সূরা ইয়াসিনের দশটি ফজিলত ও আমল বিস্তারিত।
কুরআনের ২৩ তম সূরা, সূরা ইয়াসিন
আমরা তখন কোন আমল করার ইচ্ছা করি তখন আমাদের মনে এই কথাটা জাগ্রত হয় যে এই আমলের কি ফজিলত রয়েছে এবং কি কি ফজিলত রয়েছে এবং তা জানতে চেষ্টা করি যেন আমার আমল টি অধিক ফলপ্রসূ হয়।
The ten virtues and deeds of Surah Yasin are detailed.
এক, হযরত মা কাল ইবনে ইয়াসার (রাঃ)থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সুরা ইয়াসিন হল কোরআন শরীফের কলব বা অন্তর। এ হাদীসের কিছু শব্দের মধ্যে আছে যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিনকে একমাত্র আল্লাহ তা'আলা এবং আখিরাতের জন্য পড়বে তাকে আল্লাহতালা মাফ করে দিবেন। এই সূরা কে তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের জন্য পাঠ কর।আবু দাউদ.
ইমাম গাজালী রহ: সূরা ইয়াসিন কুরআন শরীফের কলব বা অন্তর হওয়ার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, সুরা ইয়াসিন এর মধ্যে কেয়ামত, হাশর-নশরে বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আর ঈমানের মূল বিষয় হল আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন মানুষের কাজ কর্ম ভালো হওয়ার প্রধান উপকরণ।
আখেরাতের ভয় মানুষকে সৎকাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করে এবং মনের কুপ্রবৃত্তি এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। যেমন ভাবে শরীরের সুস্থতা অন্তরের সুস্থতার উপর নির্ভরশীল। এমনিভাবে ঈমানের সুস্থতা আখিরাতের চিন্তা ভাবনার উপর নির্ভরশীল।
সূরা ইয়াসিনের আরো নাম
সুরা ইয়াসিনের আরো কয়েকটি নাম হাদিসে বর্ণিত আছে তার মধ্যে একটি হল (মুয়িম্মাহ) অর্থাৎ তার পাট কারীর জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ এবং বরকতকে ব্যাপক কারী। তার পাঠকের নাম বর্ণিত হয়েছে শরীফ অর্থাৎ সন্মানিত।
আরেকটি না হলো মুদাফায়া অর্থাৎ তার পাঠককে সমস্ত ধরনের বিপদ আপদ থেকে হেফাজত করে।
আরেকটি নাম হলো কাযিয়া প্রয়োজন পূরণকারী। (রুহুল মায়ানি)
সূরা ইয়াসিনের দশটি ফজিলত ও আমল বিস্তারিত।
দুই, হুজুর সাঃ থেকে বর্ণিত, যে মুমূর্ষ ব্যক্তির পাশে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা হবে তার মৃত্যুর যন্ত্রণা সহজে হবে।
তিন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাঃ থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি তার কোন প্রয়োজনের পূর্বে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রয়োজন টি পূর্ণ করে দিবেন।(মাযহারী)
চার, ইয়াহিয়া ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে ব্যক্তি সকালবেলা সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত শান্তি এবং আরামে থাকবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা কালে পাঠ করবে সে সকল পর্যন্ত শান্তিতে আরামে থাকবে এবং তিনি বলেন এই কথাটা আমাকে এমন একজন ব্যক্তি বলেছেন যিনি নিজে তা আমল করে এমন ফল পেয়েছেন। (মায়ারেফুল কুরআন)
পাঁচ,হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত যে ব্যক্তি কবরস্থানে গিয়ে সুরা ইয়াসিন পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার উসিলায় মৃত ব্যক্তিগণের কবরের আজাব লাঘব করে দেন। আর পাঠকারিকে মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা পরিমাণ সাওয়াব দান করেন। (মালাবুদ্দা)
ছয়, হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন প্রত্যেক জিনিসের অন্তর রয়েছে আর কোরআনের অন্তর সূরা ইয়াসিন যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন একবার পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশবার কোরআন শরীফ পাঠ করার সওয়াব দান করবেন। (তিরমিযি)
সাত, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সৃষ্টি করার এক হাজার বছর পূর্বে সূরা তোহা এবং ইয়াসিন পাঠ করেন, যখন ফেরেশতারা তা শুনতে পারে তখন তারা বলে সুভাগ্য ওই উম্মতের জন্য যাদের উপর এই কোরআন অবতীর্ণ হবে, এবং ধন্য ঐ পেট যে তা ধারণ করবে এবং ধন্য ঐ মুখ বা জিহ্বা যে তা উচ্চারণ করবে। (সুনানে দারেমী)
আট, যে ব্যক্তি রাত্রে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একবার সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং দশবার সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ খতম সওয়াব দেওয়া হবে।(সুনানে দারেমী)
নয়, রসূল সাঃ বর্ণনা করেন যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সকল হাজত পূরণ করে দিবেন। (সুনানে দারেমী)
দশ, তাফসিরে জালালাইনের টিকার মাঝে বর্ণিত হয়েছে, যখন কোন মুসলমানের মৃত্যুর সময় হয় আর তখন কেউ তার পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করে। তখন মালাকুল মউত ততক্ষন পর্যন্ত তার রুহ কবজ করেন না যতক্ষন পর্যন্ত না জান্নাতের রেদওয়ান ফেরেশতা জান্নাতের সুসংবাদ না দেন। এবং মৃত্যু বরণ করার সাথে সাথে এই ব্যক্তির স্থান হয় রাইয়্যান নামক জান্নাতে।
সুরা ইয়াসিনের আমল
এই সূরা সকাল বেলা ফজরের এবং বিকেলে মাগরিবের নামাজের পর পাঠ করবে।
যেকোন বালা মুসিবত সামনে আসলে এই সূরা পাঠ করবে।
নিজের যেকোন প্রয়োজন পুরা করার জন্য এই সূরা নিয়মিত পাঠ করবে।
তাছাড়াও উপরে বর্ণিত ফজিলত সমূহ থেকে যা জানতে পারলাম সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।