তালাক ও তালাকের সঠিক সময়।The right time for divorce.
তালাকের কথা শোনলে কেমন যেন হৃদয়ের পানি শুকিয়ে আসে,বুকের ভিতর ধরপর করে উঠে, সামনে পথ চলা অন্ধকারাচ্ছন্ন অনুভব হয়, জীবন তিক্ত হয়ে উঠে।
তাসত্বেও তালাক সর্বজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রদত্ত বিশেষ এক নিয়ামত।তবে যে তালাক সামান্য মনমালিন্য, ঝগড়া বিবাদ,কথা কাটাকাটি, রাগ করে,ক্ষিপ্ত হয়ে, কারো প্ররোচনায়, যৌতুক না পেয়ে, শশুর বাড়ির কারো সাথে ঝগড়া করে,প্রদান করা হয় তা আল্লাহর রহমত বা নিয়ামত নয় বরং তা আল্লাহর গজব এবং দুঃখ ও আফসোস, পরিতাপের বিষয়।
তালাক দেওয়ার সঠিক সময়
আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তার সংক্ষেপ হলো, অনেক গুলো ধাপ অতিক্রম করার পর সর্বশেষে হলো তালাকের ধাপ বা উপযুক্ত সময়। যখন কোন স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হয়ে যায়। তখন স্বামী স্ত্রীকে বুঝিয়ে নসিহত করে বাধ্য করার চেষ্টা করবে।যদি তাতে কাজ না হয় তাহলে স্ত্রীর বিছানা আলাদা করে দিবে। যেন সে নিজের ভুল বুঝে নিজেকে সংশোধন করে নেয়।যদি তাতেও সে সংশোধন না হয় তাহলে তাকে চেহারা ব্যাতিত মৃদু প্রহার করবে।যদি তাতেও কাজ না হয় এবং ঝগড়া বিবাদ প্রবল আকার ধারণ করে তাহলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন ঝগড়া বিবাদ নিবারণের জন্য প্রেরণ করবে। যদি সংশোধন হয়ে যায় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।যদি তাতেও কোনো লাভ না এবং কোন ভাবেই বনাবনি না হয় তখন ইসলামের বিধি মোতাবেক তালাক দিবে। এই তালাক হলো আল্লাহর দেওয়া বিশেষ নিয়ামত।
তালাক হালাল হওয়ার রহস্য
তালাকের প্রদান আল্লাহ তায়ালা কাছে সর্বনিকৃষ্ট একটি হালাল বস্তু। রসুল সাঃ বলেন,আল্লাহ তায়ালা কাছে সর্বনিকৃষ্ট হালাল বস্তু হলো তালাক। তালাক কেন আল্লাহ তায়ালা হালাল বললেন
কারণ যখন সমাজের কোন পরিবারের মধ্যে মরণ ব্যাধি দেখা দেয়, যে ব্যাধির চিকিৎসা সচরাচর কোথাও পাওয়া যায় না, সেই পরিবারের চিকিৎসার জন্য তালাক ইমার্জেন্সি বা জরুরী এন্টিবায়োটিকের কাজ করে। যে স্বামী স্ত্রীর একসাথে জীবন যাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে,তালাক প্রদানের মাধ্যমে তারা অসুস্থ বন্ধন কে ছিন্ন করতে সক্ষম হয়। যদি এই অসুস্থ বন্ধন কে ছিন্ন করা না হয়, তাহলে এই অসুস্থতা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সন্তানাদি এবং সমাজের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করবে। তখন সৃষ্টি হবে এক ভয়াবহ পরিবেশ। এই ভয়াবহ পরিবেশ থেকে সমাজ এবং জাতিকে বাঁচাতে আল্লাহ তায়ালা তালাক কে হালাল বলেছেন। সুতরাং বলা চলে তালাক কে হালাল করার ব্যাপারে শরীয়তের ভূমিকা হল ঐ ডাক্তারের ন্যায়। যে দূষিত অঙ্গ কে অপারেশন করে কেটে ফেলা উপযুক্ত মনে করে, যেন এই রুগ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে না পরে।
সর্ব নিকৃষ্ট হালাল বলার রহস্য
সর্ব নিকৃষ্ট হালাল বলার কারণ হলো কোন একটা অঙ্গ কে কেটে ফেলা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তা অমানবিক মনে হয়, কেননা একটি অঙ্গ কে কেটে ফেলে দিলে এমন অঙ্গ আর পাওয়া যায় না। তদ্রূপ তলাকও একটা পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়, সন্তানদেরকে বাবা মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে দেয়াল সৃষ্টি করে। যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে সর্ব নিকৃষ্ট হালাল বলেছেন।
তালাকের বিধান না থাকলে কি ক্ষতি হতো?
