প্রিয় জ্ঞানপিপাসু বন্ধুরা, বর্তমান যুগে পত্রিকার পাতা খুললেই শেয়ার বাজারের খবরাখবর দেখা যায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শেয়ার বাজার নিয়ে আলোচনা করা হয়। সুতরাং শেয়ার বাজার সম্পর্কে নলেজ থাকা সময়ের দাবী।কাজেই আজ সমাধান মিডিয়া সময়ের দাবি পূরণ করার জন্য শেয়ার সম্পর্কে আলোচনা করার ইচ্ছা পোষণ করেছে।যদি শেয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক সাইটে প্রবেশ করেছেন।
শেয়ারের প্রয়োজনীয়তা কি?
বর্তমান এই আধুনিক যুগে শেয়ার পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের ঘরে অলস পড়ে থাকা স্বল্প পুঁজিগুলোকে একত্র করে কাজে লাগিয়ে অধিক হারে লাভ অর্জন করা যায়। ইহা সহজে বিক্রয় যোগ্য, শরয়ী নীতি অনুসরণ সাপেক্ষে শেয়ার হালাল উপার্জনের একটি মাধ্যম। সুতরাং বুঝা গেল শেয়ার হলো এই অলস টাকাগুলোকে কাজে লাগানোর সর্বূতকৃষ্ট মাধ্যম। উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা শেয়ারের প্রয়োজনীয়তা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল।
শেয়ার কাকে বলে?
শেয়ার বলতে সাধারণত কোম্পানির মূলধনের ক্ষুদ্র অংশকে বুঝায়। ব্যাপক অর্থে কোম্পানির মূলধনকে নির্দিষ্ট সমপরিমাণ মূল্যের যে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে বিভক্ত করা হয় তার প্রত্যেকটি একককে শেয়ার বলে। প্রতিটি শেয়ার মূলধনের অংশ হওয়ার কারণে এটা ক্রয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক শেয়ার হোল্ডার কোম্পানির আংশিক মালিকানা লাভ করে। শেয়ারের আরো কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হচ্ছে...
১৯৯৪ সালে কোম্পানি আইনের দ্বিতীয় ধারায় বলা হয়েছে যে, শেয়ার বলতে কোম্পানির মূলধনের কোন অংশকে বুঝাবে এবং ব্যক্ত বা অব্যক্তভাবে কোন স্টোক বা শেয়ার এর পার্থক্য প্রকাশ পেলে সেই স্টক ব্যতীত অন্যান্য স্টকও এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে।
১৯০১ সালে এক মুকাদ্দমায় কোন এক বিচারপতি শেয়ার প্রসঙ্গে বলেন শেয়ার টাকা নয় কিন্তু এর মাধ্যমে টাকার অংকের স্বার্থ পরিমাপ করা যায়। যা চুক্তিগত কিছু অধিকারের সৃষ্টি করে।
সর্বশেষে বলা যায় কোম্পানির মূলধনকে সমপরিমাণ মূল্যের ক্ষুদ্র এককে ভাগ করা হলে প্রত্যেকটি একককে একটি শেয়ার বলে যা কোম্পানির উপর শেয়ার ক্রেতার স্বার্থ বা মালিকানা স্বত্তের নির্দেশ করে। যিনি শেয়ার ক্রয় করেন তাকে শেয়ার হোল্ডার এবং শেয়ার বিক্রয় হতে সংগ্রহীত অর্থকে শেয়ার মূলধন বলে।
শেয়ার হোল্ডার কাকে বলে?
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে যিনি শেয়ার ক্রয় করেন তাকে শেয়ার হোল্ডার বলা হয়।এক কথায় যিনি কম্পানির কাছ থেকে শেয়ার ক্রয় করেন তাকে শেয়ার হোল্ডার বলা হয়।
শেয়ার কত প্রকার ও কি কি?
মৌলিকভাবে শেয়ার চার প্রকারী বিভক্ত যথা:- ১, সাধারণ শেয়ার(ordinary share) ২, অগ্রাধিকার শেয়ার (Preference share). ৩, বিলম্বিত শেয়ার (Deferred Shares).৪, অন্যান্য শেয়ার (other shares)
১, সাধারণ শেয়ার(ordinary share):-
আইন অনুযায়ী যে শেয়ারের মালিক কোন অধিকার, দায়িত্ব কর্তব্যের বিভিন্ন দিক বিচারে অধিক সুবিধা ও মর্যাদা ভোগ করলেও লাভাংশ বন্টন ও কোম্পানি বিলুপ্তের সময় মূলধন তত্ত্বাবধানে অগ্রাধিকার পায় না তাকেই সাধারণ শেয়ার বলে।
২, অগ্রাধিকার শেয়ার (Preference share).
