওয়ার পৃথক দরজার ব্যবস্থা থাকবে।

হযরত সাহল রাঃ রসুল সাঃ থেকে বর্ননা করেন জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে তার নাম হলো ‘‘রাইয়ান’’ কেয়ামতের দিন রোজাদাররা এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, রোজাদার ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে এবং ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এরপরে এই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। যখন তারা প্রবেশ করে ফেলবেন তখন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বুখারী শরীফ হাদিস নং ১৮৯৬

২। আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখলে জাহান্নাম ৭০ বৎসরের দূরত্বে চলে যায়।

হযরত আবু সাঈদ খুদুরি রাঃ বলেন আমি রসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম কে তার থেকে ৭০ বৎসরের দূরত্বে নিয়ে যাবেন। বুখারী শরীফ হাদিস নং ২৮৪০

৩। রোজাদারের মুখে গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের থেকে বেশি প্রিয়।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয় রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের চেয়ে অধিক প্রিয়। বুখারী শরীফ হাদিস নং ১৮৯৪

অর্থাৎ মানুষ রোজা রাখার কারণে পেট খালি হয়ে যায়, আর খালি পেট থেকে এক ধরনের একটি গন্ধ বের হয়। এই গন্ধের কথা হাদিসে বলা হয়েছে। 

৪। রোজাদারদের জন্য জান্নাতে থাকবে কাঁচের তৈরি আলিশান প্রাসাদ।

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, অবশ্যই জান্নাতের মধ্যে এমন কতগুলো প্রাসাদ রয়েছে যার বাহির থেকে ভিতর এবং ভিতর থেকে বাহির সব কিছু দেখা যাবে। তখন এক গ্রাম্য ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল হে আল্লাহর রাসূল এটা কার জন্য? তখন রসূল সাঃ বললেন যে ব্যক্তি ভালো কথা বলে , মানুষদের কে খানা খাওয়ায়, সর্বদা রোজা রাখে, আল্লাহর জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ তখন আদায় করে, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। তাদের জন্য। তিরমিযি শরিফ হাদিস নং ২৫২৭

৫। রোজা হলো ঢাল স্বরুপ।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন রোজা হলো ঢাল স্বরুপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া করতে চায় অথবা তাকে গালি দেয় তাহলে সে দুইবার বলবে আমি রোজা পালন করতেছি। বুখারী শরীফ হাদিস নং ১৮৯৪

অর্থাৎ রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল স্বরূপ অথবা পাপ কাজের থেকে বাঁচার ঢাল স্বরূপ যে পাপ কাজ জাহান্নামে পৌঁছায়।

৬। রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে।

প্রত্যেক নেক আমলের সওয়াব আল্লাহতালা দশ গুণ বাড়িয়ে দেন কিন্তু রোজা প্রতিদান আল্লাহতালা নিজ হাতে দেন কিংবা নিজেই তার প্রতিদান হয়ে যান।

 হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন, রোজাদার আমার জন্য খাওয়া, পান করা ও মনোবাসনা পুরা করা থেকে বিরত থাকে। রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজ হাতে তার প্রতিদান দিব। আর প্রত্যেক নেক আমলের প্রতিদান তার দশ গুণ।বুখারী শরীফ হাদিস নং ১৮৯৪

৭। রোজাদারের জন্য রয়েছে স্পেশাল দুইটি খুশি।

এক, ইফতারের সময়ের খুশী। দুই, তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়ের খুশী।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন রোজাদারদের জন্য রয়েছে দুটি খুশি,একটি খুশি হলো ইফতারের সময়। এবং দ্বিতীয় টি হলো আল্লাহর তায়ালার সাথে সাক্ষাতের সময়। ইবনে মাজাহ হাদিস নং ২৬৩৮

৮। রোজা হলো ধৈর্যের অর্ধেক।

যখন কোন ব্যক্তি রোজা রাখে তখন তার অর্ধেক ধৈর্য পূর্ণ হয়ে যায়।

রসুল সাঃ বলেন, সুবহানাল্লাহ’ মিযানের অর্ধেক, আলহামদুলিল্লাহ’ মিযানকে পূর্ণ করে দেয়। আল্লাহু আকবার জমিন ও আসমানের মধ্যবর্তি ফাঁকা স্থান কে পূর্ণ করে দেয়। আর অযু হলো ঈমানের অর্ধেক। এবং রোজা হলো ধৈর্যের অর্ধেক। ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৬৮০

৯। রোজাদারের সকল দোয়া কবুল হয়।

দোয়া কবুল হ‌ওয়ার জন্য আমরা কতইনা চেষ্টা মুজাহাদা করে থাকি,আর রোজাদারের সকল দোয়া কবুল হয় তা কত বড় নেয়ামত।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন রোজাদারদের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ১০১৮৩

১০। শীত মৌসুমে রোজা হলো ঠান্ডা গনিমত।

হযরত আমের ইবনে মাসউদ আল জুমাহী রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন শীত মৌসুমে রোযা হলো ঠান্ডা গনিমত। মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ১৮৯৫৯

১১।রোযা কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে হে আল্লাহ আমি তাকে পানাহার ও মনবাসনা পুরা করতে বারণ করেছি সুতরাং তার ব্যপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি সুতরাং তার ব্যপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রসুল সাঃ বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ৬৬২৬

১২। রোজাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 

যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত স‌ওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারী শরীফ হাদিস নং ৩৮,২০১৪

উপসংহার

এখানে রোযার কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। তা ব্যতিত আরো অনেক ফজিলত রয়েছে যা হাদিসের কিতাবে বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুক।

সংকলনে

মুফতি মুনির হুসাইন

অনুবাদ ও শিক্ষক এবং সন্মানিত সদস্য যুব জমিয়ত বাংলাদেশ।

Getting Info...

About the Author

A trusted platform of Education-Culture & News and Islamic Matters And online trip's

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
×