যখন কোন পরিবারের মধ্যে বিরাট আকারের বিবাদ সৃষ্টি হয়। যাকে কোনভাবেই মীমাংসা করা সম্ভব না হয় তখন আমাদের সামনে দুইটি রাস্তা খোলা থাকে।
এক, হয়তো আমরা এই বিবাদগ্রস্ত স্বামী স্ত্রীকে, বিবাদগ্রস্ত থাকা অবস্থায় একসাথে জীবন যাপন করতে বাধ্য করব।
দুই, অন্যথায় তাদের জন্য এমন একটি রাস্তা খুলে দিব যার মাধ্যমে তারা এই অসুস্থ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে প্রত্যেকে নিজের মর্যি মাফিক ব্যক্তিকে খুঁজে তার সাথে আবার সংসার গড়তে পারে। যে সংসারের অধীনে ভালোবাসা, প্রীতি ও সুখ বিরাজমান থাকবে। থাকবে না কোন দ্বন্দ্ব, কোলাহল, ঝগড়া-বিবাদ, বিদ্বেষ।
যদি প্রথম পন্থা অবলম্বন করা হয়। স্বামী স্ত্রীকে তাদের এই বিবাদগ্রস্থ অবস্থায় একসাথে জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়। তাদের জন্য এই সংসার ভেঙ্গে নতুন কোন সংসার করার সুযোগ না থাকে। যেমনটা বিভিন্ন বিধর্মী সম্প্রদায়ের প্রচলিত রয়েছে। তাহলে এই বাধ্য করাটা যেমন স্বামী স্ত্রীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে ফেলবে তেমনি তাদের সন্তানাদি এবং সমাজের ভারসাম্য হারানোর কারণ হবে।
সন্তানদের ক্ষতির দিক
যখন কোন সন্তান সর্বদা বিবাদগ্রস্ত পিতা মাতার অধীনে লালিত পালিত হবে। তখন তার মন মেজাজ নষ্ট হয়ে যাবে, অন্তর শক্ত হয়ে যাবে, তার ভিতরে সুপ্ত থাকা অভিজাত মানুষত্বের অনুভূতিকে পরিবর্তন করে দিবে।
দ্বন্দ্ব কোলাহল যুক্ত বাবা মায়ের কাছে একটি সন্তান প্রতিপালিত হলে তার ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল থাকে। পক্ষান্তরে তালাকের মাধ্যমে ছিন্ন হওয়া বাবা ও মায়ের কাছে অথবা শুধু বাবা কিংবা শুধু মায়ের কাছে প্রতিপালিত হওয়ার ক্ষতি কম।
একটু চিন্তা করুন! সর্বদায় দ্বন্দ্ব ও কুলাহলগ্রস্থ বাবা মায়ের কাছে একটি সন্তান সঠিক তরবিয়ত কি আদৌ পাবে? একে অপরের প্রতি প্রীতি ও ভালোবাসার আচরণ কোথা থেকে শিখবে? কেননা শিশুর কোমল অন্তত তাই শিখবে যা সে বাবা মাকে করতে দেখে।
সমাজ নষ্ট হওয়ার কারণ
স্বামী স্ত্রী পরস্পর বিদ্বেষা ভাবাপূণ্য হওয়া, দ্বন্দ্ব ও কোলাহলের মধ্যে লিপ্ত থাকা সমাজ নষ্ট হওয়ার কারণ। তা এভাবে যে, যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীকে ঘৃণা করে, ভালো না বাসে তখন সে নিজের মনবাসনা পুরো করার জন্য পরক্রিয়ার রাস্তা বেছে নেয়। পক্ষান্তরে স্ত্রী ও নিজের মনোবাসনা পূরণ করার জন্য পরক্রিয়ার রাস্তা বেছে নেয়।
যার ফলে সমাজের মধ্যে পরক্রিয়ার মত জঘন্য একটি ব্যাধি বিস্তার লাভ করতে থাকে। এবং সমাজের অসংখ্য ছেলে-মেয়েদের অবৈধ ভাবে যৌন চাহিদা পূর্ণ করার একটি মাধ্যম খুলে যায়।
শুধু এখানেই শেষ নয়, কখনো কখনো পরিস্থিতি এমন ভয়ংকর আকার ধারণ করে যে, স্বামী স্ত্রী থেকে বা স্ত্রী স্বামী থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য হত্যা করার মত জঘন্য পাপে লিপ্ত হয় বা মহাপাপ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এভাবে একটি সমাজে ফিতনা ফাসাদ এবং অপরাধ বাড়তে বাড়তে ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে যায়। এই পরিবেশে জন্য দায়ী থাকবে আইন প্রণয়নকারী গনের একগুঁয়েমি,অবিবেচনা এবং সমাজ সংশোধনের সঠিক জ্ঞান না থাকা।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যথার্থ বলেছেন, আল্লাহতালা জানেন তোমরা জানো না। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা তালাক কে অনুমোদন দিয়ে সমাজ থেকে সমূহ বিশৃঙ্খলার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।
জ্ঞতব্য: যে সকল কাফের সম্প্রদায় তালাক কে বৈধ ঘোষণা করেনি। তাদের অনেকেই সমাজের বিবাদ বিশৃঙ্খলা পাপ পঙ্কিলতা কে দূরীকরণার্থে ইসলামের বিধান তালাকের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
তাদের এ ধাবিত হওয়াটা ইসলাম যে চিরচারিত ধর্ম এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা যুগ উপযোগী তা প্রমাণ করে। যারা ইসলামকে সেকেলে বলে গালি দেয় তাদের ভাবা উচিত।
এই তালাকে বৈধ ঘোষণা করা এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাকিম হওয়া এবং হেকমতের বহিঃপ্রকাশ।
তালাকের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা গ্রস্ত পরিবারকে মুক্ত করার যে পদ্ধতি ইসলাম দিয়েছে তার কোন উপমা অন্য কোন মানব রচিত ধর্মে পাওয়া যায় না।
এমন সুন্দর এবং হেকমত পূর্ণ বিধান যে ধর্মের মধ্যে রয়েছে সে ধর্মকে সকলের গ্রহণ করা উচিত। এবং ইসলাম বিরোধীদের কেও ইসলামিক জীবন ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়।
উপসংহার
এই আর্টিকেল টি কেমন লাগলো অনুভূতি শেয়ার করবেন।তালাক সম্পর্কে এই প্রতিবেদন বিভিন্ন কিতাব সমূহ অনুদিত এবং অধমের কিছু সংযোজিত।যদি কোন পরামর্শ থাকে কমেন্ট করে জানাবেন বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।