যে শেয়ারের মালিকগণ অভ্যাংশ গ্রহণ ও মূলধন প্রত্যাবর্তনে অন্যান্য শেয়ার মালিকগণের চেয়ে অগ্রধিকার পায় তাকে কগ্রাধিকার/ Preference share শেয়ার বলে।
অগ্রাধিকার শেয়ার ৮প্রকার:-
এক, সঞ্চয়ী শেয়ার comulative share.
যে শেয়ারের মালিকসকল প্রতিবছরের লাভ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ পায় এবং কোন বছর লাভ না হলেও ঐবছরের লভ্যাংশ সঞ্চিত আকারে পরবর্তীতে পায় তাকে সঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ার/ comulative share.বলে।
দুই, অসঞ্চয়ী শেয়ার /non-comulative share:-
বলা হয়:- যে শেয়ারের মালিকসকল প্রতিবছরের লাভ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ পায় এবং কোন বছর লাভ না হলে ঐ বছরের লভ্যাংশ সঞ্চিত আকারে পরবর্তীতে পায় না তাকে অসঞ্চয়ী অগ্রাধিকার শেয়ার/ non-comulative share.বলে।
তিন, অংশভাগ শেয়ার/ participating share
যে শেয়ারে তার হুল্ডারদের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই বিতরণে অংশগ্রহণ করার অধিকার দেয় তাকে অংশ ভাগ শেয়ার/ participating share বলা হয়।
চার, অনাংশ ভাগ শেয়ার/ non-participating share.
যে শেয়ারে তার হুল্ডারদের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই বিতরণে অংশগ্রহণ করার অধিকার দেয় না তাকে অনাংশ ভাগ শেয়ার/ non-participating share বলা হয়।
পাঁচ, পরিশোধ্য শেয়ার/ redeemable share.
যে অগ্রাধিকার শেয়ারে নির্দিষ্ট সময়ান্তে বা পূর্ব নির্ধারিত তারিখে বা একটি নির্দিষ্ট ইভেন্ট অনুসরণ করে মূল্য পরিশোধ করে কোম্পানি শেয়ার ফেরত নিতে পারে তাকে পরিশোধ্য অগ্রধিকার শেয়ারবা redeemable share বলে।
ছয়, অপরিশোধ্য শেয়ার/ non-redeemable share.
যে অগ্রাধিকার শেয়ারে নির্দিষ্ট সময়ান্তে বা পূর্ব নির্ধারিত তারিখে বা একটি নির্দিষ্ট ইভেন্ট অনুসরণ করে মূল্য পরিশোধ করে কোম্পানি শেয়ার ফেরত নিতে না পারে তাকে অপরিশোধ্য অগ্রধিকার শেয়ার বা non redeemable share বলে।
সাত, পরিবর্তন অগ্রাধিকার যোগ্য শেয়ার /convertible share.
যে শেয়ারে নির্দিষ্ট সময়ান্তে বা পূর্ব নির্ধারিত তারিখে বা একটি নির্দিষ্ট ইভেন্ট অনুসরণ করে অগ্রাধিকার শেয়ারকে সাধারণ শেয়ারে পরিবর্তন করা যায় তাকে পরিবর্তন যোগ্য শেয়ার/convertible share বলে।
আট, অপরিবর্তন যোগ্য শেয়ার/non-convertible share.
যে শেয়ারে নির্দিষ্ট সময়ান্তে বা পূর্ব নির্ধারিত তারিখে বা একটি নির্দিষ্ট ইভেন্ট অনুসরণ করে অগ্রাধিকার শেয়ারকে সাধারণ শেয়ারে পরিবর্তন করা যায় না তাকে অপরিবর্তন যোগ্য শেয়ার/non-convertible share বলে।
৩, বিলম্বিত শেয়ার (Deferred Shares).
যে শেয়ারের মালিকগণ লভ্যাংশ বন্টন ও মূলধন প্রত্যাবর্তনে সকলের শেষে অংশগ্রহণ করে তাকে বিলম্বিত শেয়ার/ Deferred Shares বলে।
৪,অন্যান্য শেয়ার (other shares)
অন্যান্য শেয়ার বলতে উপরে উল্লেখিত তিন ধরনের শেয়ার ব্যতীত আরো যত ধরনের শেয়ার রয়েছে সবগুলো শেয়ারকে বুঝায়।
অন্যান্য শেয়ার সাধারণত ১১প্রকার;-
এক, সঞ্চয়ী শেয়ার comulative share.
দুই, অসঞ্চয়ী শেয়ার /non-comulative share:-
তিন, অংশভাগ শেয়ার/ participating share
চার, অনাংশ ভাগ শেয়ার/ non-participating share.
পাঁচ, পরিশোধ্য শেয়ার/ redeemable share.
ছয়, অপরিশোধ্য শেয়ার/ non-redeemable share
সাত, পরিবর্তন অগ্রাধিকার যোগ্য শেয়ার/convertible share
আট, অপরিবর্তন যোগ্য শেয়ার/non-convertible share.
নয়,অনাংকিক শেয়ার/ No per value share.
দশ, অধিকারযোগ্য শেয়ার /Rightful share.
এগারো, বোনাস শেয়ার/ Bunus Share.
উল্লেখিত শেয়ার সমূহ ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানিতে বিভিন্ন নামে আরো অনেক শেয়ার বন্টন হতে দেখা যায় প্রকৃত বিবেচনায় সেগুলো সাধারণ শেয়ারের মতই।
বোনাস শেয়ার কাকে বলে/What is Bunus Share.
অর্জিত মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ লভ্যাংশ হিসেবে বন্টন করার পর কোম্পানির সংরক্ষিত তহবিলে তা জমা রাখা হয় এরূপ তহবিলে সঞ্চিত টাকার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেলে পরিচালকদের সাধারণ সভার সিদ্ধান্তক্রমে উক্ত তহবিলের অর্থকে মূলধনের পরিণত করার লক্ষ্যে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ার মঞ্জুর করা হয় তাকে বোনাস শেয়ার/Bunus Share বলে।
অধিকারযোগ্য সেয়ার কাকে বলে / what is Rightful share.
কোন কোম্পানি অধিকতর মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নতুন শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তার সম্পূর্ণ অংশ বিশেষ ক্রয়ের অধিকার আনুপাতিক হারে পুরাতন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সংরক্ষণ করলে তাকে অধিকার যোগ্য শেয়ার /Rightful shareবলে।
অনাঙ্কিক শেয়ার কাকে বলে/what is No per value share.
যে শেয়ারের কোন আঙ্কিক মূল্য পূর্ব হতে নির্দিষ্ট থাকেনা বরং বছর শেষে হিসাব নিকাশের পর মোট সম্পদ হতে অন্যান্য আদায়ের পরিমাণ বাদ দিয়ে শেয়ারের মূল্যমান নিরূপণ করা হয়, তাকে অনাকাঙ্কিক মূল্যের শেয়ার/No per value share. বলে। অবশ্য আমাদের দেশে এ ধরনের শেয়ারের প্রচলন নেই।
শেয়ার বাজার কাকে বলে ?
শেয়ারবাজার হলো এমন একটি মাধ্যম যেখান থেকে আপনি শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করতে পারেন শেয়ার বাজারকে পুঁজিবাজার বলা হয়। মূলত শেয়ার বাজারে দালালদের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করা হয়।
শেয়ার ও স্টকের মধ্যে পার্থক্য
যদিও শেয়ার এবং স্টক এই দুটো শব্দ একই অর্থে ব্যবহৃত হয় তা সত্ত্বেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কোন কোম্পানির মূলধনকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান অংশে বিভক্ত করাকে শেয়ার বলে। এশিয়ার কে আর ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায় না। আর কয়েকটি শেয়ারের সমষ্টিকে স্টক বলে। এই স্টকে আবার ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায়। অন্যান্য দেশে শেয়ার মার্কেট বলে না বরং স্টক মার্কেট বলে কিন্তু আমাদের দেশে শেয়ার মার্কেট বলাটাই বেশি প্রচলিত ও পরিচিত।
স্টক কাকে বলে?
উপরের আলোচনা দ্বারা এই কথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে কয়েকটি শেয়ারের সমষ্টিকে স্টক বলে। যাকে আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায়। কিন্তু শেয়ারকে আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায় না।
উপসংহার
সম্পূর্ণ আলোচনা টি পড়ার জন্য সমাধান মিডিয়ার পক্ষ থেকে রইল অবিরাম ভালবাসা ও দোয়া।যদি কোন ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে অনুগ্রহ করে আমাদের কে জানানুর অনুরোধ রইল। আর্টিকেল টি ভালোলাগলে কমেন্ট করে জানান, বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন।
telegram channeltelegram group